Monsoon Health Care: বর্ষায় কোভিড ও ডেঙ্গির জোড়া হানার সম্ভাবনা! খুদে থেকে বৃদ্ধ, সুস্থ থাকতে কী কী করণীয়, জানাচ্ছেন বিশিষ্ট চিকিত্সক
COVID 19 and Dengue: সংক্রমণ রোধের দুটি উপায় রয়েছে। একটি হল সামাজিক প্রতিরোধ ও অপরটি হল ব্যক্তিগত প্রতিরোধ। সামাজিক প্রতিরোধের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে প্রশাসনকে।
দেশে হু হু করে বাড়ছে কোভিড (COVID 19) আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যেই বর্ষার (Monsoon Season) আগমন যে আর দেরি নেই, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন আবহবিদরা। বর্ষা আসা মানেই ভাইরাল জ্বরের বাড়বাড়ন্ত শুরু হওয়া। ফলে কোভিড ও ডেঙ্গি (Dengue), ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বরে মতন লক্ষণগুলিও বৃদ্ধি পাবে। তবে আশার আলো হল, করোনার চতুর্থ তরঙ্গে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। হাসপাতালে ভরতি হওয়ার সংখ্যাও কম। ফলে আগের মত ভয়াবহ আকার যে নেবে না তা নিশ্চিত চিকিত্সকমন্ডলী। বর্ষার মরসুমে কোভিড ও ভাইরাল জ্বরের লক্ষণগুলি (Symptoms) চিনে নেওয়ারও প্রয়োজন। সেই বুঝে তার চিকিত্সাও শুরু করা সহজ হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষার মরসুমে সব সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। তবে বিশেষ করে যত্ন নিতে হবে বাড়ির খুদে ও প্রবীণদের। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এই দুই বয়সিদের মধ্য়ে ফের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বর্ষার মরসুমে ভাইরাল জ্বর, কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ যে ফের বাড়বে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই বর্ষা শুরু হওয়ার আগে থেকেই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ও সুরক্ষিত করতে কী কী করণীয়, কেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার,সমস্ত কিছু নিয়ে টিভি৯ বাংলা ডিজিটালের সঙ্গে আলোচনা করলেন শহরের বিশিষ্ট চিকিত্সক সৌম্য গায়েন।
১. দুয়ারে বর্ষা। দেশে বাড়ছে কোভিডের সংক্রমণ। এছাড়া ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, ডায়ারিয়ার প্রকোপ তো রয়েছেই। এই পরিস্থিতিতে মানুষের কি বুস্টার ডোজের পাশাপাশি ফ্লু ভ্যাকসিনেশন নেওয়া আবশ্যিক?
-বুস্টার ডোজ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ঠিকই। তার থেকে বড় কথা হল, ভাইরাসের জটিলতা যাতে না বাড়ে, তার জন্য বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এটাই সারা বিশ্ব চেয়েছিল। সেটাই হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাস আমাদের মধ্যেই থাকবে। কিন্তু তার জটিলতার শিকার যাতে না হই, তার প্রমাণ আজ সকলের সামনে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোভিডের সংখ্যা যে বাড়ছে বলা হচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তার মধ্যে মৃতের সংখ্যা ও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনা বেশ কম। এটাই আমরা সকলে চেয়েছিলাম। সাধারণ জ্বর-সর্দিকাশির মতই কোভিডের আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে, করোনার সময় সকলেই যেহেতু মাস্ক পরা অভ্যাস করে ফেলেছিলেন, সেখানে সাধারণ জ্বর-জ্বালাও কম প্রভাব ফেলতে পেরেছে।
আর ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া শুধু কোভিডকালে নয়, সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য। সাধারণত ১৫ বছরের নীচে থাকা শিশু ও ৬৫ বছরের উপরে যাঁদের বয়স, তাঁরা ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। মাথায় রাখতে হবে, কোনও ভ্যাকসিনই কিন্তু ফ্লু প্রতিরোধ করে না, বরং ফ্লুয়ের জটিলতা যাতে না বাড়ে, তার জন্য এই টিকাকরণের প্রয়োজন।
২. কী-কী উপসর্গ দেখে বুঝবেন আপনি কোভিড না ডেঙ্গিতে আক্রান্ত?
কোভিড হলে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, ঝিমুনি, প্রচণ্ড দুর্বলতা দেখা দেবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল নাকের গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা চলে যাওয়া। করোনা চেনার আরও একটি উপসর্গ রয়েছে। নাগাড়ে শুকনো কাশি, গলা শুকিয়ে যাওয়া, গলায় অস্বস্তি, গলায় সংক্রমণের মত জ্বালাভাব। এই উপসর্গগুলি সাধারণ ভাইরাল বা ডেঙ্গি-ম্য়ালেরিয়ার সঙ্গে যায় না। অন্যদিকে ডেঙ্গির প্রাথমিক উপসর্গ হল প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, খাদ্যনালীতে সংক্রমণ। ডেঙ্গিরও উপসর্গ সময়কালে অনেক বদলে গিয়েছে। তবে সব সংক্রমণের একটি সাধারণ উপসর্গ হল, তীব্র জ্বর। তাহলে জ্বর হলে বুঝব কীকরে কোভিড না ডেঙ্গিতে আক্রান্ত?
দুটিকে পার্থক্য করার জন্য সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় হল নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া। কোভিডের জন্য আরটিপিসিআর টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক। আর ডেঙ্গি হয়েছে কিনা বুঝতে রক্তপরীক্ষায় পেল্টলেটের পরিমাণটা যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। তবে দুটি আলাদা করে উপসর্গ দেখে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কোভিড বা ডেঙ্গির লক্ষণগুলি শরীরের মধ্যে দেখা দিলে স্থানীয় বা হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।
৩. বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই সচেতন হতে হবে কাদের? সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কী কী করণীয়?
– সংক্রমণ রোধের দুটি উপায় রয়েছে। একটি হল সামাজিক প্রতিরোধ ও অপরটি হল ব্যক্তিগত প্রতিরোধ। সামাজিক প্রতিরোধের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে প্রশাসনকে। অন্যদিকে ব্যক্তিগত প্রতিরোধের কথা যদি ধরা হয়. তাহলে ডেঙ্গির প্রকোপ থেকে বাঁচতে অবশ্যই রাতে মশারি টাঙ্গিয়ে নিতে হবে, মশা প্রতিরোধকারী স্প্রে বা মলম ব্যবহার করতে পারেন, বাড়িতে ও বাড়ি চত্বরে জল একেবারেই জমতে না দেওয়া, মশাবাহী এই রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা দেখা উচিত।
অন্যদিকে কোভিড প্রতিরোধ করার নির্দেশিকা প্রায় সকলেরই জানা। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, মাস্ক পরলে সেটি সঠিকভাবে পরতে হবে। এন৯৫ মাস্ক পরলে কোভিড থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া কোভিড থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায়, কোনও জমায়েত এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
৪. করোনা যাদের একবার হয়ে গিয়েছে, এই বর্ষায় ফের করোনা হওয়ার কতটা চান্স রয়েছে?
– যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের শরীরের মধ্যে মাত্র ৬ মাস পর্যন্ত সেই ডোজটি কার্যকর থাকে। ফলে শরীরে ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা কমে এলে ফের একবার করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন ওই ব্যক্তি। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবেন যারা আগে একবার কোভিড পজিটিভ হিসেবে ধরা পরেছিলেন, কিন্তু তারপরেও ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তারা ফের একবার করোনায় অসুস্থ হতে পারেন। ফলে এই শ্রেনির মানুষদের এই সময়টা বেশ সচেতনতার সঙ্গে নিজের দেখভাল করতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব একটু আলাদা। কারণ করোনা সাধারণত শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে কোনও জটিলতা তৈরি করে না। ফলে বয়স্কদের অসুস্থতার হার বেশি হলেও শিশুদের হার অনেক কম। সারা বিশ্বে খুব কম সংখ্যক শিশু কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে শিশুদের জন্য় নতুন করে তেমন আতঙ্কিত হওয়ার নেই।