Sri Lanka Crisis: ঠিক কী কারণে, কীভাবে এই অবস্থা হল শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির?
Srilanka Crisis: ঠিক কী কীরণে, কীভাবে এই অবস্থা হল শ্রীলঙ্কার?
কলম্বো: বছর দুয়েক ধরেই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। সম্প্রতি সেই সঙ্কট চরমে পৌঁছেছিল। নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার প্রায় খালি, নেই ওষুধ, চিকিৎসা সংক্রান্ত সাজ-সরঞ্জাম, আকাশ-ছোঁয়া নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম – দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যেতেই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন সাধারণ মানুষ। ভয়ঙ্কর চাপের মুখে পড়ে, সোমবার পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ। কিন্তু, তাতেও ক্ষোভ ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিবাদী জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে শাসক দলের এক সাংসদের। কিন্তু, কীভাবে এরকম দেউলিয়া দশা হল ভারতের প্রতিবেশী এই দ্বীপরাষ্ট্রটির?
দ্বৈত সঙ্কট
বস্তুত দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। এর জন্য শুধু বর্তমান সরকার নয়, এর আগের সরকারের অদূরদর্শিতাকেও দায়ি করে থাকেন অর্থনতিবিদরা। তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণেই শ্রীলঙ্কা প্রায় বছর তিনেক আগেই দ্বৈত অর্থনৈতিক ঘাটতির মুখে পড়েছিল। ২০১৯ সালেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এই সঙ্কটের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এই দ্বৈত ঘাটতি হল – বাজেট ঘাটতি এবং বর্তমান হিসাবে ঘাটতি। কোনও দেশের আয়ের তুলনায় ব্যায়ের পরিমাণ বেশি হলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কোভিডে কর ছাড়
তবে, তারপরও শ্রীলঙ্কা এই অবস্থায় পৌঁছত না, এমনটাই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু, ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় বিরাট কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজাপক্ষ। ক্ষমতায় এসে তা কার্যকরও করেছিলেন। কিন্তু, এরপরই বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারি। যার জেরে শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্প ধাক্কা খেয়েছিল। এর ফলে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলির তালিকায় শ্রীলঙ্কার স্থান ক্রমে নেমেছে।
ঋণের ফাঁদে লঙ্কা
২০০৫ সাল থেকে শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সময় ঋণ ছিল ১১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০-এ দাঁড়ায় ২১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫ সালে বিলিয়ন এবং ২০২০ সালে কোভিড মহামারী চলাকালীন ৫৬.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে! গত কয়েক বছরে সেই দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ, দেশের জিডিপির থেকেও দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি
গত ২ বছরে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রার দামের ব্যাপক পতনের ফলে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকেই বৈদেশিক মুদ্রার ভাড়ার কমানো হয়। ২০১৮ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কার হাতে বৈদেশিক মুদ্রা ছিল ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে ২০২১ সালে তা নেমে এসেছিল ২ বিলিয়ন ডলারে।
কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন
দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষ এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা প্রায় নিজের পায়ে কুড়ুল মারার মতো। ওই বছর শ্রীলঙ্কা সরকার দেশব্যাপী রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তার বদলে জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল। কৃষিক্ষেত্রে এর ফল হয়েছে মারাত্মক। খাদ্যশস্য উৎপাদনে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ঘাটতি।
এরপর কী?
গত কয়েক মাস ধরে, সঙ্কট ক্রমে বাড়লেও, রাজাপক্ষ প্রশাসন ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড বা আইএমএফ-এর সাহায্য নিতে চাননি। কিন্তু, ফেব্রুয়ারির শেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর আর সেই জেদ ধরে বসে থাকতে পারেনি রাজাপক্ষ সরকার। এপ্রিল মাসেই আইএমএফ-এর কাছে হাত পাতার পরিকল্পনা নেয়। খুব শিগগিরই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্ভাব্য ঋণ কর্মসূচি আইএমএফ-এর আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। চিন ও ভারতের কাছেও জ্বালানি বিষয়ক সাহায্য চেয়েছেন রাজাপক্ষ। তবে, মাহিন্দা রাজাপক্ষর পদত্যাগের পর নজিরবিহীন হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কায়। সাধারণ মানুষের তীব্র ক্ষোভের মুখে শাসক দলের নেতারা। তাই, এই সকল পরিকল্পনাও আপাতত বিশ বাঁও জলে।