TMC in Nadia: মূল তৃণমূল বনাম যুব তৃণমূল, দুই মাথার দ্বন্দ্বের কারণেই কি শোরগোল চাকদায়?
TMC: তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হওয়ার সুবাদে বিজেপি থেকে দলে ফেরা তাঁর ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলে বর্তমান নেতৃত্বের একাংশ।
চাকদা : ২০১৩ সালে তৃণমূলের দখলে যায় চাকদা পুরসভা। পৌরপতি হন দীপক চক্রবর্তী। পরবর্তীকালে ২০১৪ সালে চাকদা বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক নরেশ চাকির মৃত্যু হয়। সেই সময় উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন রত্না ঘোষ কর। তারপর দুই বছর রত্না ঘোষ কর নির্বাচিত বিধায়ক থাকেন। রত্না ঘোষ করের বাড়ি হরিণঘাটা বিধানসভা এলাকায়। তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর চাকদা এলাকায় তাঁর বেশকিছু অনুগামী তৈরি হয়। সেই সময় চাকদা পুরসভার পৌরপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন দীপক চক্রবর্তী। শোনা যায়, এলাকার বিভিন্ন কাজের নিয়ে সেই সময় থেকেই শুরু হয় বিধায়ক ও চেয়ারম্যানের গোষ্ঠীর ‘গুপ্ত’ লড়াই।
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন রত্না ঘোষ কর এবং তিনি রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্পের প্রতিমন্ত্রী হন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন চাকদার শংকর সিংহ। এরপর ২০১৮ সালে চাকদা পুরসভার পৌর বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে আর নির্বাচন না হয়ে প্রশাসক বোর্ড গঠন হয়। সেই প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব পান কল্যাণীর মহকুমা শাসক এবং রত্না ঘোষ কর। এরপর চেয়ারম্যান গোষ্ঠী এবং বিধায়ক গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব তৈরি হয় বলে স্থানীয় সূত্র মারফত জানা যায়। পরবর্তীকালে প্রাক্তন চেয়ারম্যান দীপক চক্রবর্তী বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।
এরপর ২০১৮ সালে নদিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব পান শংকর সিংহ। তারপর থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একাধিকবার প্রকাশ্যে আসে। সূত্রের খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে শংকর সিংহকে সরিয়ে গত নির্বাচন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের নদিয়া জেলার সভানেত্রী করা হয় মহুয়া মৈত্রকে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চাকদা বিধানসভা কেন্দ্রে রত্না ঘোষের বদলে তৃণমূলের প্রার্থী হন শংকর সিংহের পুত্র শুভংকর সিংহ ওরফে যিশু। যদিও সে নির্বাচনে পরাজিত হন শুভঙ্কর সিংহ। অভিযোগ ওঠে, ওই সময় রত্না ঘোষের ঘনিষ্ঠ একাধিক তৃণমূল কর্মী বিজেপিতে যোগদান করে এবং পিছন থেকে ষড়যন্ত্র করে তৃণমূল প্রার্থীকে পরাজিত করেন।
সেই সময় রত্না ঘোষ করের ফোনের কথোপকথনের একটি অডিয়ো ক্লিপও ভাইরাল হয়। ওই ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপে তৃণমূলকে হারিয়ে দেওয়ার কথা ওঠে বলেও অভিযোগ। যদিও সেই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি TV9 বাংলা। এদিকে পৌর নির্বাচনের আগে তৃণমূলের রানাঘাট দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব পান রত্না ঘোষ কর ও জেলার যুব তৃণমূলের দায়িত্ব পান শুভঙ্কর সিংহ। পরবর্তী সময়ে পৌরসভা নির্বাচনে চাকদা পৌরসভা এলাকায় তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শুভঙ্কর সিংহ। অপর দিকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর রত্না ঘোষের ঘনিষ্ঠ ও অনুগামীরা আবার তৃণমূলের ঘরে ফেরে। তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হওয়ার সুবাদে বিজেপি থেকে দলে ফেরা তাঁর ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলে বর্তমান নেতৃত্বের একাংশ। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই দিন আগে রত্না ঘোষ করকে ঘিরে রানাঘাটের এক কর্মিসভায় বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকরা। সেই সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের একাংশও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি আরও অভিযোগ রয়েছে, যে মূল তৃণমূলের কোনও অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতে কখনও ডাকা হয় না যুব সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের। পাশাপাশি যারা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করছেন, তাঁরা আজ বঞ্চিত। অথচ যাঁরা একটা সময় বিজেপিকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এই বঞ্চনাও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ বলেই মনে করছেন জেলার রাজনীতির কারবারিরা।