Mid Day Meal: ‘আর কত কোথা থেকে দেবো, খেতে বসলেই শুনতে হয় বাচ্চাদের!’ বলতে গিয়ে গলা ধরে এল হেড স্যরের, আগুন বাজারে মিড-ডে মিলের এখন কী হাল জানেন?

Mid Day Meal: সরকারিভাবে ১০০ গ্রাম চাল ও ৫.৪৫ টাকা দেওয়া হয় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য।  শিক্ষিকাদেরই কথায়,  সেখানে কোনও বিদ্যালয়ে ৩০ জন, কোনও বিদ্যালয়ে ৫০ জন, কোনও বিদ্যালয়ের ৬০ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকলে মিডডে মিলের হেঁসেল চালানো দুরহ হয়ে ওঠে।

Mid Day Meal: 'আর কত কোথা থেকে দেবো, খেতে বসলেই শুনতে হয় বাচ্চাদের!' বলতে গিয়ে গলা ধরে এল হেড স্যরের, আগুন বাজারে মিড-ডে মিলের এখন কী হাল জানেন?
মিড ডে মিলে পুষ্টিতে ঘাটতি Image Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 23, 2024 | 3:24 PM

আরামবাগ: বাজারে আগুন। কিন্তু বরাদ্দ বাড়েনি মিড ডে মিলের।  মিড ডে মিলের খরচ বাবদ ছাত্র প্রতি  ৫.৪৫ টাকা করে ধরা থাকে। সঙ্গে ১০০ গ্রাম চাল। কিন্তু এখন যেভাবে অগ্নিমূল্য বাজার, তাতে খুদেদের মুখে কী তুলে দেবেন, তা নিয়েই চিন্তায় মিড ডে মিলের রাঁধুনি থেকে শিক্ষিক সকলেই। বাজেট কম, তাই মেনুতে কাটছাঁট, অতঃপর পুষ্টিতে ঘাটতি! সপ্তাহে তিন দিন ডিম দেওয়ার কথা। সেই জায়গায় ডিম জুটছে মাত্র একদিন। সবজির দাম অগ্নিমূল্য হওয়ায় মিড ডে মিলের তরকারিতেও গোঁজামিল। বামুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রন্ধনশালার মতো রাজ্যের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতেও একই অবস্থা।

বিদ্যালয়ের রন্ধনশালায় ঢুকতে গিয়েই চোখে পড়ল সাপ্তাহিক খাদ্য তালিকার বোর্ড। সেই তালিকা অনুযায়ী, সোমবার খাদ্যতালিকায় রয়েছে ডিম, আলুর ঝোল, মঙ্গলবার সবজি ও সোয়াবিনের ঝোল, বুধবার ডিম ও মাছের আলুর ঝোল, বৃহস্পতিবার আলুপোস্ত ও ডাল, শুক্রবার  ডিম আলুর ঝোল, শনিবার, ডাল সবজি, সঙ্গে ফল। বোর্ডে জ্বলজ্বল করলেও মিড ডে মিলের পাতে মিলছে না ঠিক মতো ডিম, সবজি।  সাবিনা পারভিন নামে এক ছাত্রী বলল, “ডিম আগে তিন দিন হত, এখন এক দিন হয়। আর সোয়াবিন হয় মাঝেমধ্যে।” ডিম যে এখন সপ্তাহে একদিনই হয়, তা একবাক্যেই বলছে সাবিনার পাশে বসে থাকা বাচ্চারাও। অগ্নিমূল্যের বাজারে আসলে পুষ্টির টান পড়ছে মিড ডে মিলের পাতে।

বাচ্চারা সেভাবে বলতে পারল না, অভিভাবকরা যা বললেন, তা আরও ভয়ঙ্কর। একটা ডিমই নাকি মাঝেমধ্যে চার টুকরো করে দেওয়া হয়। অভিযোগ তেমনই।  রাজু মণ্ডল নামে এক অভিভাবক বললেন, “পুষ্টি মোটেই নয়। দু পিস আলু আর হলুদ গোলা জল। ওর থেকে বাড়িতে খাওয়া অনেক ভালো। ডিম তো আর কী বলব, ওই ডিমে যদি চারটে খাদি করা যায়, তাই যেন ভালো। আদৌ মিড ডে মিলে কোনও পুষ্টি নেই। ৫টাকা ৪৫ পয়সার তুলনায় যদি বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায়, সরকার সেটা নিয়ে ভাবতে পারে। ”

সরকারিভাবে ১০০ গ্রাম চাল ও ৫.৪৫ টাকা দেওয়া হয় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য।  শিক্ষিকদেরই কথায়,  সেখানে কোনও বিদ্যালয়ে ৩০ জন, কোনও বিদ্যালয়ে ৫০ জন, কোনও বিদ্যালয়ের ৬০ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকলে মিডডে মিলের হেঁসেল চালানো দুরহ হয়ে ওঠে। বাধ্য হয়েই সবজির পরিমাণও কমাতে হচ্ছে বিদ্যালয়গুলিকে। খাবারের গুণগত মানের সঙ্গেও সমঝোতা হচ্ছে বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরাও। এইভাবে তাঁরা কতদিন মিড ডে মিল চালানো সম্ভব হবে, সেটা নিয়েই চিন্তিত তাঁরা।

মিড ডে মিলের রাঁধুনি বলছেন, “ডিম আগে তিন দিন হত, এখন এত দাম সবের, এখন একদিন হচ্ছে। মাস্টারমশাই যেদিন যেমন আনতে পারেন, তেমনিই হয়।”

স্কুলের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ সিংয়ের কথায় উঠে এল বিপন্নতা। তিনি বললেন, “ছাত্রদের মাথা পিছু ১০০ গ্রাম করে চাল ও ৫.৪৫ টাকা করে পাই। যতজন ছাত্র থাকে, হিসাব করে এসএমএস করে পাঠিয়ে দিই। ওরা টাকা পাঠায়। টাকা সাধারণত আগেই পাঠায়। মাঝেমধ্যে একবারেও পাঠায়। আমরা হিসাব করে খরচ করতে থাকি।” কিন্তু বাজার তো আগুন, ম্যানেজ করছেন কীভাবে? বরাদ্দ তো বাড়েনি। হেড স্যর বললেন, “এখন দুটো তরকারি দেওয়া আর সম্ভব হয় না। এখন একটা তরকারি করতে হচ্ছে। আলুর পরিমাণ কমাতে হচ্ছে। এইভাবেই চালাতে হচ্ছে। আজ আমি ডিম এনেছি, ১৭৪ টাকা নিল ট্রে। পরীক্ষার সময়ে মাছ করি। কোনওমতে ম্যানেজ আরকী। বাচ্চারা তরকারি চাইলে আর দ্বিতীয়বার দেওয়া সম্ভব হয় না। বাচ্চারা চাইলে শুনতে হয়, আর কত কোথা থেকে দেবো, আর তো নেই! খেতে বসলেই এই কথা কানে আসে আমার। ভালো লাগে না মোটেও।”