Russia-Ukraine: ৩ বছর লড়েও জিততে পারেনি রাশিয়া, ধারে-ভারে ছোট হয়েও কোন কায়দায় রাশিয়াকে আটকে দিচ্ছে ইউক্রেন?

Russia-Ukraine: ষোড়শ শতাব্দীতে কোরিয়া আক্রমণ করে জাপান। দু-লাখ প্রশিক্ষিত সামুরাইকে নিয়ে সমুদ্রপথে এগোন শুরু করেন জাপানের সম্রাট হিদেইয়োশি। নৌযুদ্ধে কোরিয়ার কৌশলের কাছে জাপানের জাহাজগুলি সলিল সমাধি নেয়।

Russia-Ukraine: ৩ বছর লড়েও জিততে পারেনি রাশিয়া, ধারে-ভারে ছোট হয়েও কোন কায়দায় রাশিয়াকে আটকে দিচ্ছে ইউক্রেন?
প্রতীকী ছবি Image Credit source: Getty Images
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 12, 2025 | 11:03 PM

ব্রিটেন, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, আফগানিস্তান, কোরিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলির মিল কোথায়? এখন অনেকেই বলেন যুদ্ধের প্রায় তিন বছর হয়ে গেল। রাশিয়ার মতো এতো শক্তিশালী একটা দেশ এতদিনেও তুলনায় অনেক ছোট ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিততে পারল না কেন! আপনাদের অনেকের মনেও হয়তো এই প্রশ্নটা জাগে। সেই সূত্রেই আসছে এতগুলি দেশের নাম। ব্রিটেন, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, আফগানিস্তান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম। এইসব দেশগুলি কখনও না কখনও নিজেদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে যুদ্ধে হারিয়েছে। গায়ের জোরে নয়। বুদ্ধির জোরে। ব্রিটেনের কথা বললেই বিষয়টা অনেকটা পরিষ্কার হবে! ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপ। ব্রিটেন তখন আজকের মতো তার প্রতিবেশীদের মধ্যে গায়ের জোরে সেরা নয়। পনেরোশো অষ্টআশি। স্পেনের নৌসেনা তখন ইউরোপে অজেয়। স্প্যানিশ আর্মাডার নাম শুনলে সব দেশ ভয়ে কাঁপে। একশো তিরিশটা যুদ্ধজাহাজে স্পেনের আট হাজার নৌসেনা ইংলিশ চ্যানেলের দিকে এগোতে শুরু করল। শোনা যায় ভয় পেয়ে রানি এলিজাবেথ সেদিন ব্রিটিশ জলদস্যুদের ডেকে পাঠান। বলেন, তোমাদের কোনও শাস্তি দেব না। শুধু দেশ বাঁচাতে এখন আমাদের নৌ-সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্পেনের সঙ্গে যুদ্ধ করো। স্প্যানিশ আর্মাডার সেই অভিযান এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌ-সমাবেশ। 

ব্রিটিশ সেনাপতি ফ্রান্সিস ড্রেক দেখলেন সরাসরি লড়াই করে পারা যাবে না। তিনি হিসেব কষলেন কখন ইংল্যান্ড থেকে স্পেনের দিকে হাওয়া বয়। আর আর্মাডাকে ব্রিটিশ উপকূলের দিকে একটু এগিয়ে আসার সুযোগ দিলেন তিনি। স্পেনমুখী হাওয়া যেই না বইতে শুরু করল অমনি ড্রেক নিজেদের কয়েকটা জাহাজে পাল খাটিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দিলেন। হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে সেই জাহাজ গিয়ে ঠেকলো স্পেনের জাহাজের গায়ে। পুড়ে ছারখার হয়ে গেল স্প্যানিশ আর্মাডা। 

ষোড়শ শতাব্দীতে কোরিয়া আক্রমণ করে জাপান। দু-লাখ প্রশিক্ষিত সামুরাইকে নিয়ে সমুদ্রপথে এগোন শুরু করেন জাপানের সম্রাট হিদেইয়োশি। নৌযুদ্ধে কোরিয়ার কৌশলের কাছে জাপানের জাহাজগুলি সলিল সমাধি নেয়। আবার ধরুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কথা। উনিশশো চল্লিশ সালে মুসোলিনি গ্রিস আক্রমণ করেন। ইতালির পাঁচ লাখ সেনা। গ্রিসের দু-লাখ। বর্ষাকালে পাহাড়ি এলাকা দিয়ে গ্রিসে ঢোকার চেষ্টা করে ভুল করেছিলেন নাজি একনায়ক। পাহাড় থেকে নেমে আসা কাদার স্রোতে আটকে পড়ে মুসোলিনির বাহিনী। অতঃপর রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন। ভিয়েতনামে মার্কিন সেনার কী দুর্দশা হয়েছিল, সেকথা তো আমরা সবাই জানি। এবার ধরুন আফগানিস্তান। ভারত থেকে ফেরার পথে আফগানিস্তানেই মারা যান আলেকজান্ডার। ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা। বিশ্বের তিন বড় শক্তির কেউই আফগানিস্তান থেকে জিতে ফিরতে পারেনি। আফগান ল্যান্ড কখনও জয় করা যায়নি। বাকি রয়ে গেল ফিনল্যান্ড। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার কথাও বেশ চমকপ্রদ। উনিশশো একচল্লিশে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেন। যা ইতিহাসে অপারেশন বার্বারোসা বলে পরিচিত। মস্কোর কিছুটা দূরে জার্মান বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখেন স্তালিন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন শীত আসার জন্য। শীত আসে। তাপমাত্রা নেমে যায় প্রায় মাইনাস চল্লিশে। বরফে জমে যায় জার্মান ট্যাঙ্ক। শীতে কাঁপতে কাঁপতে পালাতে বাধ্য হয় জার্মান সেনা। ট্যাঙ্ক তৈরিতে রাশিয়া বরাবরই সেরা। ওই ঠাণ্ডায় সেদিন জার্মান ট্যাঙ্ক বসে গেলেও রুশ ট্যাঙ্কগুলি সচল ছিল। তবে অপারেশন বার্বারোসায় রাশিয়ারও ক্ষতি হয়। আট মাসে প্রায় নব্বই হাজার রুশ সেনা নিহত হন। আর এখন আমেরিকা বলছে ইউক্রেনের পাল্টা মারে নাকি এক লক্ষ রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। অপারেশন বার্বারোসা চলেছিল রাশিয়ার ঘরের মধ্যে। হিটলারের বাহিনীর হাতে ছিল দুর্দান্ত সব অস্ত্রশস্ত্র। সেই তুলনায় ইউক্রেনের ভাঁড়ার তো একেবারে খালি। আর এবার যুদ্ধটাও হচ্ছে ইউক্রেনের মাটিতে। মস্কো থেকে অনেক দূরে। তার ওপর রাশিয়ার হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের সম্ভার। এরপরও এত ক্ষয়ক্ষতি কেন? এই প্রশ্নটাই তো উঠছে। 

এখানেই আসছে ফিনল্যান্ডের প্রসঙ্গ। উনিশশো উনচল্লিশ সালে স্তালিন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করেন। রাশিয়ার দশ লক্ষ সেনা। ফিনল্যান্ডের চার লক্ষ। রাশিয়ার হাতে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক। যুদ্ধবিমান। আধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র। সেই তুলনায় ফিনিশ আর্মির শক্তি বলতে কিছুই নেই। স্তালিন ভেবেছিলেন এক সপ্তাহে ফিনল্যান্ড দখল করা হয়ে যাবে। রাশিয়া-ফিনল্যান্ড সীমান্তে ফিনল্যান্ডের সুয়োমাসলমি শহরে যুদ্ধ চলল এক মাস। ফিনিশদের প্রবল প্রতিরোধের সামনে সেদিন ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় স্তালিনের সেনা। কী হয়েছিল জানেন? ওই এলাকাটা ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। গ্রামীণ ফিনল্যান্ডে রাস্তাঘাট ছিল সরু আর খুব খারাপ। ফলে রাশিয়ান ট্যাঙ্কগুলো পাশাপাশি এগোতে পারেনি। তারা সিঙ্গল ফাইলে একটার পিছনে একটা এভাবে এগোতে বাধ্য হয়। ফিনল্যান্ড তখন লাইন ধরে এগোতে থাকা রুশ ট্যাঙ্কগুলির মধ্যে প্রথম আর শেষটাকে একসঙ্গে ধ্বংস করা শুরু করল। তাতে মাঝের ট্যাঙ্কগুলো আটকে গেল। এবার আকাশ থেকে বোমা ফেলে ফিনিশ বায়ুসেনার পাইলটরা আটকে পড়া রুশ ট্যাঙ্কগুলিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিলেন। এটা ছিল ফিনিশদের যুদ্ধজয়ের রেসিপি। যাকে বলা হয় মোত্তি ট্যাকটিক্স। অপারেশন বার্বারোসায় রাশিয়াকে জিতিয়েছিল তাদের ট্যাঙ্ক। ফিনল্যান্ডে উইন্টার ওয়ারে ট্যাঙ্কই রাশিয়াকে ডুবিয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধেও সেটাই হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন। তাদের মতে ইউক্রেনের বাহিনী রুশ ট্যাঙ্ককে থামিয়ে দেওয়ায় পুতিন আবার মিসাইলে ফিরে গেছেন। আর রাশিয়া মিসাইল হামলা বাড়াতেই প্রশ্ন উঠছে যে পুতিনের নিশানায় কি শুধুই ইউক্রেন? উত্তর হল, না। রাশিয়ার টার্গেটে আছে ইউরোপের আরও অনেক দেশ। এমনটাই মত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একটা বড় অংশের।