Dengue in Baranagar: TV9 বাংলার খবরের জের! ডেঙ্গু দমন করতে বরানগরে ‘দুয়ারে’ পুরসভা

TV9 Bangla Impact: ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতি বছরই অন্যজেলাগুলিকে টক্কর দেয় উত্তর চব্বিশ পরগনা। এবছর, বিধাননগরে এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০৫। বিধাননগরে, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪২৫। দক্ষিণ দমদমে একসপ্তাহে ডেঙ্গু হয়েছে ২৮ জনের।

Dengue in Baranagar: TV9 বাংলার খবরের জের! ডেঙ্গু দমন করতে বরানগরে 'দুয়ারে' পুরসভা
বরানগর পুরসভা, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 29, 2021 | 5:45 PM

 উত্তর ২৪ পরগনা: TV9 বাংলার খবরের জের! অবশেষে এলাকায় ডেঙ্গু দমন করতে তত্‍পর পুরসভা। বরানগরে, ডেঙ্গু সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগে এবার বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচার শুরু করলেন পুরকর্মীরা। দিনভর চলল লিফলেট বিলি, মাইকিং। রাজ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে। চিন্তা ধরাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান। শীত পড়লেই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কথা, অন্তত এমনটাই দাবি করছেন চিকিত্‍সকেরা। কিন্তু সে গুড়ে বালি! করোনার মধ্যে ক্রমেই ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গু (Dengue)। বাড়ছে মৃত্যু। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। TV9 বাংলার লাগাতার খবরের জেরে অবশেষে পদক্ষেপ করল বরানগর পুরসভা।

সোমবার সকাল থেকেই, বরানগর পুরসভার ৩৪ টি ওয়ার্ডে পুরকর্মীদের বিশেষ টিম তৈরি করে পাঠানো হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, ওই বিশেষ টিমের সঙ্গে ভেক্টর কন্ট্রোল টিমকে সংযুক্ত করা হয়েছে। জমা জলে ভরা জায়গা বা পাত্র দেখলেই ওই টিমের সদস্যরা তা পরীক্ষা করবেন, সেগুলিতে ডেঙ্গুর লার্ভা রয়েছে কি না। যদি, ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যায়, তবে তত্‍ক্ষণাত্‍ ওই এলাকাটিকে চিহ্নিত করা হবে ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

এখানেই শেষ নয়, সর্বত্রই স্প্রে করা হচ্ছে মশা মারার তেল। যে বাড়িগুলিতে জঞ্জাল হয়ে রয়েছে, সেই বাড়িতে পুরসভার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে নোটিসও। পাশাপাশি, এলাকাবাসীর হাতে হাতে লিফলেট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলছে মাইকিং করে সচেতনতা প্রচার। লাগানো হয়েছে ফ্লেক্সও। ডেঙ্গু যাতে আর বরানগর পুরএলাকায় না বাড়তে পারে সেদিকে বিশেষ তত্‍পর প্রশাসন।

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতি বছরই অন্যজেলাগুলিকে টক্কর দেয় উত্তর চব্বিশ পরগনা। এবছর, বিধাননগরে এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০৫। বিধাননগরে, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪২৫। দক্ষিণ দমদমে একসপ্তাহে ডেঙ্গু হয়েছে ২৮ জনের। এবছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৩৮। গত সাতদিনে কামারহাটি পুরএলাকায় ডেঙ্গু হয়েছে ১৭ জনের। এবছর আক্রান্ত ১২৮। বরানগর পুরসভায় এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৬। চলতি বছরে আক্রান্ত ১১৮ জন। পানিহাটিতে এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০ জন। পানিহাটিতে, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩২। পুর এলাকাগুলির বাইরেও উত্তর চব্বিশ পরগনায় রাজারহাট, ব্যারাকপুরের গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গুর বাড়াবাড়ি।

স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে কলকাতা। একসপ্তাহে আক্রান্ত ২৭৯। উত্তর চব্বিশ পরগনায় একসপ্তাহে আক্রান্ত ২৫৬। হাওড়ায় একসপ্তাহে ডেঙ্গু হয়েছে, ৯৬ জনের। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় একসপ্তাহে আক্রান্ত ৭০ জন। দার্জিলিঙে গত সাতদিনে ডেঙ্গু হয়েছে ২০ জনের।

এখানেই শেষ নয়, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর বলছে, গত  ১৭ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত,  চলতি বছরে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত ৫৭৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।  গত বছর এই একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৪৪২৪ জন।  গত ৭ দিনে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৮২৭। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৬ জনের। আরও ২০ জনের মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু বলে মনে করা হচ্ছে। ডেঙ্গু থেকে মৃত্যু কি না তা খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য দফতরের ডেথ অডিট কমিটি।

কেন এভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু? কেনই বা সংক্রমণ কমে যাওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না? সূত্রের খবর, ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত দেখে পুরসভা  এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে,  একটি বিশেষ টিম তৈরির কথা ছিল।  সেই বিশেষ প্রতিনিধিদলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করার কথাও ছিল। কিন্তু স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমন কোনও কিছুই প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এলাকায় নর্দমা পরিষ্কার হয় না। যত্রতত্র পড়ে থাকে আবর্জনা। তাতে জলও জমে। গ্রামের দিকে অবস্থা আরও খারাপ। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গু নিয়ে কোনও সচেতনতা কাজ করছে না।

স্থানীয় এক এলাকাবাসীর কথায়, “এখনও অবধি কোনও  সার্ভে করা হয়নি। বৃষ্টিতে এলাকায় জল জমেছিল। তারপর থেকে সেই জল পরিষ্কার করার জন্যও কোনও লোক আসেনি। ঘরে ঘরে লোকে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রশাসন কোনও উদ্য়োগ নিচ্ছে না। এর বিহিত না হলে আমরা থাকতে পারব না।” এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, নালাগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থা নেই। ফলে জলেই জন্মাচ্ছে ঘাতক ডেঙ্গুর জীবাণু।

এদিকে, চিকিত্‍সকমহলের একাংশের দাবি, ডেঙ্গু পরীক্ষায় বিস্তর গরমিল রয়েছে। রেলের প্রাক্তন সিএমএস কর্তা ডি. সরকার বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে একটা প্রহসন চলছে। একটা পরীক্ষা করতে দিলে কমপক্ষে আট থেকে ১০ দিন সময় লাগার কথা। সেই সময়টা কেউ দিতেও রাজি নয়, কেউ নিতেও রাজি নয়। কারণ এত বেশি ল্যাবরেটরি হয়ে গিয়েছে, যে সেই ল্যাবরেটরিগুলি আদৌ কী রিপোর্ট দিচ্ছে, কী  দিচ্ছে না, কী করছে আসলে!”

অন্য আরেক চিকিত্‍সকের দাবি, ডেঙ্গু ও করোনা সাধারণ মানুষ গুলিয়ে ফেলেছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে  কিছু বোঝার আগেই করোনার জন্য যা যা করণীয় সেসব বিধি পালন করছে। পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেকেই। ফলে ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কারণ, ডেঙ্গু ও করোনার চিকিত্‍সা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা।

ডেঙ্গুর এই সংখ্যাবৃদ্ধি ক্রমেই চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনের। যদিও, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ডেঙ্গু এখন হচ্ছে ঠিকই। তবে সেই সংখ্যাটা এখনও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়নি। সকলে সাবধানে নিয়ম মেনে থাকলেই ডেঙ্গু ছড়াবে না।” অভিযোগ উঠছে,  করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হতেই ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন। তবে TV9 বাংলার লাগাতার খবরের জেরে অবশেষে ডেঙ্গু দমনে তত্‍পর হয়েছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন: Potato Cold Storage: একতরফা সিদ্ধান্তে ‘না’, হিমঘরে মজুত আলুর জন্য অতিরিক্ত মূল্য দিতে নারাজ ব্যবসায়ী সমিতি