Sundarban: দিঘার পর সুন্দরবনেও বিকট শব্দ, কাঁপল মাটি, ‘সনিক বম্ব’ ঘিরে বাড়ছে রহস্য
Sundarban: এলাকার আতঙ্কিত বাসিন্দাদের প্রশ্ন, বড়সড় বিপর্যয়ের আগে এটা কোনও সতর্কবার্তা নয় তো ? শুধুমাত্র বকখালি বা ফ্রেজারগঞ্জ এলাকা নয়, বিকট শব্দ শোনা গিয়েছে প্রায় পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার দূরে আশেপাশের এলাকাতেও।

সুন্দরবন: বিকেল তখন আড়াইটে। সমুদ্র তটে মিঠে রোদ গায়ে মেখে পর্যটকেরা যখন মনোরম পরিবেশ উপভোগ করছেন। আচমকা বিকট শব্দ। শব্দের উৎসস্থল বুঝে উঠতে না পারলেও একটা কম্পন শুরু হয়। বিকট সেই শব্দ শোনার পাশাপাশি কম্পন অনুভব করেন সুন্দরবনের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বকখালিতে বেড়াতে আসা শয়ে শয়ে পর্যটকেরা। সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ফ্রেজারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা থেকে পর্যটকদের মধ্যেও। ভয়ও পেয়ে যান কেউ কেউ। দ্রুত সমুদ্রতট থেকে পর্যটকেরা তড়িঘড়ি হোটেলের ঘরে ফিরতে শুরু করেন। ব্যান্ডেল থেকে আসা একটি পর্যটক দলের সদস্য অলোক ভট্টাচার্য জানান, ‘পাহাড় থেকে পাথর ভেঙে পড়ার সময় যে শব্দ হয়, ঠিক তেমনি বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছি। প্রথমে হালকা, পরে গর্জনের মতো ভারী শব্দ। শব্দের কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন কেঁপে উঠল পায়ের তলার মাটি।
এলাকার লোকজন জানাচ্ছেন শব্দটা বেশ কিছুক্ষণ শোনা গেলেও কম্পন খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। এক মিনিট মতো বোঝা যায়। অলোকবাবু বলছেন, এ যেন এক অবাক করা কাণ্ড ঘটে গেল। আশ্চর্যের বিষয় কিছুই বুঝতে পারলাম না। এলাকার বাসিন্দারাও আমাদের মত অথৈ জলে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিত প্রশাসনের।’
অস্বাভাবিক এই ঘটনা ঘিরে জোর গুঞ্জন শুরু হয় সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার মানুষদের মধ্যেও। এলাকার আতঙ্কিত বাসিন্দাদের প্রশ্ন, বড়সড় বিপর্যয়ের আগে এটা কোনও সতর্কবার্তা নয় তো ? শুধুমাত্র বকখালি বা ফ্রেজারগঞ্জ এলাকা নয়, বিকট শব্দ শোনা গিয়েছে প্রায় পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার দূরে আশেপাশের এলাকাতেও। তবে সেই সমস্ত এলাকাতে কোন কম্পন অনুভূত হয়নি। ফ্রেজারগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাশীনাথ জানা বলেন, ‘আচমকা কিছু ভেঙে পড়ার মত বিকট শব্দটা কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে উৎস্য বোঝার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। এরমধ্যে ভূমিকম্পের মতো ঠিক কম্পন অনুভূত হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তখন সকলেই মনে করেছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু শব্দটা কোথা থেকে এল সেটাই এখন সকলের কাছে রহস্য !’
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ১৬ জানুয়ারি বিকেল চারটে নাগাদ আচমকাই বিকট শব্দ করে কেঁপে উঠেছিল নদী ও বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত মৌসুনি দ্বীপের একাংশ। একইরকম ভাবে আতঙ্ক গ্রাস করেছিল দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে। সেই গুঞ্জনের মধ্যে আবার পার্শ্ববর্তী এলাকা বকখালিতে একই রকম ভাবে বিকট শব্দ করে কম্পন অনুভূত হওয়ায় আতঙ্ক খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। কেন এই বিকট শব্দ এবং সঙ্গে কম্পন ? সমুদ্র বিজ্ঞানী তুহিন ঘোষ জানান, ‘উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রপৃষ্ঠে অনেক সময় সেডিমেন্ট (জমা পলি) জমে জমে পাহাড়ের মত স্তুপ হয়ে থাকে। আচমকা ওই সেডিমেন্টগুলো জলের ভেতরে ভেঙে পড়ায় কম্পন হয়ে বিকট শব্দ বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢেউও তৈরি হতে পারে। যদি সেটা উপকূলের কাছাকাছি হয় তাহলে ঢেউ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর যদি সমুদ্রের গভীরে হয়, তাহলে ঢেউ হওয়ার সম্ভবনা কিছুটা কমে যায়। এমনকি সেই ঢেউটা বোঝাও যায় না। বিকট শব্দ এবং কম্পনের এটাই একমাত্র সম্ভাবনা। সেটা যদি না হয় তাহলে বাইরে থেকে মানুষ কিছু করলে করতে পারে।’ তবে গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রের খবর, যুদ্ধবিমান যখন আকাশে সাব সনিক থেকে সুপার সনিকে শিফট করে তখন সেই বিকট শব্দের জেরে মাটিতে কম্পন অনুভব হতে পারে। এটাকে বলা হয় সনিক বম্ব। এটার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিজ্ঞানীদের একাংশ। এদিকে এদিন দুপুরে আবার একইরকমের শব্দ শোনা যায় দিঘাতেও। তা নিয়েও ঘনিয়েছে রহস্য।





