Israel: নিজেদেরই ৩ নাগরিককে হত্যা ইজরায়েলের, তাও যুদ্ধে মেতে নেতানিয়াহু

Israel: একজন ইজরায়েলি সামরিক কর্তা জানিয়েছেন, ওই তিন পণবন্দিদের সম্ভবত অপহরণকারীরা ওখানে ফেলে রেখে পালিয়েছিল। কাজেই, সৈন্যদের আচরণ ইজরায়েলের নীতির পরিপন্থী ছিল। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে। তবে, যুদ্ধের রাস্তা থেকে সরবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।

Israel: নিজেদেরই ৩ নাগরিককে হত্যা ইজরায়েলের, তাও যুদ্ধে মেতে নেতানিয়াহু
চাপের মুকেও যুদ্ধ ছাড়তে নারাজ নেতানিয়াহুImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 17, 2023 | 9:31 AM

গাজা সিটি: তাদের গায়ে শার্ট ছিল না। তারা সাদা পতাকাও নেড়েছিল। তারপরও, তাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। গত শুক্রবার গাজা উপত্যকায় তিন ইজরায়েলি পণবন্দিকে হত্যা করেছে ইজরায়েলের সেনারাই। সামরিক কর্তাদের মতে, ভুলবশতই নিজেদের লোকদের হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। তবে, এই গুরুতর ভুলের পরও, গাজায় ইজরায়েলি সামরিক অভিযান বন্ধের কোনও ইঙ্গিত দেননি ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এই হত্যাকাণ্ড, ‘পুরো দেশের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে’ বলেও, তিনি জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে আগের থেকেও আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইজরায়েল।

গত শুক্রবার, গাজা সিটির শিজাইয়াহ এলাকায় ইজরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গিয়েছে, ইয়োতাম হাইম, সমর তালালকা এবং অ্যালোন শামরিজ নামে তিন ইজরায়েলি নাগরিকের। তিনজনেরই বয়স ছিল কুড়ির কোঠায়। ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল হামাস, সেই সময়ই তাদের পণবন্দি করা হয়েছিল। শুক্রবার শিজাইয়াহ এলাকায় হামাসের সঙ্গে ভয়ঙ্কর লড়াই চলছিল ইজরালে বাহিনীর। ইজরায়েলি সামরিক কর্তারা জানিয়েছেন, ইজরায়েলি সৈন্যরা যেখানে ছিল, তার কাছাকাছি একটি ভবন থেকে বের হয়েছিলেন ওই তিনজন। তাদের গায়ে শার্ট ছিল না, একটি সাদা পতাকা নেড়ে তারা বোঝাতে চেয়েছিল, তাদের থেকে সেনাদের কোনও হুমকি নেই। তারপরও সঙ্গে সঙ্গে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। দুজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল। তৃতীয়জন হিব্রু ভাষায় সাহায্যের জন্য চিৎকার করে ভবনে ফিরে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

একজন ইজরায়েলি সামরিক কর্তা জানিয়েছেন, ওই তিন পণবন্দিদের সম্ভবত অপহরণকারীরা ওখানে ফেলে রেখে পালিয়েছিল। কাজেই, সৈন্যদের আচরণ ইজরায়েলের নীতির পরিপন্থী ছিল। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর প্রধান হার্জি হালেভির দাবি, লড়াইয়ের মধ্যে চাপের মুখে এই ভুল করে ফেলেছে ইজরায়েলি সেনা। পণবন্দিদের জীবিত ফিরিয়ে আনা ইজরায়েলি সেনার বাধ্যবাধকতা এবং দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন তিনি। এর আগে নভেম্বর মাসে, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। সেই সময় ইজরায়েলি কারাগার থেকে প্যালেস্তিনীয় বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ১০০ জনেরও বেশি ইজরা.য়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দিয়েছিল হামাস। তাহলে কি ফের সেই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করবে ইজরায়েলি সরকার?

শনিবার তাঁর ভাষণে কিন্তু নেতানিয়াহু অন্য ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পণবন্দি উদ্ধারের জন্য নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে, তার জন্য তীব্র সামরিক চাপ বজায় রাখাটা জরুরি বলে জানিয়েছেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেছেন, “এই হত্যাকাণ্ড আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। এটা গোটা দেশের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু, আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছি। বিজয় না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে আগের থেকে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যতক্ষণ না আমরা হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারছি, আমাদের সমস্ত পণবন্দিদের দেশে ফিরিয়ে না আনতে পারছি এবং গাজায় কোনও সন্ত্রাসবাদী উপাদান না থাকা নিশ্চিত করতে পারছি, ততক্ষণ লড়াই চলবে। আমি সমগ্র বিশ্বকে বলতে চাই, এটা ‘রাজনীতি’ নয়, এটা আমাদের নীতি। আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এটাই চায়।”

তবে, এই ‘ভুলবশত’ হত্যাকাণ্ডের পর, ইজরায়েলি পণবন্দীদের মুক্ত করতে হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করার জন্য চাপ বেড়েছে। ইজরায়েলি নাগরিকদের অনেকেই দাবি করছেন, যুদ্ধ বন্ধ করে হামাসের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনায় বসা উচিত নেতানিয়াহুর। এর মধ্যে, শুক্রবার গভীর রাতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা, মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া ইউরোপে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানির সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, হামাস বলেছে, “আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বন্দী বিনিময়ের নিয়ে আমরা আর কোনও আলোচনা করতে রাজি নই।”