Royal Bengal Tiger Sundarban: একটা লাঠি নিয়েই মরণপণ লড়াই! বাঘের গ্রাস থেকে স্বামীকে ছিনিয়ে আনলেন ‘বাঘিনী’ নমিতা

Royal Bengal Tiger Sundarban: চোখের সামনে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার টেনে নিয়ে যাচ্ছিল স্বামীকে। দেখে বিন্দুবিসর্গ ভাবেননি নমিতা। সম্বল একটা লাঠি। সাধারণত বাঘের ডেরায় যাঁরা যান কাঁকড়ার খোঁজে, তাঁদের হাতে থাকে এই একটাই অস্ত্র।

Royal Bengal Tiger Sundarban: একটা লাঠি নিয়েই মরণপণ লড়াই! বাঘের গ্রাস থেকে স্বামীকে ছিনিয়ে আনলেন 'বাঘিনী' নমিতা
সুন্দরবনের সেই 'বাঘিনী' নমিতা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 01, 2023 | 12:30 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ওঁরা ওত ‘নারীবাদী’, ‘ফেমিনিজম’, ‘অহং’ বা ‘স্বনির্ভরতা’ বোঝেন না। সামাজিক মাধ্যমে নারীর অধিকার রক্ষার্থে বড় বড় লেখনিরও মানে বোঝেন না। প্রত্যন্ত গ্রামের দেহাতি মানুষগুলোর কাছে এই শব্দগুলো বিলাসিতামাত্র। ওঁরা বোঝেন জীবনযুদ্ধের মানে। ওঁরা কেবল বোঝেন কীভাবে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। কীভাবে স্বামী-সন্তানকে বাঁচানোর স্বার্থে অসম লড়াইয়ে নামতে হয়। স্বামীকে বাঁচাতে তাই সুদূর পাথরপ্রতিমার সত্যদাসপুরের বছর পঁয়তাল্লিশের নমিতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঘের ঘাড়ে। সে এক অসম লড়াই…।

চোখের সামনে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার টেনে নিয়ে যাচ্ছিল স্বামীকে। দেখে বিন্দুবিসর্গ ভাবেননি নমিতা। সম্বল একটা লাঠি। সাধারণত বাঘের ডেরায় যাঁরা যান কাঁকড়ার খোঁজে, তাঁদের হাতে থাকে এই একটাই অস্ত্র। নমিতা সেই লাঠি হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঘের ওপর। একটা ১৭০-১৮০ কেজির বাঘ, আর উল্টোদিকে শীর্ণকায়, ছিপছিপে, ছেঁড়াফাটা শাড়ি পরিহিত এক মহিলা। লাঠি হাতে তিনি তখন ‘দেবী দুর্গা’। স্বামীর শরীরে তখন পড়েছে বাঘের থাবা। স্বামীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বাঘ। আর নমিতা লাঠি হাতে প্রতিরোধ গড়েছেন। নমিতা লড়েছেন। প্রাণের ভয় করেননি। শুধু তিনি লাঠি চালিয়েছেন এলো পাথাড়ি। বাঘের পিঠের পাঁজরে পড়েছে নমিতার লাঠির ঘা। আর তাতেই জয়! সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে আবারও আক্রান্ত হলেন এক মৎস্যজীবী। আর বাঘের মুখ থেকে সেই মৎস্যজীবীকে ফিরিয়ে আনলেন স্ত্রী নমিতা।

পাথরপ্রতিমার জি-প্লট গ্রাম পঞ্চায়েতের সত্যদাসপুরের বাসিন্দা দিলু মল্লিকের স্ত্রী-র নমিতা এখন সত্যিই ‘রিয়েল’ নায়িকা। শুক্রবার সকালে সুন্দরবনের বিজুয়াড়া জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন দিলু। তখনই অতর্কিতে দিলুর ওপর পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। দিলুর মাথায় থাবা বসাতে থাকে।

নৌকায় ছিলেন স্ত্রী। পিছনে মেয়েকে সরিয়ে নমিতা লাঠি হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। লাঠি নিয়ে বাঘের পিঠে এলোপাথাড়ি মারতে থাকেন নমিতা। বাঘ তেড়ে আসে তাঁর দিকেই। কিন্তু পিছ পা হননি নমিতা। লড়েছেন। নমিতার লাঠির একাধিক ঘায়ে দিলুকে ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায় বাঘটি।

এরপর আহত স্বামীকে নিয়ে নৌকায় ডাঙায় ফেরেন তিনি।আহত দিলুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান পাথরপ্রতিমা ব্লক হাসপাতালে। কিন্তু দিলুর মাথায় একাধিক ক্ষত। হয়েছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও। রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দিলুকে স্থানান্তরিত করা হয় কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। অক্ষর জ্ঞান নেই নমিতার, বোঝেন না কথা বলার আদবকায়দাও। গুছিয়ে সে অর্থে নিজের লড়াইয়ের কথা বলতে পারেননি নমিতা। হয়তো তিনি নিজেও বোঝেননি কী অসম লড়াইয়ে জিতে ফিরেছেন তিনি। স্রেফ নমিতা বললেন, “ভাবনি কিছুই। লাঠি মারছিলাম। ওঁর মাথা থেকে তখন রক্ত বেরোচ্ছিল। অনেকবার লাঠি মেরেছি। বাঘ ছেড়ে পালাল, আর আমি ওঁকে তাড়া নিয়ে এলাম।”

দিলুকে বাঁচানোর আপ্রাণ প্রয়াস চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রতিবেশীরা বলছেন, নমিতার শাখা সিঁদুরের জোরেই বেঁচে যাবে দিলুর প্রাণ। বাঘাযতীনের মতো নাম দিয়ে কেউ কেউ বলছেন, ‘ও আমাদের বাঘিনী-নমিতা…’।