North Dinajpur: TV9 বাংলার খবরের জের! বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকা রহস্যময় গাড়ি থেকে উধাও নীলবাতি, খোঁজ মিলল মালিকের
TV9 Impact: প্রশ্ন উঠছে, কেন গাড়িতে নীলবাতি লাগাতেন অমলকান্তি ? তাঁর কি আদৌ সেই এক্তিয়ার ছিল?
উত্তর দিনাজপুর: TV9 বাংলার খবরের জের। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পড়ে থাকা মালিকাহীন নীলবাতি গাড়ির (Suspicious Car) রহস্য উদঘাটন সম্ভব হল। রাতের অন্ধকারেই খুলে নেওয়া হল গাড়ির নীলবাতি। খোঁজ পাওয়া গেল গাড়ির মালিকেরও। জানা গিয়েছে, অমলকান্তি রায় নামে এক সরকারি আধিকারিকের গাড়ি ওইটি। কিন্তু, সেই গাড়িতে সত্যিই নীলবাতি লাগানো যায় কি না তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে।
বিগত দিনপাঁচেক ধরে বিশ্ববিদ্যালয় (Raiganj University) চত্বরে নীলবাতি লাগানো ওই গাড়িটিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। কার গাড়ি, কে রেখেছে কেন রেখেছে, কিছুই জানা যায়নি। বাধ্য হয়ে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে গাড়িটিকে মেটাল লক দিয়ে আটকে যায়। সঙ্গে গাড়ির মালিকের খোঁজও শুরু করে। এরপরেই মালিকের হদিশ মেলে। রায়গঞ্জের পুর্ব কলেজপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকা অমল কান্তি রায় নামে এক ব্যক্তি নিজেকে গাড়ির মালিক বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, নবান্নের প্রাক্তন সহ-সচিব ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের হেয়ারিং অফিসার পদে রয়েছেন। সেইসঙ্গে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট. স্কলারও তিনি। যদিও তাঁর গাড়িতে কোনও বোর্ড ছিল না। কেবল নীলবাতিই লাগানো ছিল।
তবে প্রশ্ন উঠছে, কেন গাড়িতে নীলবাতি লাগাতেন অমলকান্তি ? তাঁর কি আদৌ সেই এক্তিয়ার ছিল? যদি থেকে থাকে তবে কেন ফের নীলবাতি খোলা হল? পাল্টা, অমলকান্তির দাবি, সরকারি প্রয়োজনে নয়, ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই তিনি নীলবাতি লাগিয়েছিলেন। তাঁর গাড়ির জন্য নীলবাতি বৈধ নয় এমনটাই স্বীকার করেছেন অমলকান্তি। কিন্তু, এভাবে কি নীলবাতি যখনতখন যেকোনও গাড়িতে লাগানো যায়?
লালবাজার ও পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, মাথায় লাল বা নীল আলো লাগানো গাড়ি চড়ার অধিকার রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, বিচারপতি থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত বিভিন্ন পদমর্যাদার মানুষকে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব অনুযায়ী, কারও ফ্ল্যাশার-সহ লাল আলো, কারও বা ফ্ল্যাশার ছাড়া। নীল আলোর ক্ষেত্রেও ফ্ল্যাশার থাকা, না-থাকার প্রভেদ রয়েছে।
সম্প্রতি, রাজ্যে দেবাঞ্জন-কাণ্ড সহ-একের পর এক ভুয়ো আধিকারিকদের লাল-নীলবাতি গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনায় রাশ টানতে চেয়ে একাধিক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সেই বিশেষ বাতিওয়ালা গাড়ি ব্য়বহারকারীদের তালিকায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মোট ১৯ ধরনের পদাধিকারীরা।
এই বিজ্ঞপ্তি মেনে ভারতরত্ন প্রাপক থেকে রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার গাড়িতে ফ্লাশার-সহ লাল বাতি ব্যবহার করতে পারবেন না৷ তবে তাঁদের গাড়ির মাথায় লাল বাতি থাকতে পারে৷ কলকাতার মেয়রের গাড়িতেও ফ্লাশারবিহীন লাল আলো থাকতে পারে৷ গাড়ির মাথায় ফ্লাশার-সহ লালবাতি ব্যবহার করতে পারবেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি, রাজ্যের পূর্ণমন্ত্রী, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার এবং বিরোধী দলনেতা৷
অন্য়দিকে, অ্যাডভোকেট জেনারেল থেকে সরকারের সচিব পর্যায়ের আধিকারিক, রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ পুলিশের পদাধিকারিকরা গাড়িতে লাল আলো ব্যবহার করতে পারবে না৷ শুধুমাত্র মুখ্যসচিবের গাড়িতেই থাকবে লাল বাতি ৷ বাকিরা নীল আলো ব্যবহার করতে পারবেন ৷ এই তালিকায় রাখা হয়েছে ভারতরত্ন প্রাপক, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারও৷ দমকল, পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার মতো জরুরি পরিষেবার গাড়িতে শুধু লাল আলোর পরিবর্তে লাল-নীল-সাদা তিন রঙের বাতি থাকবে৷
সেখানে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এভাবে গাড়ি এনে ফেলা রাখা ও অনুমতি ছাড়া নীলবাতি লাগানো এবং পরে বাতি খুলে নেওয়া এই নানাবিধ কারণে ওই গাড়িটিকে এখনই মালিকের হাতে দেওয়া হচ্ছে না। আগামী সোমবার এ নিয়ে তদন্তে বসার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
করোনা পরিস্থিতি আপাতত বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের ৪ নম্বর গেটের কাছে থাকা গ্যারেজে একটি নীল বাতি লাগানো গাড়ি দেখতে পান অনেকে। কে বা কারা এই গাড়ি (Suspicious Car) রেখেছে তা বুঝতে পারেননি কেউই। নীল বাতি লাগানো থাকলেও কোনও বিভাগ বা অন্য কোনওরকম কোন নাম না লেখা থাকায় গাড়িটির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি, গাড়িটি নাশকতার জন্য় রাখা হয়েছে কি না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে।
নিরাপত্তার জন্য গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে রয়েছে সিসিক্যামেরা। ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষীদেরও। কিন্তু, তারপরেও লোকচক্ষুর আড়ালে কীভাবে এই গাড়ি ক্যাম্পাস চত্বরে এল এমনকী, পাঁচদিন ধরে থেকে গেল তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। অনেকেই সন্দেহ করেন গাড়িটি কোনও ভুয়ো আধিকারিকের হলেও হতে পারে। পরে অবশ্য টিভি নাইন বাংলার খবরের জেরে গাড়ির মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: Mangokot: ‘খুন করতে চাইনি, বাধ্য করা হয়েছিল’, তৃণমূল নেতা হত্যাকাণ্ডে স্বীকারোক্তি ধৃত সুরজের
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: উত্তরবঙ্গ সফর শেষেই গোয়ায় পাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর, সাগরপারে ঘর গোছাতে ব্যস্ত তৃণমূল