বিকট শব্দে ভাবেন ইনভার্টার ফেটেছে, বেরিয়ে দেখেন রক্তাক্ত বৃদ্ধার গায়ে ডিম লাগাচ্ছেন অনেকে…
Murshidabad: ধোঁয়া কাটিয়ে এগিয়ে যেতেই গ্রামবাসীদের চোখে পড়ে পাশের বাড়ির প্রবীরের বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ভিতরে কাতরাচ্ছেন তাঁর মা।
মুর্শিদাবাদ: ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আটটা! অনেকে টিভি দেখছিলেন বাড়িতে, কেউবা রাতের রান্না সারছিলেন। আচমকাই একটা বুক কাঁপানো শব্দ, রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান আপাত শান্ত গ্রামের বাসিন্দারা। বোমা পড়েছে, আঁচ করতে পারেন তাঁরা। ভয়ে বেশ কিছুক্ষণ ঘরের বাইরে বেরোননি কেউই। তারপর ভেসে আসে গোঙানির আওয়াজ। সম্বিত্ ফেরে তাঁদের। ঘর থেকে বেরোতেই ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করতে থাকে তাঁদের। চারদিক তখন অন্ধকার। ধোঁয়া কাটিয়ে এগিয়ে যেতেই গ্রামবাসীদের চোখে পড়ে পাশের বাড়ির প্রবীরের বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ভিতরে কাতরাচ্ছেন তাঁর মা। মর্মান্তিক ঘটনা মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের বানজেটিয়া বেলতলা গ্রামে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর মণ্ডল। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। যে বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে কেবল তাঁর মা থাকেন। ছেলে-বউ নিয়ে গ্রামেই অন্য বাড়িতে থাকেন প্রবীর। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার রাতে আচমকা গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বেরিয়ে দেখা যায় চারদিক কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। প্রবীরের বাড়ি ভেঙে পড়েছে, উড়ে গিয়েছে ছাদ। তাঁর ভিতরেই রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছিলেন তাঁর মা।
প্রবীরের বাড়ি তখন ধ্বংসস্তূপ। ভেঙে পড়েছে কাঠ, ছাউনি। সব সরিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। তাঁর হাতে, পায়ে গভীর ক্ষত। মাথা-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কোনওক্রমে তাঁকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “প্রচণ্ড একটা আওয়াজ শুনি। ঘর থেকে বাইরে এসে দেখি সব্বাই ছুটোছুটি করছে। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, ইনভারটার ফেটেছে। পরে দেখি প্রবীরের মাকে সবাই টেনে বার করছে।”
অন্য আরেক ব্যক্তির কথায়, “আমার বাড়ি রাস্তার ওপাশে। বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। দেখি প্রবীরের মায়ের হাতে-পায়ে বিশাল ক্ষত। লোকে ডিম লাগাচ্ছে। বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে ওদের। সবাই বলছিল বোম চার্জ হয়েছে।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই বাড়িতে বোমা মজুত ছিল। সেই বোমাই বিস্ফোরণ হয়েছে। তা না হলে বোমাবাজিতে কোনও বাড়িতে এমন ক্ষতি হয় না। ওই বাড়িতে আরও বোমা মজুত ছিল বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
আহত বৃদ্ধার আরেক ছেল প্রফুল্ল মণ্ডলের কথায়, “মা একা থাকত। সবাই বলছে বোমাবাজি হয়েছে। মায়ের ঘরে কীভাবে বোমা এল, তা বুঝতে পারছি না। তবে বোমা কেউ না কেউ রেখে গিয়েছে। ভাই তৃণমূল করে। তবে বোমা কে এনে রাখল ভাই এনে রাখল, নাকি ভাইয়ের কোনও লোক এনে রাখল, কী করে বলব বলুন!”
আহত বৃদ্ধা এখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। পুলিশ এলাকা ঘিরে রেখেছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে ভয় দূর করার চেষ্টা করছে। বৃদ্ধার ছেলের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ। মজুত করা বোমাই ফেটেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও পড়ুন: তৃণমূলের নিশানায় শুভেন্দু, বক্স বাজিয়ে ‘গদ্দার’ স্লোগানে উত্তাল রাজ্যসড়ক!