Kolkata Municipal Corporation Election 2021: আবর্জনা থেকে তৈরি হচ্ছে চেয়ার-টেবিল! ধাপায় আমূল সংস্করণের মাঝে ‘বিধি বাম’ কর্মী সঙ্কট
কলকাতায় (Kolkata Municipal Corporation Election 2021) বর্তমানে ৪৫০০ মেট্রিক টন আবর্জনা নিত্যদিন ধাপায় পরে। সেই ধাপা নিয়েও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে কলকাতা পুর প্রশাসন। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে ডাম্পিং গ্রাউন্ড বর্তমানে আবর্জনা খালি করা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবর্জনা কিভাবে ফেলা যায় তা নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন।
কলকাতা: ছিঃ ছিঃ এত্তা জঞ্জাল! কলকাতার আনাচকানাচে ইতিউতি জঞ্জাল উঁকি মারলেও পুর প্রশাসনের দাবি, আবর্জনা দূরীকরণে অভূতপূর্ব কাজ করেছে তারা। এমনকী, জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বিভাগ নিয়ে রীতিমতো গর্বিত কলকাতা পুর প্রশাসন। গত ১০ বছরে কলকাতায় জঞ্জাল সাফাই পরিষেবায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলে প্রশাসন কর্তাদের দাবিকেও খুব একটা অস্বীকার করছে না বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধি বা প্রার্থীরাও। কিন্তু এর মধ্যেও কাঁটা হয়ে বিঁধে রয়েছে জঞ্জাল সাফাই বিভাগের বিপুল কর্মী সংখ্যার অভাব। স্থায়ী কর্মীদের আকালের জেরে অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। ফলে ১৪৪ ওয়ার্ডের কোথাও কোথাও কর্মীর অভাব পরিষেবায় বাধা তৈরি করছে।
আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও ‘বিধি বাম’ কর্মী সঙ্কট:
কলকাতায় ১৪৪ টি ওয়ার্ডে জঞ্জাল পৃথকীকরণ ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু আদতে দেখা গেল মাত্র ২৭ টি ওয়ার্ডে এই ব্যবস্থা চালু করা গিয়েছে। কারণ কর্মী সংকট। জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্তাদের কথায়, এই পৃথকীকরণ ব্যবস্থা প্রত্যেকটি ওয়ার্ড এ চালু করতে গেলে দিনপিছু প্রায় ৪৫০০ কর্মী প্রয়োজন। বর্তমানে কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বিভাগে সাফাই কর্মী রয়েছেন ১৪ হাজার। যার মধ্যে ৬ হাজার অস্থায়ী কর্মী। এখানেই শেষ নয় ওভারশিয়ার এবং সাব ওভারশিয়ার পদমর্যাদার যে পরিমাণে আধিকারিক প্রত্যেকটি ওয়ার্ড এ প্রয়োজন, তার প্রায় ৪০ শতাংশও নেই। ফলে আধুনিকমানের পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে গিয়ে কোথাও যেন এক সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্তাদের।
কর্তাদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো কলকাতা পুর এলাকার দৈনন্দিন পরিষেবা ছাড়াও নতুন করে যুক্ত হওয়া একাধিক কাজ করতে গিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে বিভাগের কর্মী-আধিকারিকদের। বর্তমানে কলকাতায় ১১৯ কম্প্যাক্টর স্টেশন, ৯৫টি মুভেবল কম্পেক্টর, হুকিং লোডার ৮০টি এবং জঞ্জাল তোলার জন্য ভাড়ায় নেওয়া গাড়ি রয়েছে ২০০ টি। বিভাগীয় আধিকারিকদের কথায়, এই ধরনের উন্নত মানের পরিকাঠামো গড়লেও, কর্মী আকাল ভয়ঙ্করভাবে সমস্যা তৈরি করছে। বিভাগীয় কর্তা বা আধিকারিকরা কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি আনলেও আদতে কোন সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। অথচ বছরের বছর আধিকারিকদের অবসরের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
ধাপায় আবর্জনার জায়গায় পার্ক
কলকাতায় বর্তমানে ৪৫০০ মেট্রিক টন আবর্জনা নিত্যদিন ধাপায় পরে। সেই ধাপা নিয়েও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে কলকাতা পুর প্রশাসন। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে ডাম্পিং গ্রাউন্ড বর্তমানে আবর্জনা খালি করা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবর্জনা কিভাবে ফেলা যায় তা নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। ১৯৮৬ সাল থেকে টানা কলকাতার আবর্জনা এই ধাপা ডাম্পিং গ্রাউন্ড ফেলা হয়। কলকাতায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে আবাসনের সংখ্যাও। ফলে আবর্জনা পরিবহণ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ধাপা ডাম্পিং গ্রাউন্ড মোট ৪৭.৪ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি। যার মধ্যে আগেই ১২.৪ হেক্টর জমি আবর্জনা একেবারে মিশিয়ে দিয়ে সেখানে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশে ‘ ক্যাপিং ‘ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নতুন বাগান তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পর্যটনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বাকি ৩৫ হেক্টর জমিতে আবর্জনা রয়েছে। বর্তমানে সেই জমিতে থাকা ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ চলছে।। যা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছে।
আবর্জনা থেকে চেয়ার-টেবিল
একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ার এবং মাধ্যমে আবর্জনা গুলিকে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলা হচ্ছে। তবে সব আবর্জনার একইরকম গুঁড়ো হচ্ছে না। তারও প্রকারভেদ রয়েছে। কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে খবর, “বায়ো মাইনিং ” পদ্ধতিতে যাবতীয় আবর্জনা বিভিন্ন প্রকার ভেদে গুঁড়ো করে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। জৈব সার তৈরিতে, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে, রাস্তা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে। আবর্জনা গুলোকে গুঁড়ো করার পর যেটুকু আবর্জনা বাড়তি হিসেবে বেঁচে যাচ্ছে সেগুলি অন্যত্র ব্যবহারের নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে। পুরসভা সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত আড়াই হেক্টর জমি খালি করা গিয়েছে। প্রায় দেড় লক্ষ মেট্রিকটন আবর্জনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গুঁড়ো গুঁড়ো করে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিউটাউন পাথরঘাটাতে আরো একটি জায়গাতে যাবতীয় নির্মাণশিল্পের আবর্জনা যাতে এভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা যায় তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আবর্জনা থেকে মেশিনের সাহায্যে সবথেকে ছোট ছোট যে টুকরোগুলি বেরোচ্ছে সেগুলো চলে চলে যাচ্ছে জৈব সার তৈরিতে। ২০ এম এম, ৪ এম এম, ৭৫ এম এম আকারের টুকরো করা হচ্ছে আবর্জনা। আবর্জনা থেকে নির্গত প্লাস্টিক দিয়ে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে টেবিল-চেয়ার বা দরজা জানালার কভার তৈরি করা হচ্ছে। পুরসভার জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্তাদের কথায়, আধুনিক পরিকাঠামো গড়লেও, কর্মীর অভাব ভোগাচ্ছে পুরসভাকে।
আগামী দিন থেকে কলকাতা পুরসভার যাবতীয় আবর্জনা যাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড ফেলা হয় এবং পৃথকীকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে আবর্জনা সহজেই পরিষ্কার করা যায় তার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। বিরোধীরা অবশ্য জানাচ্ছে, পরিকাঠামো গড়লেও কর্মীই তো নেই। সকালে এবং বিকেলে আবর্জনা পরিষ্কার কথা জোর গলায় বলেন তৃনমুল প্রশাসনের নেতারা। আদতে কর্মী না থাকায় আবর্জনা সঠিকভাবে সঠিক সময় পরিষ্কার করা যায় না। আবার আবর্জনা পরিষ্কার করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমিয়ে রাখলেও তা তুলে নিয়ে যাবার লোক থাকে না। তাহলে আবর্জনা সাফাইয়ে কলকাতা কিভাবে এক নম্বর হলো? পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থ খরচ করলেও মজদুর নিয়োগে কোনরকম গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসনের কর্তারা। আর সে কারণেই আজকে চরম সমস্যায় পড়ছেন শহরের বাসিন্দারা।
‘কী কয় কলকাতা’ আর খবর পড়ুন
আরও পড়ুন- কে সাবধান? বাড়ির মালিক! ভাড়াটে! পথচারী! সরকার! না খোদ বিপজ্জনক বাড়িই!