Virat Kohli: সচিন-পথ বেছে নিল বিরাট
অনেকে বলছে, বিরাট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় টিমের উপর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্বকাপে সতীর্থদের মনোবল ভেঙেচুরে যেতে পারে। আমি তেমন সম্ভাবনা দেখছি না। ক্রিকেট নিশ্চিত ভাবে টিম গেম।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়
প্রথমেই বলি, বিরাট (Virat Kohli) একদম ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (T20 World Cup) আগে ওর ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়া নিয়ে যে যাই বলুক না কেন, আমি ইতিবাচক দিক দেখতে পাচ্ছি। কেন? বড় ব্যাটসম্যানদের চিন্তাভাবনা বরাবরই সুদূরপ্রসারী হয়। বিশ্বের বড় ব্যাটসম্যানরা যেমন বিচক্ষণ, বিরাটও তেমন।
ও এই সিদ্ধান্ত জেনে বুঝেই নিয়েছে। এতে আখেরে লাভ হবে ভারতীয় ক্রিকেটেরই। কারণ, বিরাট যদি রানে থাকে যে কোনও টিমের বিরুদ্ধে, যে কোনও ফরম্যাটে সাফল্যের মুখ দেখবে ভারত।
একটা প্রশ্ন আমাকে এতদিন ভাবাচ্ছিল। সেটা হল ব্যাটসম্যান বিরাটের পরবর্তী পর্যায়ে উত্তরণের রাস্তাটা কি ভাবে খুলবে? ঠিক যে ভাবে সচিনকে (Sachin Tendulkar) দেখেছি। বিরাট যেন সেই পথই বেছে নিল। ক্যাপ্টেন বিরাট না ব্যাটসম্যান বিরাট? যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, বলব, ব্যাটসম্যান বিরাটে আমি অনেক বেশি মোহিত। যে মুগ্ধতা ওর ব্যাটিং দেখার সময় থাকে, ক্যাপ্টেন্সির ক্ষেত্রে হয়তো ততটা থাকে না। তার কারণ, ক্যাপ্টেন্সি সবসময় টেকনিক্যাল পার্ট হয়। কিন্তু ব্যাটিং উপভোগ করার জিনিস। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য তুলে ধরা যায়।
অনেকে বলছে, বিরাট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় টিমের উপর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্বকাপে সতীর্থদের মনোবল ভেঙেচুরে যেতে পারে। আমি তেমন সম্ভাবনা দেখছি না। ক্রিকেট নিশ্চিত ভাবে টিম গেম। ভারতীয় দলে যারা খেলে তারা যথেষ্ট পরিণত। বিশ্বকাপের গুরুত্ব আলাদা করে বোঝানোর দরকার নেই। ক্যাপ্টেন যেই থাকুক না কেন, প্রথম একাদশ সেরাটা দেবেই।
বিরাটের সিদ্ধান্তটা শোনার পর থেকেই আমি একটা জিনিস ভাবছিলাম। বিরাট ঠিক কি ভাবে নিজের রোডম্যাপ সাজাচ্ছে? টেস্ট ম্যাচ খেলতে ও খুব ভালোবাসে। রীতিমতো উপভোগ করে। সে কথা বারবারই শুনেছি ওর মুখে। বোর্ডকে পাঠানো চিঠিতে ও উল্লেখ করেছে, ব্যাটিংয়ে আরও মনঃসংযোগ বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে, আরও খোলা মনে খেলতে চাইছে বিরাট। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে ৭০টা সেঞ্চুরি আছে ওর ঝুলিতে। সচিনের সমকক্ষ হতে গেলে টেস্ট এবং একদিনের ম্যাচে আরও ভালো খেলতে হবে। কারণ সচিনের ১০০টা সেঞ্চুরি এসেছে টেস্ট আর ওয়ানডে থেকেই। তাই বিরাট ভালো মতো জানে, সেই পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যেতে হলে টি-টোয়েন্টির চাপ সরাতে হবে। কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে এখন ঘনঘন ম্যাচ হয়। এতে সহজাত খেলাও নষ্ট হয়ে যায়। কারণ টেস্ট কিংবা ওয়ানডে-তে অফ স্টাম্পের বাইরের বল সচরাচর ব্যাটসম্যানরা মারে না। কারণ মারতে গেলেই বেশিরভাগ সময় আউট হয়ে যায়। টি-টোয়েন্টি ১২০ বলের খেলা। এখানে বাছ-বিচার থাকে না। আমার ধারণা, আস্তে আস্তে ও টি-টোয়েন্টি থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেবে। হয়তো আর দু’বছর। আইপিএলে হয়তো খেলবে, কিন্তু দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে নাও দেখা যেতে পারে ওকে।
আসলে, শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসতে হলে সংযমী হতে হয়। বয়স যত বাড়বে, এই সংযম তত বেশি দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে একমাত্র সচিন। যদি সচিন-পথ বাছতে হয়, তাহলে বিরাটকে তেমনই হয়ে উঠতে হবে। একমাত্র ওই পারে সচিনের অবিস্মরণীয় রেকর্ড ভেঙে দিতে। সেটা ওর থেকে ভালো আর কে জানে!