Christmas Card: বিতর্কের কারণে ১৭৭ বছর আগে ব্যান হয়েছিল বিশ্বের প্রথম ক্রিসমাস কার্ড
Christmas Card: ১৮৪৩ নাগাদ বিশ্বে প্রথম যে-ক্রিসমাস কার্ডটি বিক্রির উদ্দেশ্যে ছাপা হয়েছিল লন্ডন থেকে, প্রকাশের পর মোটেই সেটি জনসমাদর পায়নি। বরং সেই ভিক্টোরিয়ান যুগের ব্রিটিশ সমাজে নিন্দের ঝড়ে, জনরোষের চাপে প্রচারই বন্ধ করে দিতে হয় কার্ডটির।
সামনেই বড়দিন, সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের কলকাতার রাস্তাও সেজে উঠবে বাহারি আলো, ক্রিসমাট ট্রি আর সান্টাক্লজে। তবে ক্রিসমাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও একটি ঐতিহ্য। গ্রিটিংস কার্ড। বড়দিন মানেই নানা পরিচিতজনের পাঠানো নানা রঙের শুভেচ্ছাপত্র। আর্চিজ থেকে শুরু করে নানা কোম্পানির তৈরি গ্রিটিংস কার্ড বাঙালির এক নস্টালজিয়া। কিন্তু বিশ্বের প্রথম গ্রিটিংস কার্ড কোনটি, আর তাকে ঘিরে থাকা বিতর্কের কথা অনেকেই জানেন না।
১৮৪৩ নাগাদ বিশ্বে প্রথম যে-ক্রিসমাস কার্ডটি বিক্রির উদ্দেশ্যে ছাপা হয়েছিল লন্ডন থেকে, প্রকাশের পর মোটেই সেটি জনসমাদর পায়নি। বরং সেই ভিক্টোরিয়ান যুগের ব্রিটিশ সমাজে নিন্দের ঝড়ে, জনরোষের চাপে প্রচারই বন্ধ করে দিতে হয় কার্ডটির। অথচ কালের পরিহাস এমনই, গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বোস্টন শহর থেকে অনলাইনে আবারও বিকোতে শুরু করেছে সেই কার্ডটি। প্রথম প্রকাশের ১৭৭ বছর পর, কার্ডটি সংগ্রহ করা যাচ্ছে। কিন্তু কী এমন ঘটেছিল, যার দরুন সেই কার্ডের প্রচারই বন্ধ হয়ে যায় তখন?
বোস্টন শহরের পুরোনো বই আর পাণ্ডুলিপির কারবারি মারভিন গেটম্যান গত বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তাঁর সংস্থার মাধ্যমে অনলাইনে দুর্লভ সেই কার্ড বিক্রি করতে শুরু করেন। কার্ডের বয়ান: ‘আপনাকে মেরি ক্রিসমাস ও শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।’ ওই কার্ডটির ছবিতে এক ব্রিটিশ পরিবার রেড ওয়াইনের গ্লাস হাতে কার্ডের প্রাপককে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
উনিশ শতকে, বহু ব্রিটিশই মদ্যপানের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তাই, ছবিটিকে রীতিমতো অশালীন মনে করেছিলেন তাঁরা। ওই ছবিতে এক নাবালিকাকে জনৈক প্রাপ্তবয়স্কের গ্লাস থেকে ওয়াইনে চুমুক দিতে দেখা যাচ্ছে এটাই ছিল তাঁদের মূল আপত্তি। তখনকার রক্ষণশীল সমাজের প্রবল আপত্তিতে কার্ডটি শেষ অবধি বাতিল করতে হয়। শুধু তাই নয়, পরবর্তী কার্ডটি তৈরি করতে বছর তিনেক সময়ও লেগে যায়।
এই কার্ডটিকে ফের ফিরিয়ে নিয়ে এল নিউ ইয়র্ক রাজ্যের কিংস্টন শহরে অবস্থিত ‘ব্যাটলডোর লিমিটেড’। তাদের খ্যাতি পুরোনো বইপত্র আর শিল্পদ্রব্যের সংগ্রাহক হিসেবেই। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাস্টিন শিলারের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে একই গ্লাসে শিশুরা মদ্যপান করছে, এমন ছবি তখনকার গোঁড়া সমাজ মানতে পারেনি। যার ফলে ক্রুদ্ধ হয়ে তারা এই কার্ডটির প্রসার বন্ধ করার জন্য রীতিমতো প্রচার চালায়।
করোনা অতিমারীতে ব্যাবসাপত্তর লাটে ওঠার আগে থাকতেই নিজের কারবার অনলাইনে শুরু করেছিলেন গেটম্যান। তাঁর মতে, হাতে রং করা এই লিথোগ্রাফটি সম্ভবত কোনো বিক্রেতার নমুনা কপি ছিল। সেই সময়ে এই কার্ড মাত্র ১০০০ কপি ছাপা হয়েছিল যার দাম ছিল ১ শিলিং। বিশেষজ্ঞদের মতে কার্ডটি হয়তো এখন মাত্র ৩০ কপির মতোই পাওয়া যেতে পারে।
উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্মচারী, লন্ডনস্থিত ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা স্যার হেনরি কোলের পরামর্শে বিতর্কিত এই কার্ডটির নকশাকার ছিলেন শিল্পী জন ক্যালকট হর্সলি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে ক্রিসমাস আর নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো। পালপার্বণে শুভেচ্ছাপত্র পাঠানোর রীতিটিকে সর্বজনীন করে তোলার ক্ষেত্রে স্যার হেনরি কোলের ছিলেন পথিকৃৎ। ১৮৪৩-এর ডিসেম্বরে একই সপ্তাহে ওই কার্ডের বিকিকিনি আর চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস ‘এ ক্রিসমাস ক্যারল’এর প্রকাশ, দুটোই ঘটেছিল। একেই বলে বুঝি সমাপতন।