Basirhat Domestic Violence: ঠান্ডা জল খাবেন, ফ্রিজ কিনতে বলেছিলেন বউমাকে, তা বলে এমন ঘটাবেন শ্বশুর! ছিঃ ছিঃ পড়শিদের
Basirhat Domestic Violence: অভিযোগ, বুধবার সকালেও আলপনার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। তাঁকে মারধর করা হচ্ছিল বলেই মত প্রতিবেশীদের। তারপর আচমকাই তাঁর আর্তচিৎকার শোনা যায়।
উত্তর ২৪ পরগনা: বিয়ের সময়ে ঘরের বাকি সব কিছুর সঙ্গে ফ্রিজটাও চাওয়া হয়েছিল। খাট, আলমারি, গয়নাপত্র সবই দেওয়া হয়েছিল গুছিয়ে। কিন্তু ফ্রিজটা দিতে পারেননি মেয়েটার বাবা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরে দিয়ে দেবেন। সেই মোতাবেক বিয়েও হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের কয়েকমাস ঘুরতে না ঘুরতেই পুরনো দাবি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে শ্বশুরবাড়ির লোকের। অশান্তি চলতই। আর গার্হস্থ্য সেই অনুশাসনের শেষ অধ্যায় বাড়ি থেকে বধূর অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার। শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দাবি, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই গৃহবধূ। কিন্তু বাপেরবাড়ির পরিবারের দাবি, আগুনে পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে তাঁদের বাড়ির মেয়েকে। মৃতের নাম আলপনা মণ্ডল (২৪)। ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের হাড়োয়া থানার সোনাপুকুর-শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুচিয়ামোড়া গ্রামের। অভিযোগ, শ্বশুর শাশুড়ির দাবি মতো বাপের বাড়ি থেকে ফ্রিজ না আনায় বধূকে এলোপাথাড়ি মেরে খুন করা হয়। পরে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে হাড়োয়া থানায় খুন ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা অনিন্দ্র সরকার।
উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুর থানার জয়পুল এলাকার বাসিন্দা আলপনার সঙ্গে বছর তিনেক আগে দেখাশুনা করে বিয়ে হয় হাড়োয়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মণ্ডলের। শ্বশুর শাশুড়ির দাবিমতো বিয়েতে যৌতুক দেওয়া হয়। বিয়ের পরে আরও পণের দাবিতে বাপের বাড়ি থেকে টাকা ও জিনিসপত্র আনার চাপ দেওয়া হতে থাকে বলে অভিযোগ।
বধূকে মাঝেমধ্যেই মারধর করা হত। প্রথমদিকে বাপেরবাড়িতে কিছুই জানাননি আলপনা। তবে প্রতিবেশীরা ওই বাড়িতে থেকে নিত্য অশান্তি চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেতেন। জামাই বিশ্বজিৎ কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকে। আলপনার বাবাই বলছেন, “জামাই খুব ভাল ছেলে। ও কাজের জন্য কলকাতাতেই থাকে। এখানে আসে। ওর বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই।” তাঁর দাবি, সপ্তাহ তিনেক ধরে ফ্রিজ নিয়ে আসার জন্য চাপ দিয়েছিলেন শ্বশুর রবীন মন্ডল ও শাশুড়ি গীতারানি মন্ডল।
তা নিয়েই অশান্তি লেগে থাকত। স্বামীকেও সেকথা জানিয়েছিলেন আলপনা। স্বামী কিছুটা আপোস করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু একাই লড়তে হত আলপনাকে। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার রাতেই তাঁরা অশান্তি আওয়াজ শুনেছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁদের পরিবারের সমস্যায় নাক গলান তা পছন্দ করতে না রবীন অর্থাৎ আলপনার শ্বশুর। তাই প্রতিবেশীরাও যাননি।
অভিযোগ, বুধবার সকালেও আলপনার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। তাঁকে মারধর করা হচ্ছিল বলেই মত প্রতিবেশীদের। তারপর আচমকাই তাঁর আর্তচিৎকার শোনা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব চুপ হয়ে যাওয়ায় সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। তাঁরা দেখেন, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে আলপনার শরীর।
প্রতিবেশীরাই প্রথমে হাড়োয়া থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে অগ্নিদগ্ধ দেহটি উদ্ধার করে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। দেহটি ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক গৃহবধূর শ্বশুর ও শাশুড়ি। তদন্ত শুরু হয়েছে পুলিশ। মৃতার বাবা বলেন, “আমি বলেছিলাম, বিয়েতে অনেক খরচ হয়েছে। টাকা পয়সা জমিয়ে ফ্রিজ কিনে দেব। গরিবের এত টাকা কোথা থেকে আসবে… ওরা মেরেই ফেলল মেয়েটাকে।”