BSNL: বিএসএনএল-এ কেন্দ্রের বিপুল বিনিয়োগ, সমস্যায় পড়তে পারে বেসরকারি সংস্থাগুলি, আখেরে লাভ দেশবাসীরই, কী ভাবে?
Govt To Invest In BSNL: চলতি বছরের ইউনিয়ন বাজেট, যা পেশ হয়েছে গত মঙ্গলবার, সেখানেই নতুন জীবন পেয়েছে সরকারি বিএসএনএল। কেন্দ্রের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে বিএসএনএল ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি প্রতিটি দেশবাসী কী ভাবে উপকৃত হতে পারেন, জেনে নিন।
ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (Bharat Sanchar Nigam Limited), দেশের একমাত্র সরকারি টেলিকম সংস্থাটিকে এবার প্রতিযোগী বেসরকারি টেলকোগুলির সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে বড় বিনিয়োগ করতে চলেছে কেন্দ্র। চলতি বছরের ইউনিয়ন বাজেট (Union Budget 2022) অনুযায়ী, বিএসএনএল (BSNL)-এ ৪৪,৭২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে ভারত সরকার। বাজেট নথিতে বলা হয়েছে, “বিএসএনএল-এ ৪জি স্পেকট্রাম, প্রযুক্তি আপগ্রেডেশন এবং পুনর্গঠনের জন্য এই বিনিয়োগ করা হচ্ছে।” ২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষেই এই বিনিয়োগ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ৪জি চালু করতে এবং ক্যাপেক্স চাহিদা মেটানোর জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনস-এর সাহায্য চেয়েছে বিএসএনএল।
চলতি বাজেটে বিএসএনএল-এর নতুন জীবন
এর আগে ২০১৯ সালেও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ৭০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই টেলিকম সংস্থাটি। যদিও তার বেশির ভাগ অংশটাই সংস্থায় কর্মরত ৫০ ঊর্ধ্ব কর্মীদের ভলান্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট স্কিমে কাজে লাগানো হয়েছিল। চলতি বছরেও এই স্কিমে আলাদা করে ৭,৪৪৩.৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ভারত সরকার। এছাড়ও জিএসটি পেমেন্টের জন্য ৩,৫৫০ কোটি টাকা গ্র্যান্ট ইন এড। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভলান্টিয়ারি রিটায়ার্ড স্কিম ও জিএসটি পেমেন্ট বাদ দিয়ে বিএসএনএল-কে পুনরুজ্জীবিত করার ভারত সরকারের এই প্রচেষ্টা কতটা যুক্তিযুক্ত?
কেন্দ্রের বিনিয়োগে যে ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে বিএসএনএল
এই মুহূর্তে ভারতীয়দের কাছে ৪জি কানেকশন ও তার সমস্ত সুবিধা উপভোগ করার জন্য তিনটি উপায় রয়েছে। রিলায়েন্স জিও, ভোডাফোন আইডিয়া এবং এয়ারটেল – প্রত্যেকের প্রায় একই ট্যারিফ প্ল্যান। বিএসএনএল এসে গেলে আরও একজন প্রতিযোগী যোগ হবে। দেশে তখন চারটি টেলিকম সংস্থা ৪জি পরিষেবা দিতে পারবে। আর এই চতুর্থ অপশন অর্থাৎ বিএসএনএল অনেকটাই সস্তায় ট্যারিফ প্ল্যান নিয়ে আসতে পারবে। আর সেখানে জিও, এয়ারটেল ও ভোডাফোনের সংস্থাগুলিও নিজেদের রিচার্জ প্ল্যানের খরচ কমাতে একপ্রকার বাধ্য হবে। বিএসএনএল ৪জি নেটওয়ার্ক যদিও সব জায়গায় শক্তিশালী হবে না। তবে, বহু মানুষই তাঁদের ফোনে দ্বিতীয় সিম এবং বিকল্প হিসেবে একটা বিএসএনএল কানেকশন নিতেই পারেন।
দেশের ৪জি নেটওয়ার্কের চেহারা বদলে দিতে পারে বিএসএনএল
বিএসএনএল-এ সরকারের এই বিপুল বিনিয়োগ এবং তার ৪জি পরিষেবা আর একটি দিক থেকে সফল হতে পারে। তা হল, গ্রামীণ ভারত এবং দেশের বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক এলাকার মানুষজন সস্তার বিএসএনএল প্ল্যানের জন্য সিম নিতে পারেন। কারণ, বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি গ্রামীণ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কে সম্প্রসারণে খুব একটা বেশি নজর দেয় না। গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসা যে খুব একটা ভাল হয় না, তা আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে প্রাইভেট টেলকোগুলির কাছে। আর তার সবথেকে বড় কারণ হল, লগ্নি অনুযায়ী সেখানে সেরকম রিটার্নও আসে না।
সে দিক থেকে দেখতে গেলে, বিএসএনএল দেশের সমস্ত প্রান্তে পরিষেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি বিএসএনএল ৪জি চালু হলে অন্যান্য বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির নেটওয়ার্কে উপরে প্রবল চাপ একটু কম হবে। ফলে সবদিকের ইউজাররাই আরও ভাল পরিষেবা পেয়ে যাবেন। এছাড়াও, বিএসএনএল ভারতে দেশি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই টেলিকম সংস্থাটি দেশি ৪জি নেটওয়ার্কের জন্য টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস-এর সঙ্গে কা করছে। ভবিষ্যৎে সংস্থার ৫জি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও তা হতে পারে।
দেশের প্রতিটি প্রান্তে ৪জি কানেকশন পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে বিএসএনএল। তাই এই সংস্থার একটা রিলিফ প্যাকেজের দরকার ছিল অনেক দিন ধরেই। বাজে নেটওয়ার্ক, দুর্বল পারফর্ম্যান্স এই সব অনেক কারণে বিএসএনএল তার কষ্টার্জিত গ্রাহকদের হারিয়েছে। আর কেন্দ্রের এই বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পরে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটির ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একবার বিএসএনএল তার ৪জি পরিষেবা চালু করতে পারলে, বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের ট্যারিফ প্ল্যানের খরচও কমাতে বাধ্য হবে। সেই সঙ্গেই আবার দেশে আর একটি ৪জি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা যোগ হওয়ার ফলেও নেটওয়ার্ক লোডও কিছুটা কমবে। সুতরাং সব দিক থেকে বিএসএনএল ঘুরে দাঁড়ালে আখেরে লাভবান হবে সমগ্র ভারতবাসী।
আরও পড়ুন: ভারতে আইফোন এসই থ্রি লঞ্চ হতে পারে ২২,৫০০ টাকায়, নতুন রিপোর্ট থেকে জল্পনা
আরও পড়ুন: ফাঁস হল ওয়ানপ্লাসের আসন্ন ফোনের স্পেসিফিকেশন, দাম থেকে শুরু করে লঞ্চ ডেট সবিস্তারে জেনে নিন…
আরও পড়ুন: ২৯৯ টাকা ও ২,৯৯৯ টাকার রিচার্জ প্ল্যান নিয়ে এল বিএসএনএল, দুটোতেই ৩জিবি করে ডেটা