Climate Change & Flood: রেকর্ড ভাঙা গরম, তারপরই ভয়ঙ্কর বন্যা! পাকিস্তানের মতো দশা কি ভারতেরও হবে?
Climate Change & Flood: হিমালয় হল উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর পর সবথেকে বড় জমা জলের ভান্ডার। বিশ্বায়নের প্রভাবে হিমালয়ের হিমবাহগুলি গলতে শুরু করেছে, ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের।
ঈপ্সা চ্য়াটার্জী: যেদিকে দুই চোখ যাচ্ছে, সেদিকেই জল। রাস্তাঘাটের আর অস্তিত্ব নেই। চলাচলের একমাত্র ভরসা এখন নৌকাই। কিন্তু দুই মাস আগেও এই চিত্রটা কিন্তু ছিল না। ছিল পথঘাট, চাষের জন্য জমি থেকে শুরু করে খেলার মাঠ, নদী। চলতি বছরে বর্ষা প্রবেশ করতেই বদলে গেল গোটা চিত্রটাই। কোথাও হড়পা বান, কোথাও আবার নদীতে প্লাবন, এইভাবেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গোটা পাকিস্তানই বন্যায় ডুবেছে। বর্তমানে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সামনে আসতেই মনে মনে প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে প্রতিবেশী দেশগুলিও। পাকিস্তান যে ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়েছে, তা যদি ভারত, বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশেও হয়?
বিগত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান। দেশের তিন ভাগই জলের নীচে চলে গিয়েছে। ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে পথঘাট। বন্যায় এখনও অবধি কমপক্ষে ১৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ। আর্থিক সঙ্কটে আগেই ধুঁকছিল দেশ, বন্যা এসে সেই সঙ্কট যেন আরও ৫ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়েই অন্যান্য় দেশের কাছে সাহায্যের হাত পাততে হয়েছে পাকিস্তানকে। তবে এত কিছুর মাঝে প্রশ্ন সেই একটাই- কেন এমন ভয়ঙ্কর বন্যা হল পাকিস্তানে? সঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন, ভারতেও কি এমন বন্যা হতে পারে?
পাকিস্তানে বন্যার কারণ-
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জলবায়ু ও পরিবেশবিদরা সোচ্চার হলেও, তাদের কথায় খুব বেশি আমল দেয়নি কেউই। যেভাবে প্রতি বছর জঙ্গল কাটা হচ্ছে এবং পুনর্নবিকরণযোগ্য নয়, এমন শক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে, তারই ফলস্বরূপ বাড়ছে দাবানল, বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একাধিক দেশই এখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে লড়াই চালাচ্ছে। পাকিস্তানের বন্যার অন্যতম কারণ হল হিমালয়ের হিমবাহের গলন। হিমালয় ও তার বুকে থাকা হিমবাহগুলির বরফ গলেই পাকিস্তানে নেমেছে মুষল ধারার বৃষ্টি ও বন্যা। আর প্রতিবেশী দেশ চিনে দেখা গিয়েছে খরা।
বন্যার ইঙ্গিত কি আগেই মিলেছিল?
পাকিস্তানের বন্যার ইঙ্গিত কিন্তু আগেই মিলেছিল। গত বছর ও চলতি বছরে পাকিস্তানে যে তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল, সেখানেই লুকিয়ে ছিল বন্যার আভাস। চলতি বছরে পাকিস্তানে গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় ৪০০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বালুচিস্তান ও সিন্ধ প্রদেশের মতো অঞ্চলগুলিতে বাঁধের জল উপচে পড়ছে।
লাগাতার হিমবাহের বরফ গলার কারণে পাকিস্তানের প্রায় ৩ কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বরফ গলার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, যখন পৃথিবীপৃষ্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখন ভূ-পৃষ্ঠ থেকে জল জলীয় বাষ্পের আকারে বায়ুমন্ডলে মিশে যায়, আর তারপর যখন বৃষ্টি নামে, তখন তার পরিণতি ভয়ঙ্কর হয়। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। যত হিমবাহ গলে জল বাষ্পে পরিণত হয়েছে, ততই তা ভারী বৃষ্টির আকারে নেমে এসেছে। বিগত ছয় বছর ধরেই একটানা উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভাঙছে পাকিস্তান।
হিমবাহ গলনের ফলে ভারতে কী হতে পারে?
হিমালয়ের পর্বতমালা শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতেও রয়েছে। হিমালয় হল উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর পর সবথেকে বড় জমা জলের ভান্ডার। বিশ্বায়নের প্রভাবে হিমালয়ের হিমবাহগুলি গলতে শুরু করেছে, ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের। এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে। ইন্দোরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকরা জানিয়েছেন, হিমালয়ের হিমবাহগুলি যেভাবে গ্রীষ্মের সময়ে এবং তাপপ্রবাহের কারণে গলতে শুরু করেছে, তা বিগত ১৫ বছরে সবথেকে ভয়ঙ্কর। মার্চ ও এপ্রিলের তাপমাত্রা গত ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে।
হিমাবাহের সামনের ভাগ, যা ‘জিভ’ হিসাবেও পরিচিত, তা কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার অবধি বিস্তৃত হতে পারে। এই অংশের বরফ যত নরম হবে, বিপদ ততই বাড়বে। এর আগে ২০২১ সালেও আইআইটি-র একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল যে, হিমবাহ গলনের ফলে যেমন ভারত, পাকিস্তান, চিন সহ একাধিক দেশে জলের চাহিদা পূরণ হয়, তেমনই আবার হিমবাহের অতিরিক্ত গলন প্রাথমিকভাবে বন্যা এবং ভবিষ্যতে খরা দেখা দিতে পারে।
যদি এখনই আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন না হওয়া যায়, তবে বন্যা নামলে, কোনও বাঁধই তা রুখতে পারবে না। তেমনই আবার পরবর্তী সময়ে খরা দেখা দিলে, তখন কয়েকশো কোটি মানুষের জন্য জলের যোগান অসম্ভব হয়ে উঠবে।