Panchayat Elections 2023: শুভেন্দুর জেলার দু’টি আসনে প্রার্থীই দিতে পারল না শাসকদল
Panchayat Elections 2023: সম্প্রতি কয়েকদিন আগে খবর প্রকাশ্যে আসার পর সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া দেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তরুণ কুমার মাইতি।
কাঁথি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ কার্যকর হল পূর্ব মেদিনীপুরে মারিশদায়। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি খেয়াল না থাকার কারণে দু’টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমে দুজন প্রার্থী’কে প্রতীক দিলেও পরে ওই দু’জন প্রার্থীকে প্রতীক প্রত্যাহার করল রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস। ফলত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জেলায় প্রার্থী নেই তৃণমূল!
গত বছর ডিসেম্বর মাসে কাঁথি কলেজ মাঠে সভা মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমুরানি মণ্ডল,উপপ্রধান রামকৃষ্ণ মণ্ডল ও অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি গৌতম মিশ্রকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তরুণ কুমার মাইতির পদত্যাগ পত্র তাঁর দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেন অভিষেক।
সেই মতো জেলা সভাপতি তরুণ কুমার মাইতি তিনজনের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে পাঠিয়ে দেন। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধান। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মনোনয়ন জমা দেন ঝুনুরানি মণ্ডল ও পঞ্চায়েত সমিতি থেকে মনোনয়ন জমা দেন গৌতম মিশ্র। দুজনের প্রার্থী তালিকা রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠিয়ে দেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বরা। বাকি দুটি কেন্দ্রে বিকল্প কোনও প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী তৃণমূলের দুই নেতৃত্বরা দেওয়াল লিখনও শুরু করে দেয়।
সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর সম্প্রচারিত হওয়ার পর এই ঘটনা হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ময়দানে মাঠে নেমে পড়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি ও সিপিএম। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর প্রত্যাহার নিয়ে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের বিরোধী দল সিপিএম ও বিজেপি।
সম্প্রতি কয়েকদিন আগে খবর প্রকাশ্যে আসার পর সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া দেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তরুণ কুমার মাইতি। তাঁর দাবি ছিল অঞ্চল ও ব্লক থেকে নাম উঠে এসেছিল। দুজন প্রার্থীর অনুমোদন সময়ের খেয়াল ছিল না। দু’ জনকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করার পরও প্রতীক না দেওয়া নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে বিজেপি।
কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের প্রার্থী চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস প্রথমে প্রতীক দিয়েছিল। দলের কোনও শৃঙ্খলা নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য কোনও গুরুত্ব না দিয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বরা দু’জনকে প্রার্থী করেছিল। বিরোধীদের সমালোচনা চাপে পড়ে লজ্জা ঢাকতে তাদের প্রতীক না দিতে বাধ্য হয়েছে। তৃণমূলের এখনও আর সংগঠন নেই। পুলিশ প্রশাসন ও গুণ্ডাদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। মানুষ ভিতরে ভিতরে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।”
সিপিএম নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন,”তৃণমূল প্রার্থী দিতে পারল না। প্রতীক দেওয়ার পরও রাতারাতি তৃণমূল কর্মী দিয়ে মুছে ফেলতে হল। আগামী দিনে মানুষ তৃণমূলকে মন থেকে মুছে ফেলবে। থেকে বড় লজ্জা কিছু হতে পারে না। কারণ শাসক দলকে প্রার্থী দিতে পারছে না।”
প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তরুণ কুমার মাইতিকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ করা হয়। তিনি কোনও উত্তর দেননি। তাই কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কাঁথি সাংগঠনিক জেলা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বেজ বলেন, “দুজনকে প্রতীক দেওয়া হল না। রাজ্য নেতৃত্বদের সিদ্ধান্ত”
বস্তুত, গত বছর ৩ ডিসেম্বর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির কলেজ মাঠে সভা করতে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিঘা নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে মারিশদা লোকাল বোর্ডে দাঁড়িয়ে পড়েন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামবাসীদের একাধিক অভিযোগের কথা শোনেন তিনি। গ্রামবাসীরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ করেন যে, তাঁরা আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি। রাস্তাঘাট এখনো মাটির রয়েছে। পানীয় জলের যথেষ্ট সংকট রয়েছে। এমনকী প্রধানের কাছে সার্টিফিকেট চাইতে গেলে বারে বারে ফেরানো হয়। শুধু তাই নয় একাধিক অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসীরা। এলাকাবাসীর কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়েই কাঁথির কলেজ মাঠে সভা মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমুরানি মণ্ডল, উপ প্রধান রামকৃষ্ণ মণ্ডল ও অঞ্চল সভাপতি গৌতম মিশ্রকে পদত্যাগ পাঠানোর নির্দেশ দেন। মঞ্চে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের কাঁথি সাংগঠনীক জেলা সভাপতি তরুণ কুমার মাইতিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।