পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাঙালিদের অত্যন্ত পবিত্র এক উৎসব। বাংলা বছরের পৌষ মাসের শেষ দিনটিতে এই উৎসব পালন করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রেও এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মোটমুটি ১৪ জানুয়ারি বা কিংবা তার আগে অথবা পরে মকর সংক্রান্তির তিথি পড়ে।
সংক্রান্তির মূল প্রথা হল, গঙ্গাস্নান, অন্নদান। সূর্যের উত্তরায়ন শুরু হওয়া এবং ঘরে রবিশস্য ঘরে তোলার উৎসব হল মকর সংক্রান্তি। সারা দেশেই নানাভাবে মকর সংক্রান্তি পালন করা হয়। কোথাও লক্ষ্মীপুজো হয়, কোথাও আবার সরস্বতী পূজাও করা হয়। তবে যেভাবেই উৎসব পালন করা হোক না কেন স্নান এবং নতুন ফসল তোলা হল এই উৎসবের মূল বৈশিষ্ট্য।
মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর, গঙ্গা, গোদাবরী, প্রয়াগ প্রভৃতি পবিত্র নদীতে স্নানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রয়াগ, গড়মুক্তেশ্বর, বেনারস এবং গঙ্গাসাগরে স্নানের সময় অনেক ধরনের নিয়ম মেনে চলতে হয়। এমতাবস্থায় ঘরে বসে নিরাপদ গঙ্গাস্নানের পুণ্য লাভের সহজ উপায় বলা হয়েছে শাস্ত্রে।
মকর সংক্রান্তি গঙ্গা সাগর স্নান: মকর সংক্রান্তির দিন, শুভ সময়ে অর্থাৎ সকালে বাড়িতে স্নানের জন্য একটি পরিষ্কার বালতি বা টবে জল ভর্তি করুন। এই জলে ধ্যান করার সময় গঙ্গা মাকে ডাকুন এবং স্নানের জন্য ব্যবহৃত জলে গঙ্গা জল মিশিয়ে দিন। এই জলে তিল মিশিয়ে নিন। উত্তর দিকে মুখ করে স্নান করুন।
এইভাবে মকর সংক্রান্তিতে মন্ত্র পাঠ করার সময় বাড়িতে গঙ্গা স্নান করুন। এর মাধ্যমে আপনি শুধু গঙ্গায় স্নানই নয়, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু, কাবেরীতেও একসঙ্গে ডুব দেওয়ার পুণ্য পেতে পারেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, শাস্ত্রজ্ঞরা বলছেন আপনি যেখানেই শুদ্ধ অনুভূতি ও বিশ্বাস নিয়ে মা গঙ্গার ধ্যান করে স্নান করবেন, সেখানেই গঙ্গা স্নানের পুণ্য পাবেন।
গঙ্গাস্নানের তাৎপর্য: মকর সংক্রান্তির দিনে গঙ্গায় স্নান ও গঙ্গা সাগরে ডুব দেওয়ার বিষয়ে শাস্ত্রে মহা মহিমা বর্ণিত হয়েছে। কথিত আছে, সব তীর্থে বারবার গঙ্গা সাগর একবার। অর্থাৎ বারবার সমস্ত তীর্থে গিয়ে স্নান করার যে পুণ্য, মকর সংক্রান্তিতে একবার গঙ্গা সাগরে স্নান করলে সেই পুণ্য অর্জিত হয়।
বিশ্বাস করা হয় যে মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গা সাগরে স্নান করলে অশ্বমেধ যজ্ঞ করার মতোই পুণ্য পাওয়া যায়। লাভ হয় সকল মোক্ষ। মকর সংক্রান্তির দিন গঙ্গায় স্নানের পুণ্যের বর্ণনা বেশি কারণ মকর সংক্রান্তির দিন সাগরের সন্তানদের রক্ষা করতে গিয়ে গঙ্গা সাগরে মিশে গিয়েছিল।