ত্রিশঙ্কু হলে কোনদিকে ঝুঁকবে বামেরা! জল্পনা জিইয়ে কী বললেন সুজন
বিধানসভা দখলের লড়াই হবে ত্রিমুখী, প্রত্যয়ের সুর সূর্যকান্ত-সুজনদের গলায়।
পূর্ব বর্ধমান: আগামী বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট যে ‘ফ্যাক্টর’, সাধারণ মানুষের মনে তা গেঁথে দিতে জোড়া অস্ত্রে শান বামেদের। একদিকে ত্রিমুখী লড়াইয়ের তত্ত্ব, অন্যদিকে ‘ত্রিশঙ্কু’ প্রসঙ্গ। এ দিয়েই বোঝাতে চাইছে একুশের ভোটে ফের ‘ফ্যাক্টর’ হবে তারা। তবে নিজেদের গুরুত্ব বোঝানোর পাশাপাশি সত্যিই যদি ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হয় তা হলে বামেদের অবস্থান কী হবে তা নিয়েও কিন্তু জল্পনা শুরু হয়েছে। সে জল্পনা আরও খানিক উস্কে দিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী।
শনিবার পূর্ব বর্ধমানের এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বিজেপি বুঝে গিয়েছে তারা একা জিতবে না। তৃণমূলও বুঝে গিয়েছে তারা একা জিতবে না। তাই এবার বামেদের বাদ দিয়ে কেউ সরকার গড়তে পারবে না। সরকার গড়তে বামেদেরই দরকার।” অর্থাৎ ভোটের ফল যদি ত্রিশঙ্কু হয় সেক্ষেত্রে বিজেপি কিংবা তৃণমূল কোনও এক পক্ষের দিকে ঝুঁকতে পারে বামেরা। তেমনটা হলে কোন পক্ষ নেবে তারা সেটাই প্রশ্ন। কারণ, ভোটের যুদ্ধে তৃণমূল ও বিজেপি দু’পক্ষই তাদের বিরোধী।
এদিন মেমারির নতুন বাসস্ট্যাণ্ডে এক জনসভায় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলকে ঠেকানোর জন্য বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে আপনি যাদের কারণে তৃণমূলের উপর ক্ষুব্ধ তাদের হাত শক্ত করা। ৯০ ভাগ তৃণমূল হয়ে যাওয়া বিজেপিকে সমর্থন দেওয়ার কোনও মানেই নেই। বিজেপিকে ঠেকানোর জন্য যে তৃণমূলে নেতাকে আপনি ভোট দেবেন, ফল বেরোতেই দেখবেন উনি বিজেপির হয়ে গিয়েছেন।” যদিও সীতারাম ইয়েচুরির ত্রিশঙ্কু প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণ, কোনও কারণে এমনটা হলে তৃণমূলই বিজেপির দিকে ঝুঁকে যাবে। বাংলায় বিজেপির রমরমা তৃণমূলের জন্যই, দাবি তাঁর।
আরও পড়ুন: পথ দুর্ঘটনার কবলে বিজেপি সাংসদের গাড়ি, ভাঙল কাচ, অন্য কোনও ‘অভিসন্ধি’র গন্ধ
চলতি সপ্তাহেই আলিমুদ্দিনে বসে ইয়েচুরি জানান, বিকল্প হিসাবে মানুষ এবার বাম-কংগ্রেস জোটকেই বাছবে। কারণ, সকলেই তৃণমূল-বিজেপিকে বুঝে গিয়েছে। সীতারামের কাছে এই লড়াই তাই শুধু পরিবর্তনের লড়াই নয়, মানুষের অধিকারেরও লড়াই। আরও এক ধাপ এগিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন পাল্টে গিয়েছে। বিকল্প নীতির রূপায়ণে এবার রাজ্যে ভোটের লড়াই হবে। আর সে লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে বামপন্থী, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর একাধিকবার শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গিয়েছে ‘বাম কথা’। লক্ষ্মণ শেঠ তাঁর কাছে ‘হার্মাদ’ হলেও সব বাম নেতাই যে তেমনটা নন, সে কথা প্রকাশ্য জনসভায় বলেছেন শুভেন্দু। আগামী নির্বাচনে বাম-ভোটও প্রার্থনা করেছেন তিনি। অন্যদিকে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ও দাবি করেছিলেন, বামেরা যদি বিজেপিকে হারাতে চায়, তাদের উচিৎ তৃণমূলের পিছনে থাকা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীদের এই ‘আর্তি’ই মনোবল বাড়িয়েছে বামেদের। শনিবার সুজন চক্রবর্তী জানান, বিজেপি বুঝে গিয়েছে ওরা একা জিতবে না। তৃণমূলও জানে একা লড়ে জেতা ওদের পক্ষে কতটা কঠিন। তাই এবার বামেদের বাদ দিয়ে কেউ সরকার গড়তে পারবে না।