ক্ষুদ্র স্বার্থ ছেড়ে অতিমারি মোকাবিলায় ভারতের পাশে বাইডেনের আমেরিকা

২০২০ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভারতও টিআরআইপিএস থেকে করোনার ভ্যাকসিনকে দূরে রাখার প্রস্তাব দেয়।

ক্ষুদ্র স্বার্থ ছেড়ে অতিমারি মোকাবিলায় ভারতের পাশে বাইডেনের আমেরিকা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: May 06, 2021 | 10:37 PM

জ্যোতির্ময় রায়: বড় বিপদকে হারাতে হলে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে এগিয়ে যেতে হয়। করোনা (COVID-19) অতিমারি থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করতে হলেও বিশ্বের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ দেশগুলিকে ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থকে পিছনে ফেলেই লড়াইয়ে নামতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারত ও আমেরিকার ভূমিকা নজির।

করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে এই মুহূর্তে অস্ত্র টিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভারতও আন্তর্জাতিক বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার বা ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (TRIPS) থেকে করোনার ভ্যাকসিনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকাকে। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সমর্থন চাওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব শনিবারে ভারত-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্থাপন করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদি সমস্ত উন্নত দেশগুলির সমর্থন থাকে তবে বর্তমানে করোনার নির্মূলের জন্য বিশ্বে বর্তমানে যে ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে তার উপর টিআরআইপিএস সম্পর্কিত বিধি নিষেধগুলি (অস্থায়ীভাবে) শিথিল করা সম্ভব হবে।

এখন বিশেষ কিছু দায়বদ্ধতার কারণে সব সংস্থা টিকা তৈরি করতে পারে না। যেসব সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে এবং এর গবেষণায় অর্থ ব্যয় করেছে, এখন তারাই শুধু টিকা তৈরি করতে পারে। কিন্তু টিআরআইপিএস লাঘব হলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্থাগুলি ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে। ফলে টিকার ব্যাপক উৎপাদন ও দ্রুত টিকাকরণের মাধ্যমে বিশ্বকে করোনামুক্ত করা যাবে। উৎপাদন বাড়ায় টিকার দামও করবে। এর উপকার পাবে ছোট রাষ্ট্রগুলিও। কেন না বিশ্বের অনেক ছোট দেশ এখনও এই ভ্যাকসিনের সুবিধা পায়নি। এমন কী ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশ ভারত-সহ অনেক দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতিও দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: লোকাল, প্যাসেঞ্জারের পর এবার বাতিল শতাব্দী-রাজধানী-দুরন্তও

২০২০ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভারতও টিআরআইপিএস থেকে করোনার ভ্যাকসিনকে দূরে রাখার প্রস্তাব দেয়। আমেরিকা প্রাথমিকভাবে এটি সমর্থন করেনি, তবে ভারতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ যে ভাবে ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তার করেছে, তা দেখে আমেরিকা তার অবস্থান বদলেছে। ভারত আফ্রিকার প্রস্তাব সম্পর্কে ইতিবাচক ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছে ইইউ-এর পক্ষ থেকে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) ক্যাথরিন তাইয়ের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সঙ্কট চলছে। এখন একটি অভূতপূর্ব সময় এবং এটি কাটাতে বিশেষ পদক্ষেপ করা দরকার। আমাদের প্রশাসন বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে। তবে এই অতিমারি শেষ করতে হলে মজুত করোনার ভ্যাকসিনকে বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার থেকে সরানো প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধীনে আলোচনায় এটি সমর্থন করব। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এবং যতটা সম্ভব মানুষের মধ্যে কার্যকর পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন দেওয়ায় সমর্থন করি। আমেরিকান জনগণের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ ইতিমধ্যে নিরাপদ। আমরা ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়াতে এবং বেসরকারি ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে এটির বিতরণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। আমরা ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়েও কাজ করব।”

আরও পড়ুন: সতর্ক বার্তা এল তৃতীয় ঢেউয়ের! আপনার অসাবধানতা বিপদ বাড়াবে আপনার শিশুর

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর আমেরিকান সহযোগীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরনজিৎ সিং সাঁধু সেখানে সরকারি পর্যায়ে এবং মার্কিন সংসদ সদস্যদের মধ্যে এই বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে উত্থাপন করছিলেন। ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক সমর্থন হিসাবে স্বাগত জানিয়েছে।