বৃহস্পতি-শনির ‘মহামিলন’, ৩৯৭ বছর পর এত কাছাকাছি আসছে দুই গ্রহ
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন এই মহামিলন বা গ্রেট কনজাঙ্কশনের ফলে তৈরি হবে ‘ক্রিসমাস স্টার’।
বৃহস্পতি আর শনি, সৌরমন্ডলের সবচেয়ে বড় এই দুই গ্রহের মহামিলন (conjunction) হবে আগামীকাল ২১ ডিসেম্বর। ইতিমধ্যেই তাদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। আগামীকাল পর্যন্ত আকাশে একসঙ্গে অবস্থা করবে এই দুই গ্রহ। তবে আগামী কাল হবে মহামিলন। অর্থাৎ বৃহস্পতি এবং শনি এই দুই গ্রহ একে অন্যের এত কাছাকাছি আসবে যে মনে হবে তারা যেন একে অপরকে স্পর্শ করে আছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন এই মহামিলন বা গ্রেট কনজাঙ্কশনের ফলে তৈরি হবে ‘ক্রিসমাস স্টার’।
আগামীকাল অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর উত্তর গোলার্ধে winter solstice। অর্থাৎ পৃথিবীতে সূর্যালোক পৌঁছনোর নিরিখে সবচেয়ে ছোট দিন এবং বড় রাত থাকবে কাল। আর এমন দিনেই বৃহস্পতি এবং শনি এই দুই গ্রহ একে অন্যের এত কাছে আসবে।
শেষ কবে বৃহস্পতি ও শনিকে দেখা গিয়েছিল এক সঙ্গে?
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথায় প্রায় ৩৯৭ বছর আগে এত কাছাকাছি এসেছিল এই দুই গ্রহ। এমনিতে এই দুই গ্রহের মধ্যে দূরত্ব ৭৩ কোটি কিলোমিটারেরও বেশি। আয়তনে শনি গ্রহের তুলনায় বৃহস্পতি ১.৭৩ গুণ বড়। কিন্তু তবুও আগামীকাল দুই গ্রহের ভৌগলিক অবস্থান এমনই থাকবে যে দেখে মনে হয় দুটি নয় আসলে একটিই গ্রহ রয়েছে।
গ্রেট কনজাঙ্কশন বা মহামিলন-
যে কোনও গ্রহাণু বা গ্রহ একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে এলে এবং পৃথিবী থেকে সেই পরিস্থিতি দেখা গেলে তাকেই বলে মিলন বা কনজাঙ্কশন। তবে বৃহস্পতি এবং শনির ক্ষেত্রে ‘গ্রেট’ বলার কারণ সৌরমণ্ডলে এই দুই গ্রহের আকার-আয়তন সবচেয়ে বেশি।
প্রতি ২০ বছর অন্তর এই ‘গ্রেট কনজাঙ্কশন’ হয়ে থাকে। সূর্যের চারপাশে নিজেদের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এক একটি গ্রহের যা সময় লাগে তার জেরে প্রতি দু’দশক পর পরই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। বৃহস্পতি, শনি গ্রহের পাশ দিয়ে যায়। কাছাকাছি আসে। উল্লেখ্য সূর্যের চারপাশে একবার প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির সময় লাগে ১২ বছর। সূর্য থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থান হওয়ার ফলে শনি গ্রহের এই প্রদক্ষিণে সময় লাগে ৩০ বছর।
এ বছর মহামিলন ব্যতিক্রম কেন?
জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেনরি থুপ জানিয়েছেন, এই বছরের ‘গ্রেট কনজাঙ্কশন’ ব্যক্তিক্রম হওয়ার কারণ প্রায় চার শতক আগে এতটা কাছাকাছি এসেছিল বৃহস্পতি আর শনি। তবে এবার নিজ কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে আগামীকাল অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর শনি গ্রহকে অতিক্রম করবে বৃহস্পতি। কারণ সূর্যের চারপাশের বৃহস্পতির প্রদক্ষিণের গতি শনির তুলনায় অনেকটা বেশি। আয়তনে ছোট গ্রহকে কক্ষপথে অতিক্রম করার পর বৃহস্পতি আর শনি এতটাই কাছাকাছি চলে আসবে যে খালি চোখে দেখলে মনে হবে যে একটিই গ্রহ অবস্থান করছে। হেনরি আরও জানিয়েছেন যে প্রতি ২০ বছর অন্তর যখন এই মিলনের পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন দুই গ্রহ কাছাকাছি আসলেও সামান্য কয়েক ডিগ্রির ফারাক থাকে, যার ফলে তাদের আলাদা অবস্থান বোঝা যায়। তবে এই বছর সেই ফারাক বোঝা যাবে না। মাত্র ০.১ ডিগ্রির ব্যবধান থাকবে দুই গ্রহের মধ্যে।
কীভাবে এমন বিরল মুহূর্ত চাক্ষুষ করবেন সাধারণ মানুষ?
অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের যেকোনও প্রান্ত থেকেই এই মহামিলন দেখা যাবে। আগামীকাল সূর্যাস্তের পর ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত এই বিরল মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারবেন আমআদমি। খালি চোখেই দেখা যাবে বৃহস্পতি এবং শনি গ্রহের মহামিলন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শনি গ্রহের তুলনায় আকার-আয়তন এবং ঔজ্জ্বল্য বেশি থাকবে বৃহস্পতিবার। তুলনায় শনি গ্রহকে কিছুটা ছোট এবং ফ্যাকাশে লাগবে। তবে আপাত ভাবে দুটি গ্রহের মিলনের পর মনে হবে যেন আকাশে একটিই গ্রহ রয়েছে।