ফোন কানে, এক ব্যক্তিকে পরপর তিনবার কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ় দিলেন নার্স!

COVID19 Vaccination:

ফোন কানে, এক ব্যক্তিকে পরপর তিনবার কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ় দিলেন নার্স!
পরিতোষ রায়, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 03, 2021 | 3:28 PM

জলপাইগুড়ি: টিকা নিয়ে দুর্ভোগের নানা ছবি ইতিমধ্যেই এসেছে। এমনকী, প্রথমে এক সংস্থার ডোজ়, পরে আরেক সংস্থার ডোজ় পেয়েছেন টিকাপ্রাপক এমন  ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু, একই দেহে তিনবার কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ়! এমনই ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠল নাগরাকাটার ধূমপাড়ার একটি স্বাস্থ্য়কেন্দ্রে। বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবকের অভিযোগ, টিকা নিতে গিয়ে এ হেন মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। পরপর তিনটি ডোজ় নেওয়ায় পরিতোষ রায় নামে ওই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পেশায় মিস্ত্রী পরিতোষকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ধূমপাড়ার প্রাথমিক স্বাস্থ্য়কেন্দ্রে। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিতোষকে ভর্তি করা হয় মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চিকিত্‍সাধীন ওই ব্যক্তি।

ঠিক কী অভিযোগ পরিতোষের? তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার যখন আমি টিকা নিতে যাই, তখন যে নার্সরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা প্রথমে টিকা দিয়ে দেন। তাঁরা গল্প করছিলেন। আমি উঠে আসতে গেলে আমায় ফের বসিয়ে দিয়ে আমায় ওই নার্সেরা আবার টিকা দেন। তাঁদের এক হাতে ফোন ছিল। ফোন রেখে তারপর টিকা দিলেন। এইভাবে তিনবার টিকা দেন। ওঁরা শুনলেনই না আমার কথা!  যখন আমি বলি যে তিনবার টিকা দেওয়া হয়েছে, তখন একটু অবাক হয়ে দেখার পর বললেন, ‘পাগলের মতো কথা বলবেন না।’ তারপর আমায় বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, খুব অসুবিধা হলে জানাতে, তখন ব্যবস্থা করা হবে।”

ঘটনায়,  মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার সুরজিত্‍ সেন বলেন, “আমি ওই রোগীকে দেখে এসেছি। ওঁর হালকা জ্বর রয়েছে। তবে বিশেষ কোনও ক্ষতি হয়নি। মোটামুটি স্থিতিশীল তিনি। আর যে নার্স টিকা দিয়েছিলেন তাঁদের পাওয়া যায়নি। তবে খোঁজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে ওই টিকাপ্রাপক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

তবে টিকা নিয়ে সমস্যা এই প্রথম নয়। গতকালই, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ শহরের শ্রীকলোনির বাসিন্দা আভা বসাক পরপর দুবার কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ় দেওয়ার অভিযোগ করেন। কালিয়াগঞ্জের ওই  স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগ, গত ৩ জুন প্রথমবার করোনার টিকা নেন তিনি। প্রথম ডোজ় নেওয়ার পর যে সার্টিফিকেট তিনি পান, সেখানে স্পষ্ট লেখা কোভিশিল্ড দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ২৬ অগস্ট থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁর দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার কথা। সেই মতো ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ডোজ় নিতে যান তিনি। এদিকে টিকা নেওয়ার পরই তাঁর কাছে যে সার্টিফিকেট যায়, সেখানে লেখা ছিল কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ় তিনি সফল ভাবে নিয়েছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় নিতে হবে তাঁকে। এই সার্টিফিকেট দেখে কপালে হাত পড়ে যায় ওই মহিলার। এরপরই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ তোলে তাঁর পরিবার।

তবে, বিতর্কের শেষ এখানেই নয়, ধুপগুড়ির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা নিতে  গিয়ে প্রায় ২৫ জনের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তোলপাড় রাজ্য। বানারহাটের সেই টিকাকেন্দ্রে পদপিষ্ট হওয়ার জেরে আহতরা এখনও চিকিত্সাধীন হাসপাতালে। আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য তথা ধূপগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক মিতালী রায়। ঘটনায়, ইতিমধ্যেই ধূপগুড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং বানারহাটের বিডিও-কে শোকজ করা হয়েছে জেলা শাসকের তরফে। কী ভাবে এত বড় ঘটনা ঘটল, কেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে সচেতন করা হয়নি, তা সবই জানতে চাওয়া হয়েছে শোকজে।

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলার নতুন ব্লক বানারহাটের শালবাড়ি ১, শালবাড়ি ২ এবং সাকোয়াঝোরা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে টিকা কেন্দ্রের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকটি টিকাকেন্দ্রে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে শালবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরামারিতে। সব মিলিয়ে প্রবল হুড়োহুড়িতে পদস্পিষ্ট হন মোট ২৯ জন। এঁদের মধ্যে ৮ জন মারাত্মক আহত হন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন এক পুলিশ অফিসার।  আরও পড়ুন: গাড়ির চালকের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’, আদালতে আত্মসমর্পণ বিজেপি বিধায়ক চন্দনার