যমের থেকেও বেশি ভয় পায় তালিবানরা, কাবুলের নিরাপত্তার ভার সেই হাক্কানির হাতে! এরা কারা?
এই নেটওয়ার্কের 'ম্যানপাওয়ার' তালিবানের মতো শক্তিশালী না হলেও সরকারে একটি বড় ভূমিকা এই হাক্কানিরা নিতে চলেছে।
কাবুল: আফগানিস্তানের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে তালিবানরা। কিন্তু রাজধানী কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্কের হাতে। এমনকী, কাবুলে তালিবানের শীর্ষ নেতারা সরকার গঠন নিয়ে যে একের পর এক বৈঠক করছে, সেখানেও হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিদের শামিল করা হয়েছে। কিন্তু কেন?
হাক্কানি নেটওয়ার্ক হল আফগানিস্তানের সবচেয়ে নৃশংস জঙ্গি গোষ্ঠী। এতটাই যে তালিবানরাও তাদের ভয় পায়। বিগত কয়েক বছরে আফগানিস্তানে যত বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে বেশিরভাগের জন্যই দায়ী করা হয়েছে এই হাক্কানি নেটওয়ার্ককে। যাদের একাধিক হামলায় আজ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অগণিত সাধারণ মানুষ, সরকারি আধিকারিক, এবং বিদেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এই নেটওয়ার্কের ‘ম্যানপাওয়ার’ তালিবানের মতো শক্তিশালী না হলেও সরকারে একটি বড় ভূমিকা এই হাক্কানিরা নিতে চলেছে। ইঙ্গিত অন্তত এমনটাই পাওয়া যাচ্ছে।
হাক্কানি নেটওয়ার্কের উৎপত্তি
সোভিয়েত-বিরোধী জিহাদ ঘোষণা করে ১৯৮০-র দশকে শিরোনামে উঠে আসা জালালউদ্দিন হাক্কানি নামক ব্যক্তি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। একসময় আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিল এই ব্যক্তি। তার মাধ্যমেই আমেরিকা ও পাকিস্তান জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনকে অস্ত্র সরবরাহ করত। ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও হাক্কানির যোগাযোগ ছিল নিবিড়। ১৯৯৬ সালে আফগানে যখন তালিবান দখল নিয়েছিল সেই সময় সে দেশে মন্ত্রীর ভূমিকায় দেখা যায় জালালউদ্দিনকে। ২০১৮ সালে তার মৃত্যু হলে জালালউদ্দিনের ছেলে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি নেটওয়ার্কের দায়িত্ব নেয়। তালিবানি সাম্রাজ্যে থেকেও তালিবানের চেয়ে কয়েকগুণ ভয়ঙ্কর এই জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রভাব মূলত পূর্ব আফগানিস্তানের পাক সীমান্ত জুড়ে।
হাক্কানি নেটওয়ার্ক এত ভয়ঙ্কর কেন?
যে কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীই ভয়ঙ্কর, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু হাক্কানি নেটওয়ার্ককে আফগানিস্তানের সবচেয়ে নিষ্ঠুর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবেই গণ্য করা হয়। গত দু-দশকে আফগানিস্তানে যত ধরনের হৃদয় বিদারক নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলির প্রায় সবই ঘটিয়েছে এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক। আমেরিকা তাদের ইতিমধ্যেই জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞাও জারি রয়েছে।
কোনও জলজ্যান্ত মানুষকে আত্মঘাতী বিস্ফোরকে সাজিয়ে নাশকতার ছক কষা হোক, বা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সামনে গাড়ি ভর্তি বোমা রেখে এক লহমায় তা উড়িয়ে দেওয়া। মর্মান্তিক সব ধরনের কার্যকলাপ করার দিকে তালিবানের থেকেও অনেকটা এগিয়ে হাক্কানির সাঙ্গপাঙ্গরা। ২০১৩ সালে একবার হাক্কানিদের ৬৮ টন বিস্ফোরক ভর্তি একটি গাড়ি উদ্ধার করেছিল আফগান সেনা। ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কারজাইকে অপহরণ করে তাঁকে হত্যা করার চেষ্টার নেপথ্যেও ছিল এই হাক্কানিরা।
তালিবান সরকারে হাক্কানিদের ভূমিকা
হাক্কানি নেটওয়ার্ক সরকার চালাবে না ঠিকই, কিন্তু তাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ না করে একটিও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তালিবানের নেই। যে কারণে সরকার গঠনের ছোট থেকে বড়, সব ধরনের আলোচনা হাক্কানি নেটওয়ার্কের দুই প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই করছে তালিবানের নেতারা। তালিবান সরকারে হাক্কানির ভূমিকা ঠিক কতটা বড়, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে তাদের হাতে কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পরই। হাক্কানি নেটওয়ার্কের বর্তমান সর্বেসর্বা সিরাজউদ্দিনও তার বাবার মতো বড় কোনও মন্ত্রক পেতে পারে, সেই সম্ভাবনাও রয়েছে। শনিবারই সিরাজউদ্দিনের কাকা খালিল হাক্কানিকে তালিবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে। সিরাজ এবং খালিল, দু’জনের মাথার দামই কয়েক লক্ষ মার্কিন ডলার হিসেবে ঘোষণা করেছে আমেরিকা। কিন্তু আপাতত তারা সামনে থেকেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আরও পড়ুন: ‘অপদার্থ’ বাইডেনকে মার্কিন রাষ্ট্রপতির আসনে দেখতে চেয়েছিল খোদ ওসামা বিন লাদেন!