বীরভূমে ‘নিঃসঙ্গ’ শতাব্দীর চারপাশে নেই দলীয় কর্মীদের ভিড়, এড়িয়ে গেলেন বিধায়কও!

দেখা করলেন না দলের স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, "ওঁ ব্যক্তিগত কাজে এসেছেন। আমি দলের কাজে কলকাতায় যাচ্ছি।"

বীরভূমে 'নিঃসঙ্গ' শতাব্দীর চারপাশে নেই দলীয় কর্মীদের ভিড়, এড়িয়ে গেলেন বিধায়কও!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 17, 2021 | 4:57 PM

বীরভূম: তাঁর মানভঞ্জনে সমর্থ হয়েছে দল। পুরস্কৃত করা হয়েছে তাঁকে। শতাব্দী রায় (Satabdi Roy)এখন তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি। দলের সঙ্গে দূরত্ব কমেছে তাঁর। তবে কেষ্ট গড়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সেই ‘ঠান্ডা লড়াই’ কি জিইয়ে রয়েছে, রবিবার রামপুরহাটের অভিনেতা সাংসদকে ঘিরে তৈরি হওয়া কয়েকটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরল সেই প্রশ্নই।

চিত্র এক, বীরভূমের সাংসদ রামপুরহাট পৌঁছলেন, অথচ তাঁকে স্বাগত জানাতে দেখা গেল না কোনও দলীয় কর্মীকেই। চিত্র দুই, সাংসদকে এড়িয়ে গেলেন রামপুরহাটেরই দলীয় বিধায়ক। চিত্র তিন, শতাব্দীর কার্যালয়েও দেখা মিলল না দলীয় কর্মীদের। এদিন ‘একা’ শতাব্দীর চারপাশে শুধু দেখা গেল তাঁরই ঘনিষ্ঠদের।

রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় কলকাতা থেকে ট্রেনে রামপুরহাট পৌঁছন শতাব্দী রায়। ততক্ষণে দলের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি পদপ্রাপ্তি হয়েছে তাঁর। তবুও লক্ষ্যণীয়ভাবে এদিন তাঁকে স্বাগত জানাতে প্ল্যাটফর্মে দেখা মেলেনি কোনও তৃণমূল কর্মীর। সেখান থেকে গাড়িতে চলে যান রামপুরহাটের নিশ্চিন্তপুরে নিজের কার্যালয়ে। সেই কার্যালয়ও ছিল কার্যত শূন্য। কোনও তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরই দেখা মেলেনি সেই চত্বরে। রামপুরহাটে রয়েছে বীরভূমের সাংসদ, অথচ তাঁর সঙ্গেই দেখা করলেন না দলের স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, “ওঁ ব্যক্তিগত কাজে এসেছেন। আমি দলের কাজে কলকাতায় যাচ্ছি।”

বীরভূমের রাজনৈতিক অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন আসলে অনুব্রত গোষ্ঠীর লোক। তাহলে প্রশ্ন সেই কারণেই কি সাংসদের সঙ্গে দেখা করা এড়িয়ে গেলেন বিধায়ক? রবিবারই শতাব্দীকে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি করা হয়েছে। তারপরই TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য যা ভাল বুঝেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তো আমার কিছু বলার নেই। তবে এটুকু বলি বীরভূমে কোনও গোষ্ঠী নেই। এখানে গোষ্ঠীর প্রসঙ্গ তুলবেন না।”

কেষ্ট দাবি করছেন ‘গোষ্ঠী নেই’ আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কেন দলেরই সাংসদকে স্বাগত জানাতে গেলেন না দলের কর্মী সমর্থকরা? এক্ষেত্রে কি জেলা নেতৃত্বেরই কোনও নির্দেশ রয়েছে তাঁদের ওপর? যদিও রবিবার একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে রামপুরহাটে এসেছেন শতাব্দী। তবুও এক্ষেত্রে বলা যায়, দলের সাংসদকে ঘিরে দলীয় কর্মীদের এহেন উদাসীনতা আগে কখনও দেখেনি বঙ্গ।

প্রসঙ্গত, দিন তিনেক আগেই বেসুরো গাইতে শোনা গিয়েছিল শতাব্দী রায়কে। দলের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ময়দানে নেমে পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সৌগত রায় থেকে শুরু করে ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এমনকি তাঁর বাড়িতে যান কুণাল ঘোষও।

ফের আচমকাই পট পরিবর্তন। সুর বদলে শতাব্দী বলতে শুরু করেন, “আমি তৃণমূলেই থাকছি. আমি তো কখনও বলিনি বিজেপিতে যাচ্ছি।” এরপরই শতাব্দী রায়ের ফ্যান ক্লাব থেকে আরও একটি ফেসবুক লাইভ করা হয়। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। আর তারপরই দলে সাংগঠনিক ‘পদপ্রাপ্তি’।

এদিনও অবশ্য দলের প্রতি চরম আনুগত্য প্রকাশ পেয়েছে শতাব্দীর কথায়। বললেন, “আমি খুশি। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যে তাঁরা আমাকে দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন। আমাকে শুধু অভিনেত্রী বা স্টার হিসাবে গণ্য করেননি, সেইভাবেই ব্যবহার করার কথা ভাবছেন। আমি কর্মী হিসাবেই কাজ করতে চাই।”

আরও পড়ুন: মানভঞ্জনের পরই ‘পুরস্কৃত’, তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে পেলেন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন শতাব্দী

দল ও তাঁর মধ্যে আপোস হয়েছে বটে তবে বীরভূমের মাটিতে আজ সাংসদ শতাব্দীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তথা বিধায়কের ‘উদাসীনতা’ই, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।