Ambubachi 2022: অম্বুবাচীর সময় ব্রহ্মপুত্রের রঙ হয় লাল! সতীপীঠ কামাখ্যা মন্দিরের ইতিহাস জানলে গায়ে কাঁটা দেবে

Kamakhya Mandir: পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সতীর যোনিভাগ এখানে পড়েছিল। তাই এই পীঠকে যোনিপীঠও বলে থাকে। এখানে অধিষ্ঠিতে দেবী কামাখ্যা ও ভৈরব হলেন উমানন্দ। সাধারণত, দেবী কামাখ্যাকে উর্বরতার দেবী বা "রক্তক্ষরণকারী দেবী" বলা হয়।

Ambubachi 2022: অম্বুবাচীর সময় ব্রহ্মপুত্রের রঙ হয় লাল! সতীপীঠ কামাখ্যা মন্দিরের ইতিহাস জানলে গায়ে কাঁটা দেবে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 27, 2022 | 12:13 AM

প্রত্যেক পীঠস্থানে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। তিনদিন ধরে চলা অম্বুবাচী উত্‍সবে (Ambubachi 2022) অসমের বিখ্যাত কামাখ্যা মন্দিরের (Kamakhya Temple) নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। অসমের গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পর্বতে অবস্থিত হিন্দু দেবী কামাখ্যার একটি মন্দিরটি ৫১ পীঠের (Sati Peeth) অন্যতম। ৫১টি শক্তি পীঠের মধ্যে একটি এবং ৪টি আদি শক্তি পীঠগুলোর মধ্যে একটি হল এই কামাখ্যা মন্দির (Kamakhya Temple)। ভারতের মধ্যে যত প্রাচীন শক্তিপীঠ আছে সেগুলি অপার রহস্যের আধার বলেই বিশ্বাস করেন ভক্তরা। তবে যোনিপীঠ কামাখ্যাকে ঘিরে সাধুসন্ত থেকে সাধারণ মানুষ সবাই যেরকম কৌতূহলী। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সতীর যোনিভাগ এখানে পড়েছিল। তাই এই পীঠকে যোনিপীঠও বলে থাকে। এখানে অধিষ্ঠিতে দেবী কামাখ্যা ও ভৈরব হলেন উমানন্দ। সাধারণত, দেবী কামাখ্যাকে উর্বরতার দেবী বা “রক্তক্ষরণকারী দেবী” বলা হয়।

দেবী কামাখ্যার মন্দির

এই মন্দির চত্বরে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও আছে। এই মন্দিরগুলোতে দশমহাবিদ্যাসহ মহাকালী, তারা, ষোড়শী বা ললিতাম্বা ত্রিপুরসুন্দরী, ভুবনেশ্বরী বা জগদ্ধাত্রী, কামাখ্যা, শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী বা তপস্যাচারিণী, মঙ্গলচন্ডী, কুষ্মাণ্ডা, মহাগৌরী, চামুণ্ডা, কৌষিকী, দাক্ষায়ণী-সতী, চন্দ্রঘন্টা, স্কন্দমাতা, কালরাত্রি, কাত্যায়ণী, সিদ্ধিদাত্রী, শাকম্ভরী, হৈমবতী, শীতলা, সংকটনাশিনী, বনচণ্ডী, দেবী দুর্গা, মহাভৈরবী, ধূমাবতী, ছিন্নমস্তা, বগলামুখী, মাতঙ্গী ও দেবী কমলা – এই ত্রিশ দেবীর মন্দিরও রয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপুরাসুন্দরী, মাতঙ্গী ও কমলা প্রধান মন্দিরে পূজিত হন। অন্যান্য দেবীদের জন্য পৃথক মন্দির আছে। হিন্দুদের, বিশেষত তন্ত্রসাধকদের কাছে এই মন্দির অন্যতম প্রাচীন এবং একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।

কামাখ্যা মন্দিরে চারটি কক্ষ আছে: গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ (যেগুলির স্থানীয় নাম চলন্ত, পঞ্চরত্ন ও নাটমন্দির)। গর্ভগৃহটি পঞ্চরথ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। গর্ভগৃহটি আসলে ভূগর্ভস্থ একটি গুহা। এখানে কোনো মূর্তি নেই। শুধু একটি পাথরের সরু গর্ত দেখা যায়। কামাখ্যা মন্দির চত্বরের অন্যান্য মন্দিরগুলোতেই একই রকম যোনি-আকৃতিবিশিষ্ট পাথর দেখা যায়, যা ভূগর্ভস্থ প্রস্রবনের জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে অম্বুবাচী মেলার সময় কামাখ্যা দেবীর ঋতুমতী হওয়ার ঘটনাকে উদ্‌যাপন করা হয়। এই সময় মূল গর্ভগৃহের প্রস্রবনের জল আয়রন অক্সাইডের প্রভাবে লাল হয়ে থাকে। ফলে এটি ঋতুস্রাবের মতো দেখায়। তন্ত্রসাধনার কেন্দ্র হওয়ায় বার্ষিক অম্বুবাচী মেলা অনুষ্ঠানে এখানে প্রচুর মানুষ আসেন। এছাড়া বার্ষিক মনসা পূজাও মহাসমারোহে আয়োজিত হয়, দুর্গাপূজা কামাক্ষ্যা মন্দিরের একটি অন্যতম প্রধান উৎসব।

পৌরাণিক কাহিনি

পুরাণ মতে, দেবী সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য় করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। সতীর দেহত্যাগের কথা শোনামাত্রই সেখানে পৌঁছে যান মহাদিদেব মহাদেব। সেখানে গিয়ে সতীর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তাণ্ডব চালান শিব। মহাদেব সতীকে কাঁধে তুলে নিয়ে তাণ্জব নৃত্য করেন। মহাদেবের এহেন এমন তাণ্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কা করেন স্বর্গের সমস্ত দেবতা। মহাদেবের ক্রদ্ধমূর্তিকে শান্ত করতে শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহ ৫১টি খণ্ডে খণ্ডিত করেন। সেই দেহখণ্ডগুলোই যে যে স্থানে পড়ে, সেখানে সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বলা হয়, যোনিদেশটি কামরূপের নীলগিরি পর্বতে পড়েছিল। কিন্তু দেহখণ্ডের ভার সহ্য করতে না পেরে পর্বত কম্পন হতে শুরু করেছিল। ক্রমশ তা পাতালে প্রবেশ করকে থাকে। সেইসময় দেবী কামাখ্যা সেই ভার বহন করে নিজ কাঁধে সব দায়িত্ব তুলে নেন। যে স্থানে দেবীর যোনিদেশ পড়েছিল, তার নাম কুব্জিকা। বর্তমানে সেই স্থানকেই কামাখ্যা নামে পরিচিত।

পুরাণে আরও একটি পৌরাণিক কাহিনি শোনা যায়। পুরাণে বর্ণিত নরকাসুরের জন্ম হয়েছে বরাহরূপী বিষ্ণুর ঔরসে ধরিত্রী বা পৃথিবীর গর্ভে। উপযুক্ত বয়স হওয়ার পর অতীতে প্রাগজ্যোতিষপুর নামে খ্যাত কামরূপ রাজ্য তার হাতে তুলে দেয় তার বাবা। পরে এখানে অধিষ্ঠিত দেবী কামাখ্যাকে সাধনায় সন্তুষ্ট করে তাঁর কৃপায় মহাপরাক্রমশালী হয়ে ওঠে নরকাসুর। আর তারপর শুরু করে সীমাহীন অত্যাচার। স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালের বাসিন্দারা তার দাপটে ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়ে। এমনকী অনেক দেবতাও তার ভয়ে নির্জন স্থান লুকিয়ে পড়ে। এই সুযোগে দেবতা, দানব, গন্ধর্ব ও মানুষ নির্বিশেষে ১৬ হাজার সুন্দরী মহিলাকে অপহরণ করে নরকাসুর। তারপর একটি পাহাড়ে বন্দিশালা তৈরি করে আটকে রাখে। শুধু তাই নয়, উদ্ধত নরক দেবরাজ ইন্দ্রকে পরাজিত করে দেবমাতা অদিতির কর্ণভূষণ লুট করে।

এই কথা শুনেই তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দ্বারকাধিপতি শ্রীকৃষ্ণ। নরকাসুরের নারকীয় কুকীর্তির কথা শুনে সৈন্যসামন্ত নিয়ে রওনা দেন প্রাগজ্যোতিষপুরের দিকে। দু’জনের মধ্যে চরম যুদ্ধ হওয়ার পর সুদর্শন চক্র দিয়ে নরকাসুরের মাথা কাটেন শ্রীকৃষ্ণ। বন্দি থাকা সুন্দরী মহিলাদের উদ্ধারও করেন। এই ঘটনা উপলক্ষে প্রাগজ্যোতিষপুর থেকে দ্বারকা পর্যন্ত এলাকার বাড়িগুলি সেজে উঠেছিল লক্ষ লক্ষ প্রদীপে। উজ্জল আলোকমালায় নরকাসুরের অত্যাচারের কালিমা ধুয়ে গিয়েছিল নিমিষে। সেই স্মৃতি মাথায় রেখে আজও সেজে ওঠে একান্ন পীঠের অন্যতম পীঠস্থান কামরূপ-কামাখ্যা।

পুজোর নিয়ম

কামাখ্যার পূজা বামাচার ও দক্ষিণাচার উভয় মতেই হয়।সাধারণত ফুল দিয়েই পূজা দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে পশুবলি হয়। স্ত্রীপশু বলি সাধারণত নিষিদ্ধ হলেও, বহু পশুবলির ক্ষেত্রে এই নিয়মে ছাড় দেওয়া হয়। যোগিনী তন্ত্র অনুসারে, এই যোগিনী পীঠের ধর্মের উৎস কিরাতদের ধর্ম। বাণীকান্ত কাকতির মতে, গারো উপজাতির মানুষেরা কামাখ্যায় শূকর বলি দিত। এই প্রথা নরনারায়ণ-কর্তৃক নিযুক্ত পুরোহিতদের মধ্যেও দেখা যেত। দেবী ভাগবত, দেবী পুরাণ, তন্ত্র চূড়ামণি, কালিকা পুরাণ ও যোগিনী তন্ত্রে উল্লেখিত ভারতের শক্তি সাধনার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র কামাখ্যায় মহাশক্তি মহাকালীর পুজোও হয় খুব ধুমধাম করে।