Zawahiri: ডাক্তার থেকে কীভাবে হয়েছিলেন লাদেনের ডানহাত? জ়ওয়াহিরির জীবন যেন সিনেমার গল্প

Ayman al-Zawahiri: প্রায় দুই দশক ধরে জ়ওয়াহিরিকে খুঁজছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মাথার দাম ছিল ২ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার। অথচ, জীবনের শুরুটা ছিল একেবারে অন্যরকম, মিশরের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম হয়েছিল তার।

Zawahiri: ডাক্তার থেকে কীভাবে হয়েছিলেন লাদেনের ডানহাত? জ়ওয়াহিরির জীবন যেন সিনেমার গল্প
ওসামার সঙ্গে জ়ওয়াহিরি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 07, 2022 | 9:49 PM

কাবুল: সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহান্তে এক মার্কিন ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয়েছে আল-জ়ওয়াহিরির। প্রায় দুই দশক ধরে তাঁর খোঁজ করছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী জ়ওয়াহিরিই ছিলেন আল কায়েদা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর মূল নীতি নির্ধারক। তাকে ধরার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য, ১৯৯৮ সালেই ২ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। অথচ, জীবনের শুরুটা ছিল একেবারে অন্যরকম। মিশরের কায়রোতে এক অভিজাত পরিবারে জন্ম হয়েছিল তার। সেখান থেকে কীভাবে বিশ্ব কাঁপানো জঙ্গি নেতা হয়ে উঠেছিল সে? আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ভয়ঙ্কর জঙ্গি নেতা সম্পর্কে।

জ়ওয়াহিরির ঠাকুর্দা, রাবিয়া আল-জ়ওয়াহিরি ছিলেন কায়রোর আল-আজ়হার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইমাম। তার মামা আবদেল রহমান আজম ছিলেন আরব লিগের প্রথম সচিব। পড়াশোনাতেও ভাল ছিল সে, ডাক্তারি নিয়ে পড়েছিল। তবে, অল্প বয়স থেকেই মিশরের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল জ়ওয়াহিরি। নিষিদ্ধ গোষ্ঠী ‘মুসলিম ব্রাদারহুডে’ যোগ দেওয়ার জন্য মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরপর সে তৎকালীন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। সাদাত হত্যার দায়ে মিশরে তার তিন বছর জেলও হয়েছিল।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে পাকিস্তানে চলে এসেছিল। সেই সময় আফগানিস্তানে সোভিয়েত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছিল মুজাহিদীনরা। সে মুজাহিদীনদের চিকিৎসা করা শুরু করেছিল। সেই সময়ই তার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের। ধীরে ধীরে সে আল-কায়েদার প্রধান উপদেষ্টা তথা আল কায়েদার অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হয়ে ওঠেন। ১৯৯৭ সালে মিশরের লুক্সরে বিদেশী পর্যটকদের গণহত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিল সে। বিন লাদেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন তিনি।

১৯৯৮ সালে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে হামলার আহ্বান জানিয়ে আল কায়েদা একটি ‘ফতোয়া’ জারি করেছিল। তাতে লাদেন-সহ যে পাঁচজন স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন জ়ওয়াহিরি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় যে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল, সেই ক্ষেত্রে বিমানকে ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনাও জ়ওয়াহিরির মাথা থেকেই এসেছিল বলে জানা যায়। ওই হামলার পর, বিন লাদেনের মতো সেও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তার উপর একাধিকবার মার্কিন বাহিনী হামলা চালিয়েছে। বারবারই সে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের তোরা বোরার হামলায় তার স্ত্রী-সন্তানদের মৃত্যু হয়েছিল। তবে সে বেঁচে গিয়েছিল। বহুবার তার মৃত্যুর খবর রটেছে। তারপরই সে কোনও ভিডিয়ো বার্তায় আবির্ভূত হয়েছে।

২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্য়াবটাবাদে ইউএস নেভি সিলের এক অভিযানে মৃত্যু হয়েছিল আল কায়েদা প্রতিষ্ঠাতা বিন লাদেনের। তার হত্যার পর, আল কায়েদার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ়ওয়াহিরিই আল-কায়েদার সর্বময় নেতা হয়েছিলেন। কিন্তু, লাদেনের আমলে আল কায়েদা গোষ্ঠী বিশ্বব্যাপী যে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তা পুনরুদ্ধার করতে পারেনি জ়ওয়াহিরি। একই সময়ে জিহাদি আন্দোলনের পরিসরে উল্কার মতো উঠে এসেছিল ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী। তবে তারপরও, লাদেনের মৃত্যুর এক দশক পরেও জঙ্গি সংগঠনটি গোটা বিশ্বেই হুমকি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। এর কৃতিত্ব জ়ওয়াহিরিরই। এবার তার মৃত্যুর পর, জঙ্গি সংগঠনটি আদৌ টিকে থাকে কি না, সেটাই দেখার।