United Kingdom: বাথটাবে হিমশীতল জল, ৯ বছরের শিশুকে ডুবিয়ে দিল মা; দোষী সাব্যস্ত প্রেমিকও

UK Woman and Boyfriend Killed child: বাংলায় প্রবাদ আছে, কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়। এই প্রবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করে ছাড়লেন কার্লা স্কট। তাঁর প্রেমিক দোষ স্বীকার করলেও, কার্লা বরাবর নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

United Kingdom: বাথটাবে হিমশীতল জল, ৯ বছরের শিশুকে ডুবিয়ে দিল মা; দোষী সাব্যস্ত প্রেমিকও
প্রতীকী ছবি, ইনসেটে - কার্লা এবং ডার্ক
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 14, 2023 | 1:27 PM

লন্ডন: বাংলায় প্রবাদ আছে, কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়। এই প্রবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করে ছাড়লেন কার্লা স্কট নামে এক ব্রিটিশ মহিলা। সম্প্রতি, ৯ বছরের পুত্র সন্তানকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন এবং অবশেষে হত্যা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কার্লা এবং তাঁর প্রেমিক ডার্ক হাওয়েল-কে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওরচেস্টারশায়ারের ড্রয়েটভিচে তাদের বাড়িতেই পাওয়া গিয়েছিল ৯ বছরের আলফি স্টিলের দেহ। শিশুটির দেহে অন্ততপক্ষে ৫০টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। কভেন্ট্রি ক্রাউন কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। শুনানির সময় জানা যায়, আলফির সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করত কার্লা স্কট এবং ডার্ক হাওয়েল। কঠোর অনুশাসনের মধ্যে থাকতে হত তাকে। সেই অনুশাসন মানতে না পারলেই জুটত মারধর, হিমশীতল জলে স্নান করানো, ঠান্জার মধ্যে বাড়ির বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার মতো নির্মম শাস্তি।

আলফির উপর দীর্ঘদিন ধরে যে এই নির্যাতন চলছে, তা কিন্তু জানতেন পাড়া-প্রতিবেশীরা এবং সামাজিক পরিষেবা সংস্থাগুলিও। প্রতিবেশিরা একাধিকবার আলফিকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশে ফোন করেছেন। প্রতিবেশীরা কখনও আলফির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন। কখনও তাকে তার মায়ের প্রেমিক মারধর করছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাকে জোর করে ঠান্ডা জলে স্নান করানো হত বলে জানিয়েছেন। এমনকি এই অভিযোগও করেছেন যে, রাত্রিবেল তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হত। বেশ কয়েকজন প্রতিবেশির দাবি, আলফিকে প্রায়ই রাত্রিবেলা ঠান্ডার মধ্যে তাকে ‘মূর্তির মতো’ বাগানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। সামাজিক পরিষেবা সংস্থাগুলি এই নির্যাতনের বিষয়ে কার্লা স্কট এবং ডার্ক হাওয়েলকে বহুবার সতর্ক করেছিল। কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি।

২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কার্লা স্কট আমেরিকার জরুরি পরিষেবা নম্বরে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তার ছেলে শ্বাস নিচ্ছে না। তিনি দাবি করেছিলেন, আলফিকে তিনি বাথটাবে উষ্ণ জলে স্নান করাচ্ছিলেন। সে স্নান উপভোগ করছিল, কিন্তু এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তবে তদন্তকারীরা দেখেছিলেন, তার শরীরে প্রায় ৫০-এর উপর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দেখা গিয়েছিল, আলফির শরীরের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাজেই তদন্তকারীদের মতে, কার্লা যে উষ্ণ জলে আলফিকে স্নান করানোর দাবি করেছিলেন, তা একেবারেই মিথ্য়া।

তদন্তকারীরা আলফির মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, যাবতীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ ইঙ্গিত দিয়েছে যে হিমশীতল ঠান্ডা জলে ডুবে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় বাড়িতে কার্লা স্কট এবং ডার্ক হাওয়েল ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। কাজেই তারাই এই নৃশংস কাজে লিপ্ত বলে আদালতে জানায় তদন্তকারীরা। শুনানির সময় আলফিকে নির্যাতন করার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাওয়েল। কিন্তু, কার্লা শেষ পর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে গিয়েছেন। নিজ সন্তানকে হত্যাকারী এই মা এবং তাঁর প্রেমিককে অবশ্য এখনও সাজা শোনায়নি ব্রিটিশ আদালত। তবে, তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো কঠোর সাজা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, আলফির মৃত্যুর ন্যায়বিচারের পর, ভেঙে পড়েছেন তার দাদু তথা কার্লার বাবা পল স্কট। আদালতের বাইরে তিনি বলেছেন, “আমরা আর কখনও আলফির হাসিমুখটা দেখতে পাব না। এটা ভেবেই আমাদের শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। আলফিকে হারানো আমাদের জীবনে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে। আমরা কখনও আর তাকে জড়িয়ে ধরতে পারব না। একজন দক্ষ যুবক হয়ে উঠতে দেখতে পাব না। এই ভাবনা আমাদের খুব যন্ত্রণা দেয়। আমরা ওর অভাব বোধ করছি।”