News9 Plus World Exclusive: এখনও কেন পলাতক ১৯৯৩ হামলার মূলচক্রী? জেহাদি জেনারেলের চক্রান্ত তুলে ধরল নিউজ৯ প্লাস
The Jehadi General: এখনও কেন পলাতক ১৯৯৩ হামলার মূলচক্রী? প্রশ্ন তুলল নিউজ৯ প্লাস।
গভীরে তদন্ত চালিয়ে ১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণের পিছনে ষড়যন্ত্র ধরা পড়ল নিউজ৯ প্লাসের ওয়েব সিরিজে। এই সন্ত্রাসবাদী হামলা নিয়ে নিউজ৯-র কাছে এই বিস্ফোরণ নিয়ে কথা বললেন র-য়ের প্রাক্তন প্রধান বিক্রম সুদ, প্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিক ও আইএসআই বইয়ের লেখক তথা প্রফেসর ওয়েন এল সিরস, প্রাক্তন মুম্বই পুলিশ কমিশনার এমএন সিং, পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার জি পার্থসারথি ও সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখে সেন্টার ফর সিকিউরিটিতে প্রবীণ গবেষক ডঃ প্রেম মহাদেবন।
৩০ বছর আগের কথা। ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ এক ডজন বিস্ফোরণে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় মুম্বই। প্রায় ২৫৭ জনের মৃত্যু হয় এই বিস্ফোরণে। এই হামলার দায় দাউদের কাঁধে থাকলেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সে। পুলিশের কাছে ধরা পড়ে তার দলের অন্যান্য দুষ্কৃতীরা। এই সন্ত্রাসবাদী হামলার মূলচক্রী হিসেবে দাউদ ইব্রাহিম ও টাইগার মেমনের নাম জানা গিয়েছিল। তবে তাদের সামনে রেখে অন্য কেউ এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হামলার পর প্রতিটি চার্জশিটে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের নাম উঠে আসে। তবুও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার এই হামলায় আইএসআইয়ের গুরুতর দোষের তদন্ত করেনি বা তার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বা হামলার বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোনটানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ওয়েন এল. সিরস বলছেন, “আমার এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাভেদ নাসিরই ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের নির্দেশ দিয়েছিল। এবং দাউদ ইব্রাহিমকে দিয়ে সেই কাজ করিয়েছিল।” একাধারে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিক সিরস। অন্যদিকে ‘Pakistan’s Inter-Services Intelligence Directorate: Covert Action and Internal Operations’ বইয়ের লেখক তিনি। প্রফেসর ওয়েন আরও বলেছেন, “আমার মনে হয় এই অপারেশনের সম্বন্ধে অবগত ছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কারণ সেই সময় নওয়াজ শরিফই জেনারেল নাসিরকে আইএসআই-র ডিরেক্টর জেনারেল করেছিলেন। কারণ তিনি চাননি অন্য কাউকে এই পদে বসাতে।”
রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (RAW) প্রাক্তন প্রধান বিক্রম সুদ বলেন, ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণ সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। ১৯৯৩ সালেই মুম্বইয়ে প্রথম এত বড় সন্ত্রাসবাদী হামলার সাক্ষী থাকে ভারত। তিনি বলেছেন,”এত বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা ভারতে সেটাই প্রথম হয়েছিল। এর আগে আমরা এত বড় বিস্ফোরণ কখনও দেখিনি। এর পিছনে কোনও কিছু প্রমাণ করার উদ্দেশ্য ছিল। এই হামলায় পাকিস্তানি যোগ স্পষ্ট ছিল। তবে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেখে নাগরিকরা বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। এটাই রূঢ় সত্য।’ এদিকে প্রাক্তন মুম্বই পুলিশ কমিশনার এমএন সিং নিউজ৯ প্লাসকে বলেছেন, এটা নিশ্চিত যে এই বিস্ফোরণে অবশ্যই পাকিস্তানি হাত ছিল। তিনি জানান, “আমরা যাদের গ্রেফতার করেছি তাদের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে তারা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। তারা মুম্বই থেকে দুবাই গিয়েছিল এবং সেখান থেকে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে চেপে ইসলামাবাদে গিয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের থেকে তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা অস্ত্র সরবরাহ করত। তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা আশ্রয় দিয়েছে। ইসলামাবাদে অবতরণের সময় তাদের কাউকেই চেক করা হয়নি। ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি চেক দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কেউ থামায়নি। যখন আইএসআই জড়িত থাকে, তখন পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না।”
বর্ষীয়ান গবেষক প্রেম মহাদেবান এই হামলাকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটি যুদ্ধের একটা অংশ। ভারত জুড়ে পরিচালিত শহুরে সন্ত্রাসের বৃহত্তর প্রচারাভিযানের অংশ ছিল এই হামলা। মানুষ ২৬/১১-র হামলাকে যুদ্ধ বলেন। মূলত ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দীর্ঘদিনের গোপন প্ররোচনার অংশ এত বড় হামলা।” তিনিও এই ঘটনায় জেনারেল নাসিরের দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, “জেনারেল নাসিরকে তার মতাদর্শ দিক থেকে একজন সক্রিয় জেনারেল হিসাবে বিবেচনা করা হত। মধ্য এশিয়ায় জিহাদিবাদকে সমর্থনের সঙ্গে তার নাম উঠে আসে। তিনি এলটিটিই-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মায়ানমারের বিদ্রোহেও তাঁর হাত ছিল। উপর থেকে নির্দেশ না থাকলে একজন গোয়েন্দা প্রধান এসব করেন না।” এদিকে আইএসআই-র ডিরেক্টর জেনারেল পদে মোতায়েন ভাল চোখে নেয়নি আমেরিকাও। এই নিয়োগে ওয়াশিংটন এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার অ্য়াসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ক্রিস্টিনা বি. রোক্কা ১৯৯২ সালে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের সন্দেহভাজন পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের’ নিয়ন্ত্রণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালের মে মাসে নাসিরকে বরখাস্ত করা হয়। তবে এই মুম্বই হামলার তিন দশক পরেও পলাতক নাসির। ৯ এর দশকের গোড়ার দিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি বসনিয়ার মুসলমানদের অ্যাসল্ট রাইফেল এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। ২০১১ সালে নাসিরকে অন্য দেশের হাতের তুলে দেওয়ার জন্য হগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সমন প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান সরকার। ৮৭ বছর বয়সী প্রাক্তন আইএসআই প্রধান বর্তমানে তবলিঘি জামাতের একজন প্রচারক। ১৯৮৬ সাল থেকেই এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের তিন দশক পরেও নাসিরের মতো অপরাধীকে সামনে আনতে ভারত কী করতে পারে? এই প্রশ্নে ওয়েনের পরামর্শ, পাকিস্তানের এই জেহাদি জেনারেলের নামে শ্বেতপত্র আনা উচিত ভারতের এবং পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ফোরাম অর্থাৎ রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে সেই শ্বেতপত্র নিয়ে যেতে পারে ভারত।
নিউজ৯ প্লাসে দেখুন দ্য জিহাদি জেনারেল:
https://www.news9plus.com/webseries/the-jihadi-general