অশ্বিনকে দেখে শিখুক ইংল্যান্ড

যদি কোনও বিশাল অঘটন না ঘটে কাল চিপকে ভারতের জয়ধ্বজা উড়তে দেখব। সিরিজ ১-১ হয়ে গেলে ভারত আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

অশ্বিনকে দেখে শিখুক ইংল্যান্ড
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 15, 2021 | 8:56 PM

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

ভারত – ৩২৯ ও ২৮৬ ইংল্যান্ড- ১৩৪ ও ৫৩/৩

ইংরেজদের এই এক সমস্যা। যখন পারে, তখন সবই ভালো। যখন পারে না, তখন সবই খারাপ। চিপক আর চিপক, প্রথম টেস্ট এবং দ্বিতীয় টেস্টের দিকে তাকালে আমি যা বলতে চাইছি, পরিষ্কার হয়ে যাবে। চিপকে প্রথম টেস্টে রুট যেহেতু ডাবল সেঞ্চুরি করেছিল, কেউ কোনও অভিযোগ তোলেনি। যেই পুরো টিম ঘূর্ণি পিচে ভেঙে পড়ল, তখনই দেখছি অভিযোগের মাত্রা আকাশ ছুঁচ্ছে। আমি তো বলব, ইংল্যান্ড অশ্বিনকে দেখে শিখুক। ঘূর্ণি পিচে ব্যাট কিভাবে করতে হয়। ওদের বোলারদেরও শিখতে হবে অশ্বিনকে দেখে, স্পিন বোলিং কাকে বলে।

এই টেস্ট ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখল রবিচন্দ্রন অশ্বিন। যে রকম বোলিং, সে রকম ব্যাটিং। অভূতপূর্ব। একাই সমস্ত কিছুর ব্যবধান গড়ে দিল। ঘরের মাঠে দেখিয়ে দিল বিরাট দেশে সেই আসল রাজা। এই ধরণের পিচে যেখানে ব্যাট করা অসম্ভব সেখানে পরিণত মস্তিষ্কের মতো ব্যাটিং করল। অশ্বিনের এই ইনিংস আমার দেখা অন্যতম সেরা। টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের মতো ও আজ খেলল। কোনও বাজে শট নেয়নি। যে কোনও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান আজ গর্বিত হবেন অশ্বিনের এই ইনিংস দেখে। ওর এই ইনিংসই ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিল।

অশ্বিন যে কত বড় মাপের অলরাউন্ডার সেটা বোঝা যায় ওর অ্যাপ্রোচ দেখলে। দ্বিতীয় দিন বল হাতে ভেল্কি দেখিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছে। তৃতীয় দিন যখন ব্যাট করতে এল তখন দলের অবস্থা খারাপ। সেই অবস্থায় সেঞ্চুরি করল। নিজে যেহেতু স্পিনার তাই জানে কোন বল কিভাবে টার্ন করবে। ইংল্যান্ডের স্পিনারদের বিরুদ্ধে তাই স্বাভাবিক ব্যাটিংই করল ও। এমন কি ড্রেসিংরুমে প্যাড গ্লাভস খুলে বল করতে এসেও একটা উইকেট তুলে নিল। ওর এই শারীরিক ভাষাই বুঝিয়ে দিল মাঠে কতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ও খেলতে নামে। ব্যাটে-বলে সমস্ত বিভাগেই নিজেকে মেলে ধরে ও।

আরও পড়ুন: রাঠোরকে সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দিচ্ছেন অশ্বিন

অশ্বিনের সঙ্গে আমি কৃতিত্ব দেব বিরাট কোহলিকেও। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়কোচিত ইনিংস উপহার দিল। অশ্বিনের সঙ্গে ওর পার্টনারশিপ ভারতকে বড় লিড এনে দিল। চিপকে প্রথম টেস্টেও দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট কোহলি রান পেয়েছিল। এই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও গুরুত্বপূর্ণ ৬২ রান করল। দরকারের সময় কিন্তু কোহলি ঠিক রান করছে। রোহিত শর্মার মতো বড় রান পায়নি ঠিকই, তবে ও ব্যাটিং ধারাবাহিকতা দেখিয়ে যাচ্ছে। কোহলির ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে অনেককেই প্রশ্ন তুলতে দেখছি। আমি তো বলব, বিরাটের মতো অধিনায়কের জন্যই আজ ভারত এরকম ইতিবাচক ক্রিকেট খেলছে। কোহলির ক্যাপ্টেন্সিই ইংল্যান্ডকে আজ চাপের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ আটে সেরেনা-অ্যাশলি

অবশ্যই প্রশংসা করব অক্ষর প্যাটেলের। টেস্ট শুরুর আগেই বলেছিলাম অক্ষর এই পিচে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এটা যে ওর অভিষেক টেস্ট সেটা ও বুঝতে দেয়নি। বরং অভিজ্ঞ বোলারদের মতোই বল করছে। অশ্বিনকে দেখে আরও উদ্বুদ্ধ হয়েছে অক্ষর প্যাটেল। চতুর্থ দিন ওকে খেলাটা আরও সমস্যার হবে ইংল্যান্ডের। কারণ অক্ষর প্যাটেলের কিছু বল সোজা উইকেটে আসে। আর সেটাই ব্যাটসম্যানদের পক্ষে বিপজ্জনক। কারণ পিচের যা চরিত্র, তাতে যে কোনও বোলারের বলই টার্ন করবে। প্রথম টেস্টের চেয়ে এই টেস্টের উইকেটে বিস্তর তফাত্‍। প্রথম দিন থেকেই পিচে বল টার্ন করছে, মাটি উড়ে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে উইকেটে বেশি জল দেওয়া হয়নি। আমার ক্রিকেটীয় বোধ বলে, কাল চা-বিরতির আগেই খেলা শেষ হয়ে যাবে এবং ভারত সিরিজে সমতায় ফিরবে।

আরও পড়ুন: বড় ম্যাচের আগে বড় চাপ, ফাউলারকে ফের শো-কজ ফেডারেশনের

ইংল্যান্ডের ভরসা একমাত্র অধিনায়ক জো রুট। তবে এই পিচে ২দিন মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা যে কোনও টিমের পক্ষেই অসম্ভব। ভারতের বোলিং লাইনআপও যেখানে এত শক্তিশালী। আজ ইংল্যান্ডের ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ায় ওরা এমনিতেই চাপে রয়েছে। যদি কোনও বিশাল অঘটন না ঘটে কাল চিপকে ভারতের জয়ধ্বজা উড়তে দেখব। সিরিজ ১-১ হয়ে গেলে ভারত আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ২৮৬ ( অশ্বিন ১০৬, কোহলি ৬২, মইন আলি ৪/৯৮, লিচ ৪/১০০), ইংল্যান্ড ৫৩/৩ (বার্নস ২৫, অক্ষর ২/১৫)