একরত্তির গলা শুকিয়ে কাঠ, দুধের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে মা, কাবুলে লড়াই এক ভারতীয় নারীর
কাবুলে আটকে থাকা ওই মহিলার মা বলেন, "ভারতীয় দূতাবাস থেকে তিনদিন আগে ওদের বলা হয়েছিল বিমানবন্দরে আসতে। গুরুত্বপূর্ণ নথি ছাড়া সঙ্গে কোনও ব্যাগ বা ভারী জিনিস আনতেও বারণ করা হয়েছিল।"
কাবুল: কোলে দুই বছরের ছেলে, খিদের জ্বালায় অনবরত কেঁদেই চলেছে সে। অসহায়ের মতো একটু জল ও দুধের খোঁজে চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন মা। দূতাবাসের নির্দেশে তিনদিন আগেই কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে পৌঁছে গেলেও এখনও ডাক আসেনি তার, তাই দেশেও ফিরতে পারছেন না। একদিকে তালিবানের ভয়, অন্যদিকে একরত্তি শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা- কীভাবে এক ভারতীয় মেয়ের দিন কাটছে কাবুলে, তা জানালেন তাঁর মা।
গত সপ্তাহের রবিবার তালিবানরা কাবুলে প্রবেশ করতেই ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছিলেন ৩২ বছরের ওই ভারতীয়। স্বামী আফগান, তাঁর হাত ধরেই ভিন দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। রয়েছে দুই বছরের একটি ফুটফুটে ছেলেও। অতীতে তালিবান শাসন কীরকম ছিল, তা স্বচক্ষে না দেখলেও বিগত এক মাস ধরেই গোটা দেশ জুড়ে তৈরি উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তালিবানরা নিজেদের জয় ঘোষণা করতেই ক্রমাগত চেষ্টা করেছেন ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার।
ভারতীয় বায়ু সেনার বিমানে ইতিমধ্যেই চার দফায় কয়েকশো ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হলেও এখনও আটকে রয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যেই একজন ওই মহিলা। তাঁর মা জানান, শেষবার যখন মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তখন সে জানিয়েছিল বিগত তিনদিন ধরে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরেই বসে রয়েছে সে। সঙ্গে করে কিছুই আনেননি।
শনিবার একটি সাক্ষাৎকারে কাবুলে আটকে থাকা ওই মহিলার মা বলেন, “ভারতীয় দূতাবাস থেকে তিনদিন আগে ওদের বলা হয়েছিল বিমানবন্দরে আসতে। গুরুত্বপূর্ণ নথি ছাড়া সঙ্গে কোনও ব্যাগ বা ভারী জিনিস আনতেও বারণ করা হয়েছিল। বিগত তিনদিন ধরে ওরা বিমানবন্দরের সামনেই অবস্থিত একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে রয়েছে। প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ জন ভারতীয় রয়েছে। সেখান থেকে বের হতে বারণ করা হয়েছে সবাইকেই।”
গতকাল তালিবানদের হাতে ১৫০ জন বন্দি হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গতকাল (শুক্রবার) রাত ১২টা নাগাদ তাদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস আসে। সকাল ১১টা অবধি তারা বাসের ভিতরেই বসেছিল। তারপরই হঠাৎ তালিবানরা আসে এবং ১৫০কে বন্দি বানিয়ে নিয়ে চলে যায়। আমার জামাই কাছেই থাকে। ও নিজের ছোট ভাইকে ফোন করেছিল। সেই আমার মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।”
তালিবানরা কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলকে ছেড়ে দেওয়ায় ফের সবাই ঘরে ফেরার জন্য বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে মেয়ের গলা শুনেই উদ্বেগ বুঝতে পেরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “তিনদিন ধরে রাস্তায় রয়েছে ওরা। আমার নাতিকে খাওয়ানোর জন্য সামান্য দুধটুকুও নেই ওর কাছে। এমনকি খাবার জলও নেই।”
মেয়ে ও নাতির চিন্তায় উদ্বিগ্ন বৃদ্ধা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, দ্রুত যেন তাঁর মেয়ে ও দুই বছরের নাতিকে সুরক্ষিতভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আরও পড়ুন: ‘ওরা দরজায় দরজায় ঘুরছে? যে কোনও সময় মেরে ফেলবে’, ঝুঁকি নিয়েই অডিয়ো পাঠালেন মহিলা