আষাঢ়স্য বঙ্গে বানভাসি জেলা! অবিরাম বর্ষণে কোথাও ঘরে ঢুকল জল, কোথাও বা দ্বারপ্রান্তে মৃত্যু

শুক্রবার, সারাদিন রাজ্য়জুড়ে অব্যাহত বৃষ্টিপাত। ২০ জুনের পর থেকে আবহাওয়ার বদল হতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।

আষাঢ়স্য বঙ্গে বানভাসি জেলা! অবিরাম বর্ষণে কোথাও ঘরে ঢুকল জল, কোথাও বা দ্বারপ্রান্তে মৃত্যু
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Jun 19, 2021 | 1:21 AM

পশ্চিমবঙ্গ: জৈষ্ঠ্য় শেষে আষাঢ় মাস পড়তেই কমতি নেই বৃষ্টির। অবিরত বর্ষণধারায় প্রায় বানভাসি অবস্থা বাংলার। অমাবস্যার ভরা কোটাল ও তিনটি নিম্নচাপ সহযোগে বঙ্গে বর্ষার আগমন হবে এমনটা আগেই জানিয়েছিল হাওয়া অফিস। শুক্রবার, আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং লাগোয়া বাংলাদেশের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত আছে। এ ছাড়াও দক্ষিণ বিহার এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব উত্তর প্রদেশের উপরে একটি নিম্নচাপ আছে। এর ফলে বাংলায় ১৮ থেকে ২০ জুনের মধ্যে সমস্ত জেলাতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার জেলা জুড়ে উঠে এল সেই বানভাসি ছবি।

পাটুলি:

শহর কলকাতায়, জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। জানা গিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম সুজয় মণ্ডল, বয়স ১৮। শুক্রবার দুপুরে জমা জলে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল ওই যুবক। সেখানে, ইলেকট্রিকের ছেঁড়া তার থেকে বিদ্য়ুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্য়ু হয় ওই যুবকের।

তেহট্ট:

তিনদিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টির জেরে ধস নামল তেহট্টের কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়ক সংলগ্ন তরনীপুরে। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দারা লক্ষ্য করেন রাজ্য সড়কের বেশ খানিকটা জায়গায় রাস্তা সহ পাশের মাটি ধসে গিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা রাতের অন্ধকারে অথবা কোনো গাড়িকে পাশ দিতে গেলে যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা ৷ এছাড়াও এখনও ধস রোধ করে রাস্তা মেরামতির ব্যবস্থা না করলে বৃষ্টির জেরে ধস আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে কৃষ্ণনগরের সাথে করিমপুরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস্তা মেরামতির কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি৷ যদিও, তেহট্ট ট্রাফিক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার এ ঘটনা জানার পরেই সেখানে রাস্তার দুই ধারে গাডরেল দেওয়া হয়েছে। এমনকি মাঝেমধ্যেই সেখানে পরিদর্শন করে গাড়িচালকদের সচেতন করাও হচ্ছে।

আসানসোল:

প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জল ছাড়া শুরু হয়েছে মাইথন ও পাঞ্চেতে। শুক্রবার বেলা বারোটা পর্যন্ত দুটি ড্য়াম থেকে জল ছাড়া হল মোট ৩৬ হাজার ৯৪৩ একর ফিট। মাইথন থেকে জল ছাড়া হয়েছে ১৪ হাজার ৩০০ একর ফিট ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়া হয়েছে ২২ হাজার ৬৪৩ একর ফিট। মাইথনে প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের জেরে জলাধার ভরে যায়। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, এখনই দামোদরের নিম্ন উপত্যকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি বাড়লে হয়তো জল ছাড়া হতে পারে।

বীরভূম:

খয়রাশোলের হিংলো নদীতে অস্বাভাবিক জল বাড়ার কারণে ডুবে গেল একটি গোটা সেতু। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেতুটি বাবুইজোড় এলাকা থেকে দুবরাজপুর যাবার রাস্তা। সেই সেতুতে হঠাৎ জল ওঠে শুক্রবার। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান এক বাইক আরোহী। কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচেন স্থানীয়রা। ওই এলাকায় প্রায় ৫টি গ্রামের মানুষ ওই সেতুর উপর নির্ভরশীল। সেতু ভেঙে যাওয়ায় গুরুতর সমস্য়ায় পড়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে, অতিবৃষ্টির জেরে অজয় নদীতে ছাড়া হলো ৪০ হাজার কিউসেক জল। প্রশাসন সুত্রে খবর , ঝাড়খণ্ডের সিকাটিয়া ড্যাম্প থেকে ৪০ হাজার কিউসেক জল আজ সকালে ইতিমধ্যেই ছাড়া হয়েছে। আরও ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হবে। বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই, নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় সচেতনতার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

বসিরহাট:

অতিবৃষ্টিতে মানুষের দৈনিক জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে বিভিষীকাময়। বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট পৌরসভার ২, ৮, ৯ ও ১৯ সহ একাধিক ওয়ার্ডে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পৌর নাগরিকদের ঘর বাড়িতে ঢুকেছে জল। যার ফলে জলের মধ‍্যে কোনরকমে সাপ, ব‍্যাঙ ও জলজ পোকামাকড়ের সঙ্গে সহাবস্থানে দিন গুজরান। পাশাপাশি জমা জলে বাড়ছে মশার উপদ্রব। ফলে ডেঙ্গু, ম‍্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ নিয়েও আতঙ্ক বাড়ছে। নিকাশি অব‍্যবস্থার কারণেই এই বিপত্তি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। যদিও প্রশাসনের তরফে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

আরামবাগ:

ফের দ্বারকেশ্বর নদীর জল উপচে প্লাবিত আরামবাগের কালিপুর। আরামবাগের বাঁধ পাড়া এলাকায় আরও জল ঢুকে মানুষের বিপদ বাড়িয়েছে। প্রত্যেককেই দ্বারকেশ্বর নদীবাঁধে তুলে আনা হয়েছে। ত্রিপল খাটিয়ে অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন এলাকাবাসী। শুক্রবার সকালে, পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দীর উদ্যোগে দুর্গতদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি খুলে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কলেজের হোস্টেলগুলিও। সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছেন দুর্গতরা।

দুর্গাপুর:

দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ৭০৪৭৫ কিউসেক জল ছাড়ছে রাজ্য সেচ দফতর। সেচ দফতর সূত্রে খবর, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে এবং মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ালে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।

হাওড়া:

গত দু’দিনের অতি ভারী বৃষ্টিতে দুর্বল হয়ে পড়েছিল পুরনো বাড়ি। তার মধ্যে একটা হনুমান ছাদে ঝাঁপ দিতেই বিকট আওয়াজে ভেঙে পড়ল বাড়ির একাংশ। ইটের চাঁই ভেঙে পড়ে বাড়ির মালকিনের ওপর। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ষাটোর্ধ্ব সেই মহিলার। শুক্রবার মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বালির হাজরা পাড়া এলাকায়।

শুক্রবার, সারাদিন রাজ্য়জুড়ে অব্যাহত বৃষ্টিপাত। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের ফলে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমের কয়েকটি জায়গায় ভারি থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ১৯ জুন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ারে, দুই দিনাজপুর, মালদা এবং দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও দুই ২৪ পরগনায়। ২০ জুনের পর থেকে আবহাওয়ার বদল হতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।

আরও পড়ুন: বিকল্প কী! পেশায় টান, নেই ‘কাস্টমার’, টিকা পেয়েও ‘অখুশি’ যৌনকর্মীরা