ফের জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াল ডিভিসি, দামোদরের নিম্ন উপত্যকায় আশঙ্কা প্লাবনের

Bengal Flood: ডিভিসির নির্দেশে রবিবার থেকে পাঞ্চেত ড্যাম ৪০ হাজার জল ছাড়া শুরু করে। নিয়ম মেনেই সেই জল যাবে দুর্গাপুর ব্যারাজে।

ফের জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াল ডিভিসি, দামোদরের নিম্ন উপত্যকায় আশঙ্কা প্লাবনের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 08, 2021 | 4:29 PM

পশ্চিমবঙ্গ: বঙ্গে প্লাবন পরিস্থিতিতে নেই স্বস্তি। শনিবার রাতে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের জেরে ফের জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াল ডিভিসি। রবিবার, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে একধাক্কায় ৪০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার নির্দেশ দেয় ডিভিসি। শনিবার পর্যন্ত মাইথন ও পাঞ্চেত ড্য়াম থেকে যৌথভাবে ২৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছিল। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া হচ্ছিল ৩৩ হাজার ১০০ কিউসেক জল। সেখানে ফের রবিবার বাড়ানো হল জল ছাড়ার পরিমাণ।

ডিভিসির নির্দেশে রবিবার থেকে পাঞ্চেত ড্যাম ৪০ হাজার জল ছাড়া শুরু করে। নিয়ম মেনেই সেই জল যাবে দুর্গাপুর ব্যারাজে। সেই জল ছাড়লেই ফের দামোদরের নিম্ন উপত্যকা বানভাসি হবে বলেই আশঙ্কা। এদিকে জল খানিকটা নামতেই দামোদরের পাড় জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। জলের তলায় একাধিক চাষের জমি-ক্ষেত।

নদিয়া: 

গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভাগীরথী নদীতে জলোচ্ছ্বাস বাড়ে। শান্তিপুরের ভাগীরথীর তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে যায়। ভাগীরথী নদীতে বিগত দিনে জল বাড়ার কারণে নদী তীরবর্তী এলাকার একাধিক চাষের জমি থেকে শুরু করে ভিটেমাটি জলের তলায়। গতকাল রাত থেকে আবারও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়াই নদী এসে পৌঁছল কালনা ঘাটে। জলমগ্ন বাসস্ট্যান্ড। রাস্তাতেই একরকম সংসার সাধারণের। জলমগ্ন দোকান-বাজারও। অন্যদিকে নদিয়ার বাদকুল্লা, কল্যাণী, রানাঘাট, নবদ্বীপ, চাকদহ-সহ একাধিক এলাকা ভাগীরথীর দৌলতে বানভাসি।

BENGAL FLOOD

রাস্তাতেই সংসার, নদিয়া, নিজস্ব চিত্র

বীরভূম:

বন্যায় বিপর্যস্ত লাভপুরও। জয়চন্দ্রপুর, চতুর্ভূজপুর, কান্দাকুলা গ্রামে জল যন্ত্রণা কমার কোনও লক্ষণ নেই। ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে। পথের সঙ্গী নৌকা! গত ২৩ জুলাই লাভপুকেক ঠিবা অঞ্চলের কান্দকুলা গ্রামে বাঁধ ভেঙে প্রায় ১০-১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। সেই বাঁধ এখনও মেরামতি হয়নি। এখনও চাষের জমি রাস্তা সব জলের তলায়।

হুগলি:

দুর্ভোগ কাটছে না হুগলিতে। আরামবাগ, খানাকুল, পুড়শুড়া ও গোঘাটে রাতভর নাগাড়ে বৃষ্টি। খানাকুল দু-নম্বর ব্লকের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রাম আগে থেকেই জলমগ্ন । ছাদে ত্রিপল টাঙিয়ে দিন কাটাচ্ছেন দুর্গতরা। টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। রূপনারায়ণ বাঁধ ভেঙে এখনও হু হু করে জল ঢুকছে খানাকুলের ধান্যঘরি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাত্রপাড়া ও মাইতি পাড়া এলাকায়। তবে নতুন করে খানাকুলে বন্যার জলস্তর বাড়েনি।

অতিবৃষ্টির জল-দুর্ভোগ থেকে একনও মুক্তি পায়নি তারকেশ্বরের বাসিন্দারা। বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। তারমধ্যে ভোর থেকে ফের শুরু হয়েছে একটানা বৃষ্টি। ফলে জল-যন্ত্রণা আরও বাড়ছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর:

খড়গপুরে জল-যন্ত্রণা নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে মেজাজ হারালেন দিলীপ ঘোষ। এমনকী রাগের মাথায় দলেরই মহিলা কর্মীকে পোস্টে বেঁধে মারার নিদানও দিয়ে বসলেন! আজ সকালে খড়গপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এক অসুস্থ বিজেপি কর্মীকে দেখতে যান দিলীপ। ওই ওয়ার্ডে জল জমার সমস্যা দীর্ঘদিনের। ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর বিজেপির-ই। তাই বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে দেখে পথ আটকান এলাকাবাসী। তখনই মেজাজ হারিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।

Dilip Ghosh alleges that no work is done by TMC after getting money from MP lad

খড়গপুরে দিলীপ ঘোষ (নিজস্ব ছবি)

অন্যদিকে, জল দুর্ভোগের পরেই আবর্জনার দূর্ভোগে শহরবাসী। ঘাটালের পুরনো বাস স্ট্যান্ড বানেশ্বর মন্দির চত্বর গম্ভীর নগর রথ তলা চত্বর ঘাটাল পৌরভবনের রাস্তার ধারেই স্তুপাকার করে রাখা রয়েছে আবর্জনা। ঘাটাল পৌরবাসীর অভিযোগ পৌরসভা কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। রাস্তাঘাট ভরে রয়েছে আবর্জনার তারই পাশ দিয়ে চলছে যাতায়াত। দুর্গন্ধে ভরে উঠেছে পৌর এলাকার, আবর্জনা থেকে ছড়াতে পারে রোগ সংক্রমণ বলে দাবি পৌরবাসীর। ঘাটাল পৌরসভার প্রশাসনিক বিভাস চন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন বন্যার কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঘাটাল পৌর এলাকায় আবর্জনা ফেলার জায়গায় জল রয়েছে তাই পৌর এলাকার আবর্জনা ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। বন্যার জল কমলেই দ্রুত আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হবে।

হাওড়া:

অবশেষে জল-যন্ত্রণা থেকে খানিক মুক্তি। আমতা, উদয়নারায়ণপুর থেকে ক্রমেই নামছে বন্যার জল। তবে কিছু এলাকা এখনও জলের তলায়। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে ত্রাণ শিবিরগুলিতে। ত্রাণের দাবিতে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এলাকাবাসীর। এমনকি আমতায় ত্রাণের দাবিতে পথ অবরোধ করে সাধারণ মানুষ।

BENGAL FLOOD 1

আমতায় জলযন্ত্রণা

প্রসঙ্গত, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সকাল ৯টার বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী ১-২ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি আসবে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও বৃষ্টি হবে। মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে বজ্রপাতের আশঙ্কাও। ঘূর্ণাবর্ত সরলেও বৃষ্টি কমার কোনও লক্ষণ নেই বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। বিক্ষিপ্তভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে। তবে এই বৃষ্টি ঘূর্ণাবর্তের জন্য নয়। গাঙ্গেয় জেলাগুলিতে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঢুকছে, আর তার জেরেই বৃষ্টিপাত হবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। আরও পড়ুন: অভিষেকের কাছে ‘মিথ্যা অভিযোগ’! ৭ প্রধানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হুমায়ুনের