Police: ট্রাফিক পুলিশকে নিগ্রহ কনস্টেবলের, আন্তঃবিভাগীয় তদন্তে ধূপগুড়ি পুলিশ

Jalpaiguri: রবিবার ধূপগুড়ি থানার অন্তর্গত এলাকায় মোটর বাইক চেকিং চলছিল। সেইসময় থানার এক কনস্টেবল হেলমেট ছাড়াই বাইক নিয়ে আসছিলেন। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক অফিসার অন্যান্যদের মতো তাঁকেও আটকান।

Police:  ট্রাফিক পুলিশকে নিগ্রহ কনস্টেবলের, আন্তঃবিভাগীয় তদন্তে ধূপগুড়ি পুলিশ
ওসি ও কনস্টেবলের এমন হাতাহাতির ঘটনায় বিস্মিত পুলিশ কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 16, 2021 | 5:23 PM

জলপাইগুড়ি:  একজন আইন রক্ষাকারী যখন আইন ভঙ্গ করেন আবার দাপুটে অফিসার যখন তাঁকে আটকাতে চান, তখন যা হবার তাই হল। যার ফল, থানার ভিতরেই বিতণ্ডা থেকে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কিতে জড়ালেন পুলিশ অফিসার (Traffic Police) ও কনস্টেবল। ঘটনায় রীতিমতো অবাক থানায় থাকা পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়াররা। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ি থানায় (Dhoopguri Police Station)। এ বার সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হল আন্তঃবিভাগীয় তদন্ত।

সোমবার ধুপগুড়ি থানা চত্বরে ট্রাফিক আধিকারিককে হেনস্থা করার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে, জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপারের দফতরে ডেকে পাঠানো হল নিগৃহীত ট্রাফিক অফিসার, কনস্টেবল ও অন্যান্য় ৩০ জন হোমগার্ডকে। উপস্থিত ছিলেন ট্রাফিক পুলিশ আধিকারিক অভিজিত্‍ সিনহা ও জলপাইগুড়ি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালি। ঘটনায়, ট্রাফিক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “বিভাগের উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আশা করি যিনি দোষী তাঁর শাস্তি হবে।” তবে এর বেশি আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি, অন্য কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক।

জানা গিয়েছে, রবিবার ধূপগুড়ি থানার অন্তর্গত এলাকায় মোটর বাইক চেকিং চলছিল। সেইসময় থানার এক কনস্টেবল হেলমেট ছাড়াই বাইক নিয়ে আসছিলেন। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক অফিসার অন্যান্যদের মতো তাঁকেও আটকান। কনস্টেবলের বাইকের কাগজপত্র রেখে দেন তিনি। এবং বাকি কাগজপত্র নিয়ে তাঁকে ধূপগুড়ি ট্র্যাফিক অফিসে আসতে বলেন। কিন্তু সেই কনস্টেবল ট্র্যাফিক অফিসে না গিয়ে সোমবার গেলেন বাইক চেকিং পয়েন্টে। সেখানেই নিজের মোটর বাইকের কাগজপত্র ফেরত চান। এদিকে কর্তব্যরত অফিসার তা ফেরত দিতে অস্বীকার করলে শুরু হয় ঝামেলা। সেখান থেকে অফিসার ও কনস্টেবলের ধাক্কাধাক্কি হয় বলেও খবর।

ধূপগুড়ি ট্রাফিক ওসি অভিজিৎ সিনহাকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ওই কনস্টেবলকে ট্র্যাফিক অফিসে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই কনস্টেবল অফিসে এসেই ট্র্যাফিক ওসির সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দেন। এমনকি তাঁদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয় বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে ট্র্যাফিক অফিসের বাইরে থানায় থাকা সিভিক ও পুলিশ কর্মীদের ভিড় জমে যায়। রাস্তা থেকে সাধারণ মানুষ জড়ো হতে থাকেন ভিতরে কী চলছে জানতে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ধূপগুড়ি থানার আইসি দুজনকেই তার ঘরে ডেকে পাঠান। যদিও এব্যাপারে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

তবে ধূপগুড়ি থানার এক পুলিশ আধিকারিক তার ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, অনেক পুলিশ কর্মী আছেন যাঁরা হেলমেট পরেন না। এমনকি নিজেরাই ট্র্যাফিক আইন মানতে চান না। যার ফলে সাধারণ মানুষের সামনে বাইক চেকিংয়ের সময় তাঁরা গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। আইন তো সবার জন্য সমান। শুধুমাত্র পুলিশ হলে ছাড় মিলবে কেন? এই প্রশ্ন উঠে আসে সাধারণ মানুষের থেকে। আর বর্তমানে আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গী ও লিংকম্যানরা কনস্টেবল হওয়ার পর এই প্রবণতা আরও বেড়েছে।

এদিকে ধূপগুড়ি থানার ট্রাফিক ওসি অভিজিৎ সিনহা কড়া ধাতের অফিসার হিসেবেই পরিচিত। তিনি ডিউটিতে থাকাকালীন সবাইকে সমান চোখে দেখেন। ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে তাঁর কড়া অবস্থান কতিপয় মানুষের অপছন্দ হলেও তিনি সাধারণ মানুষের কাছে বেশ প্রিয়। এদিনের ঘটনাও সেই রকম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই কনস্টেবলকে তিনি ছাড় দিতে চাননি। আর কনস্টেবলও অফিসারকে মানতে চাননি।

উল্লেখ্য, এর আগেও ধূপগুড়ি থানায় অভিজিৎ সিনহা ট্র্যাফিক ওসি থাকাকালীন এক মদ্যপ কনস্টেবলকে রেয়াত করেননি। এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে থানা চত্বরে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক বলেন, “এরকম কড়া ধাতের অফিসার থাকার জন্য ধূপগুড়ির অনেকে বাধ্য হয়ে হেলমেট পরে। তাছাড়া এর আগে এই অফিসারকে থানার আইসির গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভারকে সিটবেল্ট না পরার জন্য গাড়ি আটকাতে দেখেছি। আজকেও হয়তো সেরকম কিছু হয়েছে। ঠিক আছে। কারণ, আইন সবার জন্য সমান। এরকম অফিসার দরকার”। যদিও এদিনকার ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন পুলিশ আধিকারিকরা।

আরও পড়ুন: Bomb Blast: চলছিল বহুতল নির্মাণের কাজ, আচমকা পায়ে হেঁটে এসে বোমাবাজি ৩ দুষ্কৃতীর!