Earthquake Alert: তুরস্কের থেকেও ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ!

যে কোনও সময় জোরাল ভূমিকম্পে কেঁপে উঠতে পারে বাংলাদেশ। আর তার বিপর্যয় তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের বিপর্যয়কেও হার মানাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

Earthquake Alert: তুরস্কের থেকেও ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ!
প্রতীকি ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 14, 2023 | 7:07 PM

ঢাকা: তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে যে ভূমিকম্প হয়েছে, সেটা সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলির মধ্যে অন্যতম বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পরপর কয়েকটি ভূমিকম্পের মধ্যে সর্বাধিক তীব্রতা ছিল ৭.৮। এই ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। যা রীতিমতো বিভীষিকা ছড়িয়েছে। কিন্তু, এই বিভীষিকাময় ভূমিকম্পের থেকেও আরও বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ যে কোনও সময় জোরাল ভূমিকম্পে কেঁপে উঠতে পারে বাংলাদেশ। আর তার বিপর্যয় তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের বিপর্যয়কেও হার মানাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

কেন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ? জানা গিয়েছে, গোটা পৃথিবী তরল পদার্থের উপর ভাসমান ৭টি বড় ও ৩০টির বেশি প্লেটের মধ্যে দাঁড়িয়ে। এই প্লেটগুলির মধ্যে তারতম্য ঘটলে বা সংঘর্ষ ঘটলেই ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশ তিনটি প্লেট- বার্মিজ, ইউরেশিয়ান ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলির মধ্যে বাংলাদেশের পূর্বে রয়েছে বার্মিজ প্লেট, উপরে ইউরেশিয়ান প্লেট ও পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট। একেবারে ভারতের পাশে বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান প্লেট রয়েছে এবং এই দুটি প্লেটের মধ্যে ইতিমধ্যে তারতম্য ঘটতে শুরু করেছে। আর এই দুটি প্লেট থেকে দীর্ঘদিন কোনও শক্তি নির্গত হয়নি। ফলে এই দুটি প্লেটের মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি রয়েছে, বড় ধরনের তারতম্য ঘটলে সেই বিপুল শক্তি নির্গত হবে এবং তার ভয়াবহতা তুরস্ক-সিরিয়া বিপর্যয়ের থেকে অনেক বেশি হবে। ৮.২ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পের ভয়াবহতার কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ জানান, বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান প্লেট সুমাত্রা দ্বীপের পাশ দিয়ে আন্দামান হয়ে দক্ষিণ সুমাত্রা পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার কিমি বিস্তৃত। এই প্লেট দুটির মধ্যবর্তী স্থান হল ডাউকি ফল্ট। আর এর দুপাশে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসাবে সুনামগঞ্জ থেকে জাফরং ও সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। এই দুটি জোনের মধ্যে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জোন বর্তমানে বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কেননা এই জোনে ক্রমশ ইন্ডিয়ান প্লেট তলিয়ে যাচ্ছে এবং বার্মিজ প্লেট পুরো শক্তি নিয়ে পশ্চিমে ধাবিত হচ্ছে। যা ভয়ঙ্কর। ফলে যে কোনও সময় এই জোনে ভূমিকম্প হতে পারে। আর প্লেট দুটির মধ্যে যে শক্তি সঞ্চিত রয়েছে, তা ৮.২ মাত্রার শক্তি নিয়ে কম্পন ধরাতে পারে।

জানা গিয়েছে,কলম্বিয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত দু-যুগ ধরে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করছে। সেই গবেষণায় উঠে এসেছে, বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান প্লেটের মধ্যে দীর্ঘদিন কোনও ভূমিকম্পের শক্তি বের হয়নি। ফলে এই দুটি প্লেটের মধ্যে ৪০০-১০০০ বছর ধরে ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। যদিও বাংলাদেশে ১৮২২ ও ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়। তারপর ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে। তবে সিলেট থেকে কক্সোজার ও মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত বিস্তৃত ২৫০ কিলোমিটার এলাকা বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান প্লেটের মধ্যে পড়ছে। যেভাবে দুটি প্লেটের মধ্যে তারতম্য ঘটতে শুরু করেছে, তার ফলে এই বিস্তীর্ণ এলাকার যে কোনও জায়গায় যে কোনও সময় ফাটল শুরু হতে পারে এবং ধীরে ধীরে তার বিস্তৃতি ঘটবে। ঢাকা ৫০-১০০ কিলোমিটার পরিধির চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিকম্প হলে যে বিপর্যয় হবে তা তুরস্কের থেকেও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক তথা ভূতত্ত্ববিদ।

প্রসঙ্গত, পৃথিবী বড় ৭টি ও ৩০-র বেশি ছোটো প্লেটের উপর অবস্থিত। এই প্লেটগুলির মধ্যে প্রায় সময়ই পরস্পরমুখী, পাশাপাশি ও বিপরীতমুখী সংঘর্ষ হয়। পরস্পরমুখী সংঘর্ষ হলে সেটা বড় সংঘর্ষ ও তার ফলে অনেক শক্তি জমা হয়। তারপর দীর্ঘদিন ধরে এই সংঘর্ষ চলতে থাকলে এবং শক্তি জমা হতে থাকলে যখন শিলারাশি বেরিয়ে যায়, তখনই ভূ-পৃষ্ঠে ঢেউয়ের মতো অনুভূত হয়, সেটাই ভূমিকম্প। তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে এভাবেই আরবিয়ান প্লেট ও আনাতোনিয়ান প্লেটে পরস্পরমুখী সংঘর্ষের ফলেই বড় ভূমিকম্প হয়েছে। এবার বাংলাদেশেও বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান প্লেটের মধ্যে এরকম সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশই বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গ্লোবাল সিসমিক সংস্থার মানচিত্র অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, চিন, জাপান, তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও চিলি বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে।