অন্ধকার থাকতে কাজে যেতেন, সঙ্গে থাকত আরেক মহিলাও, ভালবাসার দিনে রাস্তায় মিশল দাম্পত্যের শেষ অধ্যায়

বিষ্টু ও ঝর্ণা স্বামী-স্ত্রী, চম্পা তাঁদের পরিবারেরই সদস্য। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী সরস্বতী। তাঁরা সকালে বাঁকুড়া মোড়ে যাচ্ছিলেন। চাষের জমিতে কাজ করেন তাঁরা।

অন্ধকার থাকতে কাজে যেতেন, সঙ্গে থাকত আরেক মহিলাও, ভালবাসার দিনে রাস্তায় মিশল দাম্পত্যের শেষ অধ্যায়
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 14, 2021 | 12:06 PM

বর্ধমান: কাজে যাওয়ার উদ্দেশে কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বাস ধরতে যাচ্ছিলেন স্ট্যান্ডে। পাশাপাশি তিন হাঁটছিলেন। আরও এক জন ছিলেন পিছনে। ভোরের রাস্তা সাধারণ ফাঁকাই থাকে। এদিনও ছিল। পিছন থেকে যে ডাম্পার আসছিল, তা ঠাওরও করতে পারেননি তাঁরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত গতিতে আসা একটা ডাম্পার পিষে দেয় চার জনকেই। ঘটনাস্থলেই মৃত্য়ু একই পরিবারের তিন সদস্যের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা (Road Accident) বর্ধমানের (Bardhaman) ২ নম্বর জাতীয় স়ড়কের আলিশা গ্রামে। মৃতদের নাম বিষ্টু রুইদাস, ঝর্ণা রুইদাস, চম্পা রুই ও সরস্বতী সেন।

বিষ্টু ও ঝর্ণা স্বামী-স্ত্রী, চম্পা তাঁদের পরিবারেরই সদস্য। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী সরস্বতী। তাঁরা সকালে বাঁকুড়া মোড়ে যাচ্ছিলেন। চাষের জমিতে কাজ করেন তাঁরা। প্রতিদিনই একসঙ্গে কাজে যান। এদিন ভোরেই বেরিয়েছিলেন। হাসপাতালে যাওয়ার পথে সরস্বতী জানিয়েছিলেন, তাঁরা রাস্তার ধার দিয়েই হাঁটছিলেন। তিনি কয়েক পা পিছনে ছিলেন। বাকিরা এগিয়ে। একটি ডাম্পার আচমকা একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে তাঁদের ধাক্কা মারে।

মৃতদের পরিবারে শোকের ছায়া

চাকায় জড়িয়ে যান তিন জনেরই দেহ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সরস্বতীকে হাসপাতালে নিয়ে যান সকালে জাতীয় সড়কের ধারের দোকানিরা। তাঁরা কিছুটা ঘটনার বিবরণ এমনই দেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সরস্বতীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরেই মৃত্যু বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পুলিশ ঘাতক ডাম্পারের খোঁজ শুরু করেছে। ভোরের জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব, কীভাবে এহেন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, তা নিয়ে ভাবছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন:  শরীরের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, মাথা কার্যত মিশেছে রাস্তায়, শিউরে উঠলেন হাইওয়ের ধারের দোকানিরা

আজ পোশাকি ভালোবাসার দিন। এই দিনে শেষ হল এক অভাবী দাম্পত্য, ভালবাসার গল্প। যাঁরা পেটের টানে ভোরের আলো ফোটার আগেই কাজে বেরোতেন, আর ফিরতেনও একইসঙ্গে। হাতে হাত রেখে। দু’হাত আজও এক ছিল। লড়াই শেষ হল জীবনের। ভালবাসার দিনেই একসঙ্গে পাড়ি দিলেন অন্ততের পথে।