Pele Death: পেলে বল ধরলেই টোকা দিবি, নির্দেশ ছিল প্রদীপদার; নস্ট্যালজিক সুব্রত ভট্টাচার্য
পেলের প্রয়াণে স্মৃতির পাতা খুলে ধরেছেন ভারতের একাধিক প্রাক্তন তারকা ফুটবলার।
কলকাতা: বাইশের শেষে ফুটবল সম্রাটকে হারাল গোটা বিশ্ব। ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন পেলে (Pele)। নতুন বছরের সূর্যটা দেখা হল না পেলের। গোটা বিশ্ব পেলের আরোগ্য কামনায় জড়ো হয়েছিল। সকলেই চাইছিল একটা মিরাকল ঘটুক। তা আর হল না। ইহ জগতের মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন পেলে। তাঁর প্রয়াণে স্মৃতির পাতা খুলে ধরেছেন ভারতের একাধিক প্রাক্তন তারকা ফুটবলার। ইডেনের মাঠও প্রত্যক্ষ করেছিল পেলের পায়ের জাদু। ১৯৭৭ সালে বাংলায় এসে কসমসের হয়ে খেলেছিলেন পেলে। বিপক্ষে ছিল মোহনবাগান (Mohun Bagan)। দিনটা ছিল ২৪শে সেপ্টেম্বর। নিউ ইয়র্ক কসমস ক্লাবের হয়ে পেলে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে এসেছিলেন। সেই দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কী কী বললেন সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার এবং প্রসূন বন্দোপাধ্যায়রা। তুলে ধরা হল TV9Bangla-র এই প্রতিবেদনে।
১৯৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কসমস বনাম মোহনবাগান ম্যাচ নিয়ে ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের সময় আমরা অনেক ছোট ছিলাম। তার পর যতবারই বিশ্বকাপ হয়েছে বার বার উঠে এসেছে পেলের নাম। পেলে যখন আমাদের বিপক্ষে খেলতে আসছে, তার এক মাস আগে আমরা সেই খবর জানতে পেরেছিলাম। তখন থেকেই আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, পেলে যেন আসতে পারেন। ধীরেনদা সত্যি পেলেকে নিয়ে আসেন। ধীরেনদা সে বার পেলেকে নিয়ে এসে দেখিয়েছিল, তিনি নিজের কাজটা করেছেন। এ বার মোহনবাগানকে সাফল্য এনে দেওয়ার কাজটা আমাদের।”
তিনি আরও বলেন, “পেলের খেলার ভঙ্গিমাই আলাদা ছিল। তিনি কোন বল ড্রিবল করতে পারেন, কোন বল গোলের দিকে নিয়ে যেতে পারেন, সেটা হাবিবদা, প্রদীপদা শিখিয়ে দিয়েছিল। ওরা বলেছিল, পেলেকে যেন আমরা বল ধরতে না দিই। ওকে বল ধরতে দিলেই অনেককে কাটিয়ে চলে যাবে ও। পেলে বল ধরলেই টোকা দিতে বলা হয়েছিল আমাদের। গৌতম-প্রসূন-প্রদীপ চৌধুরি বা গৌতম-প্রসূন আর আমি বেশির ভাগ সময় পেলের সামনে থাকার চেষ্টা করতাম, যাতে পেলের ড্রিবল করাটা আটকে যায়।”
ম্যাচের শেষে পেলে প্রশংসা করতে ভোলেননি মোহনবাগানের ফুটবলারদের। সুব্রত বলেন, “পেলেকে আমরা মাঠে মারতে (আনাড়ি রাফ ট্যাকেল) সাহস পাইনি। পেলের চোট লেগে গেলে আমাদের কী হবে সেটাই ভাবতাম। যদিও রাতে পার্টির সময় আমাদের খেলার প্রশংসা করেছিল পেলে। আমি যে ক্যাপ্টেন ছিলাম, চিনতে পেরেছিল। যদিও পেলে আমাদের নাম বলতে পারেনি। জার্সির নম্বর ধরে ধরে বলেছিল। মোহনবাগান ক্লাবের প্রশংসা করেছিল। আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল মাঠেই। আমি অধিনায়ক ছিলাম ও সেই সময় অধিনায়ক ছিল। ম্যাচের শেষে এত বড় একজন প্লেয়ার এমন ব্যবহার করেছে, সেটা দারুণ লেগেছে। পেলের খেলা নিয়ে বর্ণনা করার মতো দুঃসাহস না দেখানোই ভালো। কিন্তু পেলের আচরণ মন ছুয়ে গিয়েছিল। আমরা সবাই চেষ্টা করেছিলাম যেন না হেরে যাই। প্রসূন-গৌতম-সুভাষ ভৌমিক-হাবিবরা দারুণ খেলেছিল। শেষ অবধি ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র দিয়ে শেষ হয়েছিল।”
ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার পেলের উদ্দেশে বলেন, “পেলের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা তো ছিলই, যখন জানতে পারি ওর সঙ্গে খেলব একটা আলাদা শিহরণ জাগানো অনুভূতি হয়েছিল। কসমসের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য প্রদীপদার নির্দেশ ছিল আমি যেন পেলের দিকে একটু বেশি নজর দিই। আরও পরিস্কার করে বললে, পেলেকে আটকানোর জন্য আমাকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা সকলেই প্রাণপন লড়াই করেছিলাম সেই ম্যাচে। চুনীদার মতো মানুষ বলেছিল, গত ২০ বছর মোহনবাগান দলগত ভাবে এমন খেলতে পারেনি। আমাকে পেলের ওপর বাড়তি নজর দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হলেও, সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরি, সুধীর কর্মকার, প্রসূন বন্দোপাধ্যায়-সহ আমরা সবাই সেই ম্যাচে ওই নির্দেশ পালন করার চেষ্টা করেছিলাম। এবং আমরা সফলও হয়েছিলাম। ২-২ ফল হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আমি মনে করি, ওটাই আমাদের জয়। পেলে দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে, আমাদের জানিয়েছিল, যারা পেলেদের দলকে স্পনসর করেছিল এই ট্যুরে আসার জন্য তাদের এই ট্যুরের শেষে একটা দলের নাম জানাতে হবে যারা ভালো পারফর্ম করেছে। তাদের সাউথ এশিয়া টুরে পাঠানো হবে। পেলে সেই সময় আমাদের দলটার নাম বলেছিল। আর সেটা সত্যি হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে ৩০ জনের টিম নিয়ে আমরা একটা সাউথ এশিয়া সফরে গিয়েছিলাম। পেলে আমাদের এটা উপহার হিসেবে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমার মনে হয়, এটা আমাদের জীবনে পরম প্রাপ্তি। পাশাপাশি পেলে বলে গিয়েছিল, তোমরা কেন ইউরোপে গিয়ে খেলো না।”
পেলের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ম্যাচের শুরুতে মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে গ্রুপ ফটো তোলার সময় আমার কাঁধে হাত রেখেছিলেন ফুটবল সম্রাট। সেই স্মৃতি আজও অমলিন। সেই ম্যাচে প্রথমে মোহনবাগান গোল দিয়ে এগিয়েও গিয়েছিল। পরে অবশ্য ম্যাচটি ড্র হয়। রেফারি একটা হ্যান্ড বলের ভুল সিদ্ধান্ত দিলে আমরা রেফারির দিকে তেড়ে গিয়েছিলাম। যা দেখে পেলে আমাদের ডেকে সুন্দর ভাবে বোঝালেন যে ফুটবল মাঠে রেফারির স্থান কোন জায়গায় থাকে। পেলের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচ একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে চিরকাল।”
প্রসূন জানান, গৌতম সরকার ও তিনি দু’জনে মিলে হোটেলে ফুটবল সম্রাটের অটোগ্রাফ নিতে গিয়েছিলেন। পেলে তাতে লেখেন “প্লে দা ফুটবল, সি দা ওয়ার্ল্ড, বি এ জেন্টেলম্যান, ফ্লাই দা ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ।” এর পর ২০১৬ সালে পেলে কলকাতায় এসেছিলেন। তখনও পেলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল পেলের।