‘সদাই ফকির পাঠশালায়’ ফি মাত্র ২ টাকা, দশকের পর দশক এভাবেই শিক্ষা দিচ্ছেন ‘গরিবের মাস্টারমশাই’

লকডাউনেও থেমে থাকেনি 'সদাই ফকিরের পাঠশালা'। পড়ুয়াদের যাদের মোবাইল আছে, লকডাউনের সময়েও তাদের পড়িয়েছেন ‘মাস্টারমশাই’

'সদাই ফকির পাঠশালায়' ফি মাত্র ২ টাকা, দশকের পর দশক এভাবেই শিক্ষা দিচ্ছেন 'গরিবের মাস্টারমশাই'
অলঙ্করণ : অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: Jan 26, 2021 | 11:35 PM

পূর্ব বর্ধমান : আউশগ্রামের ‘উদয়ন পণ্ডিত’ তিনি। দীর্ঘ ৫৮ বছরের শিক্ষকতার জীবন তাঁর। তিনি সুজিত চট্টোপাধ্যায়। সদ্যই পদ্মশ্রীতে (Padma Shri) সম্মানিত হয়েছেন ৭৮ বছরের শিক্ষক। কারণ, তাঁর জন্যেই অনেক ঘরে ‘বর্ণপরিচয়’ ও ‘সহজ পাঠ’ -এ ‘অক্ষরজ্ঞান’ হয়।

গরিবের ‘মাস্টারমশাই’ সুজিতের ‘গুরুদক্ষিণা’ পড়ুয়া প্রতি বছরে একটাকা। গতবছর থেকে তাঁর এই ‘ফি’ বেড়ে হয়েছে দুটাকা আর চারটে ছোট চকোলেট। কেউ চাইলে তা নাও দিতে পারে। বিনামূল্যে, বিনা দ্বিধায় সকলকেই স্বাগত জানায় ‘সদাই ফকির পাঠশালা’।

রামনগর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সুজিতবাবু। প্রায় ৪০ বছর স্কুলে পড়ানোর পর অবসর নেন। এরপর, গত ১৮ বছর ধরে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের গরিব-দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের প্রাইভেট টিউশন দেন। নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পাশাপাশি প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদেরও পড়ান। বর্তমানে প্রায় ৩০০ জন তাঁর ছাত্র-ছাত্রী।

আরও পড়ুন :  ‘পদ্মশ্রী’ ধর্মনারায়ণকে আজ সব ফিরিয়ে দিল কামতাপুরি

লকডাউনেও থেমে থাকেনি ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’। পড়ুয়াদের যাদের মোবাইল আছে, লকডাউনের সময়েও তাদের পড়িয়েছেন ‘মাস্টারমশাই’। এই কঠিন সময়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন সুজিতবাবু। কর্মহীন আড়াইশো পরিবারের হাতে চার দফায় তুলে দিয়েছেন ৭৫ হাজার টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। গ্রামের ৭ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর পাশেও দাঁড়িয়েছেন সুজিত।প্রতিবছর তাদের হাতে তুলে দেন ৫ হাজার করে টাকা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কর্মকাণ্ডের সবটাই চলে ‘মাস্টারমশাই’য়ের পেনশনের টাকায়।

আরও পড়ুন : পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, ৭ বাঙালির নাম পদ্মশ্রী প্রাপকের তালিকায়

পদ্মশ্রী(Padma Shri) পাওয়ার পর এ হেন জনপ্রিয় গরিবের ‘মাস্টারমশাই’ বললেন, ‘সোমবার বিকেলে ফোন আসে। ভাবতেও পারিনি। আমি সামান্য এক জন মাস্টারমশাই। গরিব ঘরের বাচ্চাদের পড়াই। ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি। আমি খুব খুশি।’

সুজিতবাবুদের যৌথ পরিবার। সংসারে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা রয়েছেন। সুজিতবাবুর একমাত্র ছেলে কালনায় এসডিও অফিসে কর্মরত। বিয়ের পর মেয়ে ধানবাদে। নাতি-নাতনিদের পড়াশোনাও সুজিতবাবুর দায়িত্ব।স্ত্রী শয্যাশায়ী।চলছে চিকিৎসা। শত বাধার মধ্যেও নীরবে ‘ছাত্রদের ছাতা’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সুজিত বাবু। অঙ্গীকার, এভাবেই থাকবেন তিনি।