University of Gour Banga: গৌড়বঙ্গের ‘ভূতুড়ে’ ভবনে ৯৯ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকার WiFi? নয়া দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় পার্থ ঘনিষ্ঠ সংস্থার
Gour Banga University: ওয়ার্ক অর্ডারে দেখানো হয়েছিল হোস্টেলে দেওয়া হবে ওয়াইফাই পরিষেবা। তবে এখনও পর্যন্ত সেই হোস্টেল চালুই হয়নি। তাহলে কোথায় বসল ইন্টারনেট কানেকশন?
মালদা: ওয়াইফাই বসাতে কোটি টাকা! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। ওয়াইফাই বসাতে খরচ হয়েছে কোটি টাকার। আর এতে নাম জড়িয়েছে মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে টাকা তো খরচ হয়েছে। কিন্তু আদৌ বসেছে ওয়াইফাই? উত্তর না! তবে কোথায় গেল সেই টাকা? শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্তদন্ত।
নিয়োগ, বদলির পর এবার ওয়াইফাই (Wi-Fi) দুর্নীতি। আর কোটি টাকার এই দুর্নীতিতে নাম জড়ালো মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ২০১৯ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এক নেত্রীর পরিচিত ঠিকাদার সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল ওয়াইফাই-এর অর্ডার। আর সেই খরচ শুনলে চোখ উঠবে কপালে! ৯৯ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা! অভিযোগ এখানেই শেষ নয়, যে ভবনের অস্তিত্বই ছিল না, সেই ভবনেই ওয়াইফাই লাগাতে এত টাকার খরচ কীভাবে করা হল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এ দিকে, পড়ুয়ারাও অভিযোগ করছেন ওয়াইফাই চালু না হওয়ার। যদিও, গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে বিশ্ব বিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিল।
এত টাকা গেল কোথায়?
জানা গিয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর ঘনিষ্ঠ কোনও এক তৃণমূল নেত্রীর পরিচিত ঠিকাদার সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওয়াইফাই লাগানোর জন্য। ২০১৯ সালের সেই ওয়ার্ক অর্ডার হাতে এসেছে টিভি ৯ বাংলার। ওয়ার্ক অর্ডারে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১ কোটি টাকা অর্থাৎ ৯৯ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা শুধুমাত্র ওয়াইফাই-এর খরচ। পাশাপাশি যে ভবনগুলিতে ওয়াইফাই বসার কথা সেগুলির কোনও অস্তিত্ব নেই।
‘ভূতুড়ে ‘হোস্টেলে ওয়াইফাই নিয়ে প্রশ্ন
ওয়ার্ক অর্ডারে দেখানো হয়েছিল হোস্টেলে দেওয়া হবে ওয়াইফাই পরিষেবা। তবে এখনও পর্যন্ত সেই হোস্টেল চালুই হয়নি। তাহলে কোথায় বসল ইন্টারনেট কানেকশন?
শুধু হোস্টেল নয়, কলা বিভাগেরও বেশ কয়েকটি ভবন যার কোনও অস্তিত্ব নেই, সেখানেও ওয়াইফাই বসানো হবে বলে জানানো হয়।
অভিযোগ, দুর্নীতি সামনে আসতেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের কয়েকজন শিক্ষক। অভিযোগ, তখন তাঁদেরও চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
ভিসি শান্তি ছেত্রী বলেন, ‘এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের তরফে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। ওয়াইফাই নিয়ে যদি কিছু অভিযোগ থেকে থাকে সেটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তারা খতিয়ে দেখবেন। আমার কাছে এখনও সেই কমিটির রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি।’
কী বলছেন পড়ুয়ারা ও অন্যান্য মহল?
গৌড়বঙ্গের এক পড়ুয়ার দাবি, ‘আমরা কোনওদিনই ওয়াইফাই পাইনি। নিজের মোবাইট ডাটা ব্যবহার করে নেট করি।’
এই বিষয়ে প্রাক্তন ইসি সদস্য শক্তিপদ পাত্র বলেন, ‘যদি বারে-বারে জালিয়াতি হয়, অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মতো আমিও দাবি করব এর শাস্তি হোক। এই বর্তমান পরিস্থিতিতে কথা বলাটুকুতেও অনিহা এসে গেছে।’
শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, ‘বর্তমানে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ওয়াইফাই একটি জরুরি পরিষেবা। আমার অবাক লাগছে, সরকারি কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের কোনও ওয়াইফাই বসাতে হলে সরকারি ব্যবস্থায় একটি পদ্ধতি মেনে কোনও সংস্থাকে টেন্ডার হবে। এরপর ফিন্যান্সের নিয়মানুযায়ী কত টাকার ট্রানজাকশন হবে তার উপর নির্ভর করবে ই-টেন্ডার হবে নাকি সাধারণ টেন্ডার হবে। অর্থাৎ একটি পদ্ধতি মেনে এই ট্রানজাকশন হয়ে থাকে। ওয়াইফাই বসানো হবে বলে একটি প্রজেক্ট তৈরি করা হচ্ছে। অথচ বসানোই হল না। তাহলে বিশ্ব বিদ্যালয়ের দায়িত্ব ছিল গোটা বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার।’
অপরদিকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। এই সব দুর্নীতির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য,
এর আগে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় উঠেছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্যের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু কর্তাদের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠল।কোভিড মহামারির সময় রাজ্যের স্কুল কলেজ বন্ধ থাকাকালীন প্রায় ২১ কোটি টাকা দিয়ে এক বেসরকারি সংস্থাকে স্টুডেন্ট লাইফ সাইকেল নামে একটি প্রকল্পের বরাত দেয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। ওই প্রকল্পেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকী এখানেও জুড়ে গেল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এক অধ্যাপিকার নাম।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের রেজিস্ট্রেশন, মার্কশিট, অ্যাডমিট কার্ড তৈরি করার বরাত দেওয়া হয় এক বেসরকারি সংস্থাকে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ৩ বছরের চুক্তি হয়। এর আগে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে এ কাজ নিজেই করত বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ, তিন বছর আগে ফিনান্স অফিসার বদল হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ২১ কোটি টাকা বরাত দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, নতুন ফিনান্স অফিসার নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালের এক অধ্যাপিকার ঘনিষ্ঠ। যিনি আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে সূত্রের খবর।