Raju Srivastava Death: উনি আছেন মানেই মেহেফিল মেঁ জান, রাজু শ্রীবাস্তবের মৃত্যুতে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান ও বাচিকশিল্পী মীর

Mir Afsar Ali: তীক্ষ্ণ অবজ়ার্ভেশন ছিল রাজু শ্রীবাস্তবের, সব থেকে বড় হাতিয়ার। তিনি কত মানুষের মিমিক্রি করেছেন, যাঁদের বাস্তবে আমরা চিনি না। ওঁদের ধরনটাকে চিনি।

Raju Srivastava Death: উনি আছেন মানেই মেহেফিল মেঁ জান, রাজু শ্রীবাস্তবের মৃত্যুতে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান ও বাচিকশিল্পী মীর
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 21, 2022 | 4:47 PM

প্রয়াত কমেডিয়ান রাজু শ্রীবাস্তব। খবর পাওয়া মাত্রই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন মীর আফসর আলি, লেখেন ইশ্বরের মন খারাপ, তিনি হাসতে চেয়েছিলেন, তাই রাজু ভাইকে ডেকে নিলেন। মীরের স্মৃতিতে আজও তরতাজা রাজু শ্রীবাস্তবের সঙ্গে সাক্ষাৎ। কখনও ‘মীরাক্কেল’-এ, কখনও প্রথম আলাপে কাছ থেকে চিনে নেওয়ার পর্ব। রাজু শ্রীবাস্তবকে খুব কাছ থেকে পাওয়া, যে মানুষটি ‘মীরাক্কেল’-এ এসে মীরকেই খুঁজেছিলেন—আজ তাঁর প্রয়াণে শোকাহত মীর TV9 বাংলা-কে জানালেন তাঁর চোখে রাজু শ্রীবাস্তবের ছবিটা ঠিক কেমন… 

আমার সঙ্গে রাজু ভাইয়ের প্রথম আলাপ হয়েছিল ২০০৪-এ। যখন ‘গ্রেট ইন্ডিয়া লাফটার চ্যালেঞ্জ’-এ আমি প্রতিযোগী হয়ে গেলাম। পূর্ব ভারত থেকে আমিই একমাত্র প্রতিযোগী ছিলাম। সেই সময়ে আমরা আন্ধেরিতে একটি হোটেলে উঠেছিলাম। আমার মনে আছে হোটেলের নামও, চ্যানেলের সমস্ত প্রতিযোগীদের একসঙ্গে সেখানে রাখা হয়েছিল। আমার ভাবতেই অবাক লাগে যে, তিনি আমার সহ-প্রতিযোগী ছিলেন। তখন তাঁর ১৮-২০ বছরের অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে, বড়পর্দায়ও তিনি কাজ করে ফেলেছেন ততদিনে। মানে ১৮-২০ বছর ধরে স্ট্যান্ডআপ কমেডি তিনি তখনই করে ফেলেছেন। যে ফরম্যাটে তারপর তাঁকে দেখতে অভ্যস্থ হলাম—টেলিভিশনে বা যেখানেই হোক—তার আগে থেকেই কিন্তু তিনি স্টেজ শো করতেন। পাড়ার শো, ক্লাবের শো, সবই করেছেন, প্রচুর কাজ করেছিলেন। তিনি প্রায় সেলিব্রিটি প্রতিযোগীই ছিলেন তখন। কারণ বলিউড থেকে যে সব সেলিব্রিটি বিভিন্ন সময়ে আসতেন ‘গ্রেট ইন্ডিয়া লাফটার চ্যালেঞ্জ’-এ, তাঁরা সকলেই চিনতেন রাজু শ্রীবাস্তবকে। ফলে সেই সাক্ষাৎটা আমার সঙ্গে হয়েছিল, যখন তিনি কাউকেই অনুভব করতে দেননি যে তুমি অনামী কেউ একজন। কেউ তোমাকে চেনে না। এটা তিনি কোনওদিনও অনুভব করতে দেননি।

সেই মানুষটার সঙ্গে ২০০৪-এ আলাপ হওয়া, সেখান থেকে ২০১০। আমার নিজের শো ‘মীরাক্কেল’। সিজ়ন ৫, উনি গ্র্যান্ড-ফিনালেতে এলেন। তিনি প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, “যে মীরকে আমি দেখেছিলাম ২০০৪-এ, সে ঠিক তার ২ বছর পর ২০০৬-এ ‘মীরাক্কেল’ শুরু করল। তারপর তার ৪ বছর বাদে আবার, ২০১০-এ আমি তারই শো-এর কোনও এক সিজ়নে অতিথি বিচারক হয়ে এসেছি। নিশ্চয়ই চ্যানেলের আমন্ত্রণে… কিন্তু আমি এই মানুষটার খোঁজেই ছিলাম, যে আমার সামনে ছিল ২০০৪-এ চুপচাপ বসে থাকত।”

‘গ্রেট ইন্ডিয়া লাফটার চ্যালেঞ্জ’-এ আমরা ঘরের মধ্যে আড্ডা মারতাম। আমি সাধারণত চুপচাপই থাকতাম, ছিলাম সাইলেন্ট অবজ়ার্ভার। সুনীল পাল, নবীন প্রভাকর, রাজু শ্রীবাস্তব… এরা নিজেদের মধ্যে ইয়ার্কি-ঠাট্টা করছে, আমি পাশে বসে চুপচাপ দেখতাম সেটা। ওই স্মৃতিগুলো থেকে যাবে, ওগুলো সব সময়ই স্পেশ্যাল ছিল। তিনি খুব খুশি ছিলেন। আবার ‘মীরাক্কেল’-এ ফিরে আসি, ওর জন্য এটা খুব গর্বের একটা বিষয় ছিল। উনি সাধারণত যেভাবে বলছিলেন, নিজেকে এক্সপ্রেস করছিলেন, ওর জন্য সত্যিই গর্বের বিষয় ছিল যে, তিনি মীরাক্কেলে এসেছেন। আর আমাদের জন্য তো বটেই। আমরা সকলে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম, বলিউড থেকে হয়তো অন্য কোনও সেলিব্রিটি আসলে এতোটা খুশি হতাম না। একটা কমেডি শো, তার ফাইনাল, সেখানে তো স্টার কমেডিয়ানই আসবেন।

তীক্ষ্ণ অবজ়ার্ভেশন ছিল রাজু শ্রীবাস্তবের, সব থেকে বড় হাতিয়ার। তিনি কত মানুষের মিমিক্রি করেছেন, যাঁদের বাস্তবে আমরা চিনি না। ওঁদের ধরনটাকে চিনি। যেমন গ্রামের একজন বুড়ো মোড়ল কীভাবে কথা বলবে, সেটা রাজু শ্রীবাস্তব দেখিয়ে দিচ্ছেন। এরকম মোড়ল হয়তো আমরা গ্রামে গিয়ে দেখতে পাই। নামে চিনি অথবা নামে চিনি না। রাজু শ্রীবাস্তব এই চরিত্রগুলোকে এক-একটা নাম দিয়েছেন। এবং জনপ্রিয় কমেডি বলতে আমরা যেগুলো বুঝি, সেটা আমরা রাজু শ্রীবাস্তবের কাজ থেকেই পেয়েছি। আমরা সিনেমায় প্রচুর কমেডিয়ান দেখেছি। নাম নিয়ে শেষ করা যাবে না। কিন্তু সিনেমায় যে কমেডিটা করতে দেখেছি তাঁদের, নিজস্ব প্রতিভার সঙ্গে মিশেছে স্ক্রিপ্ট রাইটারের লেখা সংলাপ। রাজু শ্রীবাস্তবের মতো মানুষ যেতা করতেন, সেটা ইম্প্রম্পটু। মুহূর্তে কিছু ভেবে ফেলা, কোনও এক পরিস্থিতিতে তখনই প্রতিক্রিয়া দেওয়া, প্রভৃতি।

এখন যাঁরা স্ট্যান্ডআপ কমেডি করছেন, এই যেমন কপিল শর্মা, এতো বড় নাম, নিজস্ব শো, সবার হাতেখড়ি কিন্তু রাজু শ্রীবাস্তবের হাত ধরে। সুতরাং আমরা কৃতজ্ঞ, যতদিন পরিশ্রমের ডালভাত রোজগার করে খাব, ততদিন ধন্যবাদ জানিয়ে যাব এই মানুষটাকে। রাজু শ্রীবাস্তব একা একটা শো টেনে নিয়ে যেতে পারবেন। এটা তাঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা একবাক্যে বলবেন। উনি আছেন মানেই মেহেফিল মেঁ জান… উনি ঠিক এভাবেই সকলের সঙ্গে মিশতেন। ভীষণ-ভীষণ জমিয়ে রাখতেন সবাইকে।