গলায় ধাতুর তৈরি রিং পরে তাক লাগিয়ে দেন এখানকার মহিলারা,জানুন অনন্য রীতির বিচিত্র কারণ

কয়ান জাতির মানুষরা থাইল্যান্ডে শরণার্থীদের মতো জীবনযাপন করেন। এই কারণে সেখানকার সরকার তাদের বেশিকিছু সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করে রেখেছে। এই জনজাতির মানুষের সরকারি আইডি কার্ড তৈরি করা হয় না, যে কারণে তাদের বাচ্চারা ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি পড়াশুনো করতে পারে না।

গলায় ধাতুর তৈরি রিং পরে তাক লাগিয়ে দেন এখানকার মহিলারা,জানুন অনন্য রীতির বিচিত্র কারণ
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 08, 2021 | 7:55 PM

এই পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বেশকিছু রীতি রেওয়াজ চলে আসছে, যার সম্বন্ধে জানলে অবাক হতে হয়। মানুষের বিশ্বাসেক সঙ্গে যুক্ত এই রেওয়াজ আজও প্রচলিত রয়েছে। বহু জনজাতি এং সম্প্রদায় নিজেদের পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, এই কারনে অতীতের অদ্ভুত পরম্পরাকে তারা আজও বাঁচিয়ে রেখে চলেছেন। এমনই একটি প্রথা মায়ানমারের এক জনজাতির মধ্যেও বহু বছর ধরে চলে আসছে।

উত্তর থাইল্যান্ড (Noth Thailand) আর মায়ানমারের বর্ডার অঞ্চলে বসবাস করে কারেনেনি (karenni Tribe) জনজাতি। এদের কয়ান লহবীও (Kayan Lahwi) বলা হয়ে থাকে। কয়ান জনজাতির মহিলারা নিজেদের ভীষণই অদ্ভুত বেশভূষার জন্য পরিচিত। এই জনজাতির মহিলারা নিজেদের গলায় অনেকটা প্যাঁচানো রিং পরেন, যা দেখে এমনটা মনে হয় যে গর্দান টানটান সোজা এবং তাদের মাথাটি সোনার একটা প্ল্যাটফর্মের উপর রাখা। তাঁদের এই রীতি বহুযুগ পুরনো আর বর্তমান এই জনজাতির মানুষরা জানেনও না যে কেন এই রীতির তারা পালন করেন।

প্রসঙ্গত প্রায় ২ দশক আগে কারেনেনি জনজাতি এবং মায়ানমার সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগে গিয়েছিল, তারপর কয়ান জনজাতির মানুষদের পালিয়ে গিয়ে থাইল্যান্ডের উত্তরদিকে পাহাড়ি এলাকায় বসতি স্থাপন করতে হয়েছিল।

এই কারণে এই জনজাতির মহিলারা গলায় রিং পরেন

এমনটা মনে করা হয়, মায়ানমারের গ্রামীণ এলাকায় ঠান্ডায় বাঘের উপদ্রব বেড়ে যায়, যারা মানুষের উপর হামলা করে। এই বাঘেরা আক্রমণ করার সময় মানুষের গলায় প্রহার করে। এই কারণে এখানকার মহিলারা যুগ যুগ ধরে নিজেদের গলা ধাতুর রিংয়ে ঢেকে রাখা শুরু করে। অন্য একটি মত অনুযায়ী, অতীতে অন্য জনজাতির মানুষ যখন হামলা করত, তারা এই জনজাতির মহিলাদের অপহরণ করে নিয়ে যেত। এই অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্যই মহিলারা গলায় ধাতব রিং পরা শুরু করেন। কারণ তাঁদের বিশ্বাস, এতে তাদের কম সুন্দরী লাগবে আর অন্য জনজাতির পুরুষরা তাদের অপহরণ করবে না। যদিও এই অদ্ভুত রীতি এই জনজাতির মহিলাদের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এই রিংয়ের কারণে মহিলাদের যথেষ্ট সমস্যাতেও পড়তে হয়। শৈশব থেকেই এই রিং পরিয়ে দেওয়ার কারণে মহিলাদের গলায় টান পড়েয আই কারণে তাদের গলার হাড়ও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

শরণার্থীদের মতো কাটান জীবন

কয়ান জাতির মানুষরা থাইল্যান্ডে শরণার্থীদের মতো জীবনযাপন করেন। এই কারণে সেখানকার সরকার তাদের বেশিকিছু সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করে রেখেছে। এই জনজাতির মানুষের সরকারি আইডি কার্ড তৈরি করা হয় না, যে কারণে তাদের বাচ্চারা ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি পড়াশুনো করতে পারে না। সরাকারি আইডি না থাকার কারণে তারা মেডিক্যাল ইনসিওরেন্সও পান না, যে কারণে হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা করাতেও বেশি টাকা খরচা হয়। এই জনজাতির জন্য মায়ানমারে গ্রাম তৈরি করা হয়েছে, তার বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই তাঁদের। তবে সারা বিশ্বের পর্যটকেরা এই অদ্ভুত রীতি রেওয়াজ পালন করা জনজাতির মানুষদের দেখতে আসেন, আর এই জনজাতির মানুষরা সেই পর্যটকদের নিজেদের তৈরি শিল্পকলার জিনিসপত্র বেচে অর্থ রোজগার করেন।

আরও পডুন: পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে আইফেল টাওয়ারের আকারের উপগ্রহ, জানুন কী হতে চলেছে