Aindrila Sharma Death: ঐন্দ্রিলার এক অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণে এই শহরে ফিরতেই হবে আমায়: শিখা শর্মা
Aindrila Sharma Death: কলকাতার ফ্ল্যাটটা তালাবন্ধ। সেখানে যেতে ইচ্ছে করে না তাঁর। 'মিষ্টি' (ঐন্দ্রিলার ডাকনাম) যেন ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে।
বিহঙ্গী বিশ্বাস
সাধ করে মায়ের কাছে আবদার করেছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। আবদার করেছিলেন একটা জিনিসের। মেয়ে চলে যাবে বুঝতেই পারেননি শিখা শর্মা। আবদার পূর্ণ হয়নি। কিন্তু মৃত্যুর দিন কয়েক আগে করা মেয়ের ওই আবদার, ওই ইচ্ছে আজও যেন কানে বাজে তাঁর। এক মাস হয়ে গিয়েছে ঐন্দ্রিলা নেই। নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ক্যান্সার-আক্রান্ত ঐন্দ্রিলার। কলকাতা ছেড়ে মা শিখাদেবী চলে এসেছেন বহরমপুরে। কলকাতার ফ্ল্যাটটা তালাবন্ধ। সেখানে যেতে ইচ্ছে করে না তাঁর। ‘মিষ্টি’ (ঐন্দ্রিলার ডাকনাম) যেন ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে।
আজ, ২০ ডিসেম্বর, TV9 বাংলায় ঐন্দ্রিলার মায়ের বয়ানে রইল কিছু কথা…
“গোপাল ভালবাসত মিষ্টি। কোলে নিয়ে থাকত সব সময়। পুজো-আচ্চা বেজায় পছন্দ ছিল, জানেন… ওই জন্যই ভগবানও বোধহয় ওকে বেশি ভালবেসে ফেলেছিলেন। বহরমপুরে চলে এসেছি আমি আর ওর বাবা। কী করে থাকব আমি? এই বাড়ির প্রতি কোণায় মিষ্টি। ছোটবেলায় ওকে মজা করে বলতাম, ‘ভুল করে তোর নাম মিষ্টি দিয়ে ফেলেছি। উচিৎ ছিল দুষ্টু দেওয়া’। ও খিলখিল করে হেসে বলত, ‘দিয়ে যখন ফেলেছ, আর তো কিচ্ছু করা যাবে না।’ আমার দুই মেয়ে ছিল দুই মেরুর। বড়টা পড়াশোনায় তুখোড় আর ছোটটা এই সব… গান-বাজনায়। স্কুলে সবাই বলত, ‘দিদি আমার মেয়ে যেন আপনার মিষ্টির মতো হয়’। আমি প্রতিবাদ করে বলতাম, ‘একদম না, ও যে কী দুষ্টু’। ওর বাবা বলত, ‘ভালই তো আমাদের দু’টো দু’রকম।’ এ বাড়িটায় আজকাল আর থাকতে পারি না। নার্সিংহোম যাই। ওখানেও বেশিক্ষণ বসতে পারি না। কী নিয়ে থাকব আমি? মিতুল (ঐন্দ্রিলার দিদি) বাইরে, ওদের বাবা চেম্বারে আর আমি…।
একজন সন্তানহারা মায়ের থেকে অভিশপ্ত কী আর কিছু হতে পারে? ওর বাচ্চাটা মানে বোজ়ো খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। নেতিয়ে গিয়েছিল একেবারে। আসলে মা’কে ছাড়া থাকেনি তো। ঐন্দ্রিলার জামা-কাপড় দিয়েছিলাম ওকে, তখন কিছুটা শান্ত হল। এই এক মাসে আমাদের হাসিখুশি পরিবারটাই যেন কেমন ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। মিষ্টিকে স্বপ্নে দেখি মাঝেমধ্যে, ফেসবুকে ওকে নিয়ে যা-আ-আ-আ পাই, রেখে দিই। অনেকেই বলছেন, বেরতে হবে এখান থেকে, বেরিয়ে যাব কোথায় বলতে পারেন? ভগবান কী করে করল আমার সঙ্গে এটা? খুব বাঁচতে ভালবাসত মেয়েটা। স্বপ্ন দেখেছিল। সব্যসাচীটাও ভাল নেই। কেউ ভাল নেই আমরা। কলকাতার ফ্ল্যাটে না চাইলেও ফিরতে হবে আমায়। মিষ্টির এক ইচ্ছে বাকি রয়ে গিয়েছে। চলে যাওয়ার কিছু দিন আগে হঠাৎ একদিন ফোন করে বলল, “মা অনেক শাড়ি হয়ে গিয়েছে। একটা ওয়ার্ডড্রোব লাগবে। তুমি এসে করে দিও। আর শাড়িও গুছিয়ে দিও।” খুব টিপটপ ছিল তো। আমি কথাও দিয়েছিলাম। কথা রাখতে পারিনি সে সময়। এবার রাখব। বাঁচতে চেয়েছিল মেয়েটা, পারল না। মা হয়ে ওয়ার্ডড্রোবটা অন্তত ওর জন্য করিয়ে দিই।”