CFL 2021: বাবার মৃতদেহ ঘরে রেখেই লিগের ম্যাচে, ময়দানে আকাশ-ছোঁয়ার গল্প
২০০৪ সালে ময়দান এক কাছাপরা ফুটবলার দেখেছিল। সকালে বাবাকে সৎকার করে সে দিন মোহনবাগানের (Mohun Bagan) হয়ে খেলতে নেমেছিলেন বাসুদেব মণ্ডল (Basudev Mondal)। সবুজ মেরুন ফুটবলারকে দেখে সে দিন সারা ময়দান অবাক হয়ে গিয়েছিল। এত যন্ত্রণা নিয়েও কেউ পারে মাঠে নামতে! বাসু বলেছিলেন, 'বাবাকে হারানোর যন্ত্রণা সারা জীবন ভুলতে পারব না। যদি কিছুটা পারি, সেই জন্যই তো ফুটবলের কাছে আসা।'
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
আবেগ, নাকি পেশাদারিত্ব, খেলতে গেলে কী লাগে? আর যদি সাফল্য পেতে হয়? তা হলে কি দায়বদ্ধতা লাগে? কেউ কেউ এমনও হন, যাঁদের সব হিসেবের বাইরে রাখা যায়। যাঁদের নিয়ে তৈরি করা যায় এক আশ্চর্য তালিকা। ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ভুলেও যাঁরা নেমে পড়তে পারেন। হয়তো ফুটবল দিয়েই ভুলতে চান নিজের যন্ত্রণা। আকাশ মুখোপাধ্যায়ের (Akash Mukherjee) মতো।
২০০৪ সালে ময়দান এক কাছাপরা ফুটবলার দেখেছিল। সকালে বাবাকে সৎকার করে সে দিন মোহনবাগানের (Mohun Bagan) হয়ে খেলতে নেমেছিলেন বাসুদেব মণ্ডল (Basudev Mondal)। সবুজ মেরুন ফুটবলারকে দেখে সে দিন সারা ময়দান অবাক হয়ে গিয়েছিল। এত যন্ত্রণা নিয়েও কেউ পারে মাঠে নামতে! বাসু বলেছিলেন, ‘বাবাকে হারানোর যন্ত্রণা সারা জীবন ভুলতে পারব না। যদি কিছুটা পারি, সেই জন্যই তো ফুটবলের কাছে আসা।’
ময়দান সোমবার আরও এক বাসুদেবকে দেখল। তফাত একটাই, মৃত বাবাকে বাড়িতেই রেখে আকাশ এসেছিলেন মাঠে। বাড়ি ফিরে করলেন সৎকার। আজ সকালেই বাবাকে হারিয়েছেন পিয়ারলেসের (Peerless) আকাশ। বেশ কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। বড়ালের ২১ বছরের আকাশ আজকের ম্যাচ খেলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল ক্লাবের। পিয়ারলেসের কর্তারা ফোন করলে আকাশ জানিয়ে দেন, তিনি খেলবেন। পিয়ারলেসের কর্তারা অবাক হয়ে যান। স্টপারের কথা শুনে তাঁকে মনে মনে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। দুপুরেই ইস্টবেঙ্গল মাঠে কলকাতা লিগের ম্যাচ খেলতে চলে আসেন তিনি। টালিগঞ্জের বিরুদ্ধে শেষ মিনিট পর্যন্ত খেলেওছেন।
আকাশও নিশ্চয় বাসুদেবের মতো। যন্ত্রণা ভুলতেই এসেছিলেন ফুটবলের কাছে। ফুটবলে স্ট্রাইকারকে রুখেই দেওয়াই হল স্টপারের কাজ। লড়াকু মনোভাবের আকাশ লিগের ম্যাচে ভালো খেলছিলেন। তিনি না থাকলে সুব্রত ভট্টাচার্যের (পটলা) পিয়ারলেস মাঠে ঠিকই নামত। তবু আকাশ দায়বদ্ধতা দেখানোয় কোচও খুশি হয়েছেন। টালিগঞ্জ অগ্রগামীর (Tollygunge Agragami) বিরুদ্ধে প্রথম মিনিট থেকেই খেলেন আকাশ। দেখে বোঝাই যায়নি, মৃত বাবাকে ঘরে রেখে এসেছেন। তিনি বাড়ি ফিরে সৎকার করবেন। অসম্ভব মনের জোর দেখালেন পিয়ারলেসের স্টপার। ইস্টবেঙ্গল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলতেন। ট্রায়ালে দেখেই আকাশকে দলে নেন পিয়ারলেস কোচ। সুব্রত ফোনে বলছিলেন, ‘আমার এই দলের সম্পদ ও। বিদেশি ডিফেন্ডারকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখে ওকে খেলাচ্ছি। প্রত্যেক ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করছে। আজও দারুণ খেলল। যতক্ষণ মাঠে ছিল বিপক্ষের কাউকে নড়তে দেয়নি।’
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা কিছুক্ষণ গড়ানোর পর হেড করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ ফুটবলারের সঙ্গে সংঘর্ষে মাথা ফাটে আকাশের। ব্যান্ডেজ বেঁধে ফের নেমে পড়েন মাঠে। মাথায় সেলাইও পড়ে। শুশ্রুষার জন্য মাঠের বাইরে ছিলেন কিছুক্ষণ। ওই সময়ই ২ গোল হজম করে পিয়ারলেস। ম্যাচ শেষে সেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার দেওয়া হয় আকাশকে।
ম্যাচ শেষে আকাশ বলেন, ‘অফিসিয়ালরা সাপোর্ট করেছে। মাঠের বাইরে একরকম, মাঠের ভিতরে একরকম। সে ভাবেই মনকে প্রস্তুত রেখেছিলাম। বাবা চেয়েছিল সফল ফুটবলার হই। বাবা দেখতে পেল না খেলাটা। খারাপ তো লাগছেই। আজকের পারফরম্যান্সটা বাবাকেই উৎসর্গ করলাম।’
সকাল থেকেই আকাশ কাঁদছে! কখনও ঝিরিঝিরি, কখনও ঝরোঝরো। এক আকাশের তলায় আর এক আকাশও তখন কাঁদছেন! ফুটবল খেলতে খেলতে!
আরও পড়ুন: ICC Player Of The Month: আগস্টের সেরা ক্রিকেটার জো রুট