Thomas Cup: পাঁচ সাহসী ছেলের গল্প চিরকাল শোনাবে খেলার ইতিহাস
ব্যাঙ্ককে ভারতীয় টিমের থমাস কাপ জেতা চিরকাল মনে থেকে যাবে। যাঁরা এর সাক্ষী থেকেছেন, তাঁরা ছেলেমেয়েদের, নাতি-নাতনিদের গল্প করতে পারবেন। বলতে পারবেন, এক সময় পাঁচটা সাহসী ছেলে অসম্ভবকে সম্ভব করে ইতিহাসে পা রেখেছিলেন।
সন্দীপন শর্মা
দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন আপনি কোথায় ছিলেন? ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করে, তখন? যখন কপিল দেব প্রথম ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জিতেছিল, তখন? প্রশ্ন আরও কয়েকটা থেকে যাচ্ছে। ১৫ মে ২০২২ সালে কোথায় ছিলেন আপনি? বিকেল ৩-১৫, যখন ইন্দোনেশিয়ার জোনাথন ক্রিস্টির বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচটা তীক্ষ্ণ স্ম্যাশে কিদাম্বি ‘বুদ্ধ’ শ্রীকান্ত শেষ করেছিলেন? তখন কোথায় ছিলেন, যখন ক্রিস্টির সীমানার বাইরে চলে গিয়েছিল শটটা? শ্রীকান্ত নিজের ব্যাডমিন্টন ব়্যাকেটটা ফেলে উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন? তার আগে পর্যন্ত যেন প্রার্থনা করছিলেন শ্রীকান্ত। ব্যাঙ্ককের ব্যাডমিন্টন এরিয়ান শ্রীকান্তের সাফল্যের উচ্ছ্বাসের সময় কোথায় ছিলেন আপনি? ওঁর টিমমেটদের গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়া দেখেছিলেন? পুরো টিমের ভিকট্রি ল্যাপ? শুনতে পেয়েছিলেন ঢোলের সঙ্গে সঙ্গে ‘ভারত মাতা কি জয়’ উল্লাস? তেরঙার উড়ান দেখেছিলেন?
অনেক কিছু মনে রেখে দেওয়ার মতো বিষয়। অনেক কিছু চিরদিনের মতো মনে গেঁথে রাখার মতো মুহূর্ত। থমাস কাপের (Thomas Cup) ৭৩ বছরের ইতিহাস। কিন্তু বিশ্বের মাত্র পাঁচটা দেশ এতদিন থমাস কাপ জয়ের তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। এতদিন ভারতের সেরা পারফরম্যান্স ছিল ১৯৭৯ সালে। সাম্প্রতিক কালের নিরিখে ধরলে, ২০১০ কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছিল ভারত। এ বারের ভারত শুধু যে থমাস কাপ জিতল তাই নয়, ইন্দোনেশিয়ার মতো টিম যাদের ১৪বার থমাস কাপ জেতার রেকর্ড রয়েছে, তারে ৩-০ উড়িয়ে দিল। মাত্র ৫ ভারতীয় শাটলার বিশ্বাস করেছিল তারা ইতিহাস তৈরি করতে পারে। ফাইনালের শুরু থেকে থমাস কাপ জেতার জন্য় মরিয়া ছিল ভারত। পিছিয়ে পড়েও অ্যান্থনি জিন্টিংয়ের বিরুদ্ধে দুরন্ত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল লক্ষ্য সেনের মতো তরুণ শাটলার। প্রথম ডাবলস ম্যাচেই জয়ের রাস্তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। প্রথম গেমে ০-১ পিছিয়ে থাকা অবস্থা থেকেও হাল ছাড়েননি সাত্বিক-চিরাগ। দ্বিতীয় গেমে ১৭-২০ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। ইন্দোনেশিয়ান শাটলাররা ভাবেনইনি, ভারত এমন পারফর্ম করবে যে, কেউই ভাবেনি।
শ্রীকান্ত ওর ম্যাচটা খেলতে যখন কোর্টে নামল, দেখে মনে হচ্ছিল যেন বলতে চাইছেন— ম্যায় হুঁ না! ঠান্ডা মাথায় প্রতিপক্ষকে শেষ করল ও। তিনি যে একেবারে অন্য মোডে ছিলেন, শ্রীকান্ত হয়তো নিজেই খেয়াল করেননি। শুধু নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। ফোকাসড ছিলেন। ভারতের সেরা খেলার মুহূর্তগুলো, কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনির বিশ্বকাপ তুলে ধরা, নীরজ চোপড়ার অলিম্পিকে সোনা জয়, বিশ্বনাথন আনন্দের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া— তার সঙ্গেই যেন শ্রীকান্তের ওই উৎসব, উচ্ছ্বাস, উল্লাস মনে থেকে যাবে।
ব্যাঙ্ককে ভারতীয় টিমের থমাস কাপ জেতা চিরকাল মনে থেকে যাবে। যাঁরা এর সাক্ষী থেকেছেন, তাঁরা ছেলেমেয়েদের, নাতি-নাতনিদের গল্প করতে পারবেন। বলতে পারবেন, এক সময় পাঁচটা সাহসী ছেলে অসম্ভবকে সম্ভব করে ইতিহাসে পা রেখেছিলেন। কেউ বিশ্বাস করেনি, তাঁরা এমন কিছু করে দেখাতে পারেন। থমাস কাপ, যাকে ব্যাডমিন্টন বিশ্বকাপ বলা যেতে পারে, সেখানেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবার শোনা গিয়েছিল জাতীয় সঙ্গীত।
এই খবরটি ইংরেজিতেও পড়ুন NEWS9LIVE এ।