Life Sentence: ১১ বছর পর সাজা ঘোষণা, জামুড়িয়ায় তৃণমূল নেতা খুনে সিপিএম কর্মীর যাবজ্জীবন
Life Sentence: ২০১১ সালে ৪ এপ্রিল বেলা বারোটার সময় জামুড়িয়া বিধানসভার বাড়ুল গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে যান তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তখন সেখানে সিপিএমের কর্মী অরবিন্দ ওরফে দীনু বাউরির নেতৃত্বে প্রার্থীর পথ আটকানো হয়।
আসানসোল: তৃণমূল নেতাকে গাড়ি চাপা দিয়ে খুন। জামুড়িয়ায় ওই ঘটনার ১১ বছর পর ঘোষণা হল সাজা। দোষীসাব্যস্ত সিপিএম কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (Life Sentence) দিল আসানসোল জেলা আদালত। দোষীসাব্যস্ত ব্যক্তির নাম অরবিন্দ বাউরি ওরফে দীনু বাউরি। এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবে বলে জানিয়েছে সিপিএম। অন্যদিকে, অভিযুক্তর সাজা হওয়ায় খুশি মৃত তৃণমূল নেতা রবীন কাজীর পরিবার।
রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদলের বছর ২০১১ সালে জামুড়িয়ায় শোরগোল ফেলে দিয়েছিল রবীন কাজী খুনের মামলা। ১১ বছর ধরে মামলা চলার পর তিনদিন আগে অরবিন্দ বাউরিকে দোষী সাব্যস্ত করে আসানসোল জেলা আদালত। বুধবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় দোষীসাব্যস্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন আসানসোল জেলা আদালতের বিচারক এডিজে (২) শরণ্যা সেন প্রসাদ। একইসঙ্গে সাজাপ্রাপ্তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেন। অনাদায়ে সাজার মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়বে বলে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিনয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায়।
সরকারি আইনজীবী বলেন, “এই মামলায় মোট অভিযুক্ত ছিলেন ২৪ জন। মামলা চলাকালীন ২ জন অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। প্রমাণের অভাবে ২১ জনকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে। এই মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষী দিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাকে অভিযুক্তদের তরফে আদালতে সাধারণ একটা পথ দুর্ঘটনা বলে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। যদিও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক মনে করেন, এটি খুনের ঘটনা।
২০১১ সালে ৪ এপ্রিল বেলা বারোটার সময় জামুড়িয়া বিধানসভার বাড়ুল গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে যান তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তখন সেখানে সিপিএমের কর্মী অরবিন্দ ওরফে দীনু বাউরির নেতৃত্বে প্রার্থীর পথ আটকানো হয়। যা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়। সেই খবর পেয়ে সেখানে আসেন তৃণমূলের তৎকালীন ব্লক সভাপতি তথা দলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা রবীন কাজী। অভিযোগ, সেই সময় লালচাঁদ বাউরি নামে সিপিএমের এক কর্মী রবীন কাজীর মাথায় মারেন। তাতে রবীন কাজী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন অরবিন্দ বাউরি একটি চারচাকা গাড়ি তাঁর উপর দিয়ে চালিয়ে পিষে দেন। গুরুতর জখম অবস্থায় তৃণমূল নেতাকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে আনা হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর রবীন কাজীর পরিবারের তরফে জামুড়িয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা করে৷ তদন্তে নেমে পুলিশ অরবিন্দ বাউরি ওরফে দীনু বাউরিকে গ্রেফতার করে। তাঁর সঙ্গে এই মামলায় আরও ২৩ জন অভিযুক্ত ছিলেন। সেই থেকে মামলা চলছিল। দীর্ঘ ১১ বছর পর বুধবার সেই মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে দীনু বাউরিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক।
এই রায়ে খুশি মৃত তৃণমূল নেতার পরিবারের সদস্যরা। এদিন চূড়ান্ত রায়ের সময় আসানসোল জেলা আদালতে রবীন কাজীর স্ত্রী হাজির ছিলেন। প্রসঙ্গত, ওই ঘটনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জামুড়িয়া এসেছিলেন। রবীন কাজীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
অন্যদিকে, আদালত থেকে বেরিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় দীনু বাউরি বলেন, “এটা অন্যায় হল। আর কিছু বলছি না।” এই মামলায় সাজা ঘোষণা নিয়ে সিপিএম নেতা মনোজ দত্ত বলেন, “আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।”