Bagtui Massacre: ‘শর্ট সার্কিট’ না ‘ভয়ঙ্কর খেলা’? অনুব্রতর তত্ত্বকে কীভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা?

Anubrata Mondal: সত্যিই কি  শর্ট সার্কিটের থেকে এই ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? বিষয়টি নিয়ে TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক  অরিন্দম কুমার শীলের সঙ্গে। দীর্ঘ আট বছর ধরে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত অরিন্দম বাবু। দেখে নেওয়া যাক কী বলছেন তিনি?

Bagtui Massacre: 'শর্ট সার্কিট' না 'ভয়ঙ্কর খেলা'? অনুব্রতর তত্ত্বকে কীভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা?
চাপে অনব্রত মণ্ডল?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 22, 2022 | 5:20 PM

রামপুরহাট : রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে (Bagtui Massacre) যেন এক মৃত্যুপুরী। চারিদিকে মানুষ পোড়া গন্ধ। সোমবার রাতেই দুষ্কৃতীদের বোমাবাজিতে প্রাণ হারিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। শাসক দলের নেতা হিসেবে এলাকায় বেশ দাপটও ছিল তাঁর। তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পরই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বগটুই। একের পর এক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। দমকল বলছে, অন্তত ১০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। যদিও অনুব্রত মণ্ডল এখানেও রাজনৈতিক কোনও হিংসার কারণ দেখছেন না। তাঁর তত্ত্ব, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। যদিও এলাকার মানুষজনের চোখ মুখ অন্য কথা বলছে। এলাকা শুনশান। কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। যদি সত্যিই শর্ট সার্কিট হয়ে থাকে, তাহলে কীসের ভয়? এমনকী যে বাড়িতে আগুন লেগেছে, তার পাশের বাড়ির লোকেরাও কিছু বলতে চাইছেন না। কথা বললেই নাকি, “অসুবিধা আছে”। এদিকে অনুব্রত মণ্ডলের শর্ট সার্কিটের তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছে সিট। বগটুই গ্রামের পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া বাড়ি পরিদর্শনের পর সিটের তদন্তকারী অফিসার সঞ্জয় সিং সাফ জানিয়ে দেন, “বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিল।”

এখন যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া হয়, অনুব্রত মণ্ডল যে শর্ট সার্কিটের দাবিটি করছেন, সেটি ভুল নয়, তাহলে কি সত্যিই  শর্ট সার্কিটের থেকে এই ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? বিষয়টি নিয়ে TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক  অরিন্দম কুমার শীলের সঙ্গে। দীর্ঘ আট বছর ধরে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত অরিন্দম বাবু। দেখে নেওয়া যাক কী বলছেন তিনি? অনুব্রত বাবু যে তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন, তা বাস্তবে কি আদৌ সম্ভব?

 আগুন টেরই পেলেন না! অগ্নিদগ্ধ সাতজন কি এতটাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন?

রামপুরহাটের বাগটুই গ্রামের ওই বাড়িগুলি আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের বাড়ির মতোই। খোলামেলা বাড়ি। সামনে দালান। টিনের চাল। যদি সত্যিই শর্ট সার্কিটে আগুন লাগে, তাহলে কি সত্যিই এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা হতে পারে? একই বাড়িতে সাত জন পুড়ে মারা গিয়েছেন। অধ্যাপক অরিন্দম কুমার শীলের মতে, এক্ষেত্রে কোন সময় অগ্নি সংযোগ ঘটেছে, তা দেখতে হবে। যদি তাঁরা সেই সময় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকেন, তাহলে একটি সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন, যদি আগুন লেগে ঘর গরম হয়ে ওঠে, তখন তো মানুষ এমনিই জেগে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। যে কোনও একজনেরও যদি ঘুম ভাঙে, তাহলেও সে উঠে বাকিদের সতর্ক করবে। কোনও মানুষেরই এমন গভীর ঘুম হবে না, যে বাড়িতে আগুন লেগেছে, অথচ তিনি সেই বিষয়ে অবগত নন।

যখন মানুষ জেগে থাকেন বাড়িতে, তখনও শর্ট সার্কিট হলে একসঙ্গে সাত জন মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। একমাত্র যদি ওই সাতজনই একসঙ্গে কোনওকারণে গভীর ঘুমে চলে গিয়ে থাকেন, তাহলেই এমনটা হতে পারে। কিন্তু এটা ভীষণই অস্বাভাবিক। একই বাড়ির সাত জনই এমন গভীর ঘুমে চলে গিয়েছেন যে তাঁরা বুঝতেই পারেননি কখন আগুন লেগেছে, এটা খুবই অস্বাভাবিক।

খোলামেলা বাড়ি, আগুন ছড়ানোর সম্ভাবনা কতটা?

সাধারণত কোথাও কোনও বহুতলে বা কোনও কারখানায় যখন আগুন লাগে, তখন শুরুতেই দমকলের তরফে একটি প্রাথমিক অনুমান চলে আসে, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। কিন্তু গ্রামের ক্ষেত্রে, বাড়িগুলি অনেকটাই খোলামেলা। শহরের মতো এমন বদ্ধ নয়। শহরের ক্ষেত্রে ঘিঞ্জি এলাকা, একটি বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু গ্রামের খোলামেলা পরিবেশেও কি এমনটা সম্ভব? একের পর এক বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে?

অধ্যাপক অরিন্দম কুমার শীলের মতে, গ্রামের ক্ষেত্রে যদি খোলামেলা পরিবেশ হয়, তাহলে এমনটা সম্ভব নয়। একদমই সম্ভব নয়। গরমকালে অনেকসময় ওভারলোডিংয়ের কারণে শর্ট সার্কিট হয়। কিন্তু গ্রামের বাড়ি যেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বা তাদের মধ্যে যেমন ব্যবধান থাকে, তাতে একটি বাড়িতে বা একটি ঘরে আগুন লাগতে পারে। কিন্তু সেই আগুন ছড়িয়ে অন্য জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। একই বাড়িতে যদি সাতজন দগ্ধ হয়ে মারা যান, তার যথাযথ ফরেন্সিক তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ এটা খুবই অস্বাভাবিক। বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে মৃত্যু হয়েছে, এই কথা বলাটা এত সহজ নয়।

শর্ট সার্কিট হলে ফিউজ় উড়ে যাওয়ার কথা

তার উপর যদি শর্ট সার্কিট হয়ে থাকে, তাহলে একটি বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে যথেষ্ট সময় লাগার কথা। এ ক্ষেত্রে মানুষের সতর্ক হয়ে যাওয়ারই কথা। একটি বাড়িও যদি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তাহলে, তারও ধোঁয়া, তাপ, আলো, শব্দ – সে সব থেকেই মানুষের টের পাওয়ার কথা আগুন লেগেছে কোথাও একটা। সামান্য শর্ট সার্কিট থেকে এত বড় আগুন থাকার কথা নয়, যদি না কোনও দাহ্য পদার্থে বাড়ির ভিতরে ঠাসা থাকে। কিন্তু তার পরেও যদি খুব গভীর ঘুমে মানুষ আচ্ছন্ন না হয়ে থাকে, তাহলে ধোঁয়া, তাপ ও শ্বাসকষ্টে ঘুম ভেঙে যাওয়ার কথা।

যে বাড়িগুলি পুড়ে গিয়েছে, সেখানে দালান রয়েছে, উঠোন রয়েছে। পালানোর পথ যে ছিল না এমনটাও নয়। সেক্ষেত্রে শর্ট সার্কিটের যুক্তি খাঁটে না বলেই মত অধ্যাপক অরিন্দম কুমার শীলের। তাছাড়া প্রতিটি বাড়িতে একটি করে বেসিক ফিউজ থাকে। শর্ট সার্কিট হলে, সেই ফিউজ় উড়ে যাওয়ার কথা। ধরে নেওয়া যাক, সেই ফিউজ়ও ওড়েনি। তাহলেও সেই আগুন ছড়াতে সময় লাগবে। তারপর তাঁর জ্বললে, তার তীব্রতা কম হলেও গন্ধটা এমনই যে তাতে মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে।

আরও পড়ুন : Chhoto Angaria massacre: রামপুরহাটের ‘হত্যালীলা’ উস্কে দিচ্ছে দুই দশক আগের ছোট আঙারিয়ার নৃশংসতা, কী হয়েছিল সেদিন সন্ধ্যায়?