স্রেফ ১২ ঘণ্টার বনধে রাজ্যের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চমকে দেওয়ার মতো

বাম জমানার শেষের দিকে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এক বার আক্ষেপের সুরে বলেই ফেলেছিলেন, "দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমি এমন একটা দলে আছি, যারা বনধ সমর্থন করে।"

স্রেফ ১২ ঘণ্টার বনধে রাজ্যের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চমকে দেওয়ার মতো
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Feb 13, 2021 | 12:02 AM

কলকাতা: ১২ ঘণ্টার বনধ (Bandh)। এমনিতে শোনাতে নিরীহ। কিন্তু, কর্মহীন এই ১২ ঘণ্টাই রাজ্যের কোষাগারে একটা বিরাট শূন্যস্থান তৈরি করতে যথেষ্ট। এমনটাই জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশ।

একটা সময় ছিল যখন পশ্চিমবঙ্গ মানেই ‘বনধের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ‘বাংলা বনধ’ (West Bengal Bandh), এই শব্দবন্ধ প্রতি এক মাস দু’মাসেই শুনতে পাওয়া যেত। তৎকালীন শাসক বামফ্রন্টই একাধিকবার হরতাল করেছে। বনধ ডাকায় কম যেত না বিরোধীরাও। বাম জমানার শেষের দিকে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এক বার আক্ষেপের সুরে বলেই ফেলেছিলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমি এমন একটা দলে আছি, যারা বনধ সমর্থন করে।”

একই ভাবে ক্ষমতায় আসার আগে প্রচুরবার বনধ ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই অবশ্য তিনি ধর্মঘটের প্রতি খড়গহস্ত। কর্মনাশা বনধ ব্যর্থ করার কোনও চেষ্টাই বাকি রাখেনি বর্তমান শাসকদল।

এ তো গেল রাজনীতির কথা। কিন্তু যাদের স্বার্থের দোহাই দিয়ে বনধ ডাকা হয়, সেই আমজনতার আখেরে লাভ কতটা? কর্মনাশা দিনে বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের রুটিরুজি যে মার খায় সেটা বোঝার জন্য চোখের সামনে কোনও পরিসংখ্যান তুলে ধরার দরকার নেই। তবে অর্থনীতির ক্ষতি কতটা গভীর সেটা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের ২০০৯ সালের তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে কোনও শিল্প সংক্রান্ত সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও সারা ভারতজুড়ে নষ্ট হয়েছে প্রায় ৬৮ লক্ষ ৩৫ হাজার শ্রমদিবস। তার মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ৫৮ লক্ষ ৫৪ হাজার শ্রমদিবস নষ্ট হয়।

ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে বামফ্রন্টের ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধে রাজ্যের রাজস্বের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা! ২০১১ সালের তথ্য বলছে, প্রতি ১২ ঘণ্টা বনধে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে বাম এবং বিজেপি-র ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা ক্ষতির আন্দাজ করেছিলেন আইসিসি-র তৎকালীন আধিকারিক।

আরও পড়ুন: ‘শুধু গরম জল নয়, ছোড়া হয় অ্যাসিডও’, সাঁইথিয়ায় কালীপুজোয় দগ্ধ বিজেপি কর্মীদের চাঞ্চল্যকর বয়ান

২০১১ সালের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর গড়ে ১০ টি বনধ হলে রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ পৌঁছে যায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকায়। যা উন্নয়ন খাতে বাংলার বাজেট বরাদ্দ এবং রাজস্ব ঘাটতির চেয়ে বহু গুণ বেশি।

তার পরে ১০ বছর কেটে গেছে। করোনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। প্রভাব পড়েছে দেশ ও রাজ্যে। চলতি অবস্থায় করোনা পরিস্থিতিতে শুধু গত এপ্রিলেই ৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছিল রাজ্যের। কাজ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। মাথায় হাত পড়েছিল খুচরো ব্যবসায়ীদের। এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। গতি পাচ্ছে বাজার। এমন সময়, ফের একটা ১২ ঘণ্টার ধাক্কা রাজ্যের কোষাগারে।

আরও পড়ুন: গ্রাম বাংলার অলিন্দে ‘পরিবর্তনের বার্তা’ পৌঁছে দিন, রাজ্য নেতৃত্বকে বলে গেলেন শাহ