Not A Morning Person: সকাল ১০টার আগে ঘুম ভাঙে না! কেন এমনটা হয়, তার বৈজ্ঞানিক কারণ জানলে চমকে যাবেন!

অনেকেই রাত জাগতে বেশ স্বচ্ছন্দ্য! তাঁরা ঘুম থেকেও ওঠেন দেরিতে। অন্যদিকে কোনও কোনও ব্যক্তি খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠেন আর রাতে শুয়েও পড়েন তাড়াতাড়ি! এমন আলাদা অভ্যেসের পিছনে রয়েছে আশ্চর্য এক কারণ! এমন অভ্যেসের পরিবর্তন কি সম্ভব? বিজ্ঞান কী বলছে?

Not A Morning Person: সকাল ১০টার আগে ঘুম ভাঙে না! কেন এমনটা হয়, তার বৈজ্ঞানিক কারণ জানলে চমকে যাবেন!
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 04, 2022 | 7:00 AM

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা সকাল ৯টায় উঠবেন বলে সকাল ৭টা থেকে অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন! প্রতি দশ মিনিট অন্তর অ্যালার্ম বাজে অথচ তাঁদের ঘুম ভাঙানো অসম্ভব হয়ে যায়! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের ব্যক্তিকে আমরা অলস হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। অথচ জানলে অবাক হবেন, সকালে চোখ খুলতে না পারার পিছনে দায়ী থাকতে পারে ‘ডিলেইড স্লিপ ফেজ’। অদ্ভুত এই সমস্যায় শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িটি আসলে বর্হিবিশ্বের সঙ্গে সুসংগত অবস্থায় আসতে পারে না! ব্যাপারটা এইরকম নয় যে ওই ব্যক্তির বাকিদের তুলনায় বেশি ঘুমের দরকার। বিষয়টা এইরকম যে ওই ব্যক্তির শরীরে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার স্লিপ সাইকেল শুরুই হয় রাত ৩টে থেকে! খুব স্বাভাবিকভাবেই, যে ব্যক্তি রাত তিনটেয় ঘুমোবেন তিনি ১০-১১ টার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না।

কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিষয়টা হয়তো তেমন গুরুতর নয়। কিন্তু বহু লোক আছেন যাঁদের অফিসে যেতে হয়। তাঁদের কাছে বিষয়টা আতঙ্কের বললেও কম বলা হবে। বহু ব্যক্তিকে এই কারণে জীবিকাও বদলাতে হয়েছে!

বিজ্ঞানীরা বলছেন আমাদের প্রত্যেকরই ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আমরা ওই নির্দিষ্ট সময় নিয়েই জন্মেছি। এই কারণেই কোনও কোনও ব্যক্তি ভোর বেলা ওঠেন। আবার কোনও কোনও ব্যক্তি গভীর রাত অবধি জাগেন। আবার এই দুই ধরনের ব্যক্তিদের মাঝেও কিছু লোক থাকেন। ঘুমের এই আলাদা আলাদা ধরনগুলিকে বলা ‘ক্রোনোটাইপ’।

গবেষকরা এহেন আলাদা আলাদা ঘুমের বৈশিষ্ট্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেছেন শরীরের অন্দরের ঘড়ির পরিবর্তনের পিছনে দায়ী থাকে জিনের প্রভাব! ফলে অন্দরের ঘড়ির পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। একমাত্র বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছনোর পরে কিছু পরিবর্তন হতে পারে।

মুশকিল হল, শরীরের অন্দরের ঘড়িটির পরিবর্তন করতে গেলে বরং শরীরের ভালো হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শরীরের অন্দরের ঘড়িটিকে বর্হিবিশ্বের ঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে দিতে চাইলে হার্ট ডিজিজ, স্থলত্ব, এবং ডিপ্রেশনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শরীরই যখন ঘড়ি

বেশিরভাগ মানুষ, ৩০ থেকে ৫০ শতাংশই রয়েছেন ক্রোনোটাইপ বেল কার্ভ-এর মাঝখানে। অর্থাৎ তাঁরা রাত ১১টা নাগাদ ঘুমান ও সকাল ৭টা নাগাদ উঠে পড়েন। বাকি ৪০ শতাংশ-এর মধ্যে কিছু লোক সকালে ওঠেন কিংবা বেশি রাতে ঘুমাতে যান। তবে ০.২ শতাংশ বা প্রতি ৫০০ জনে ১ জন এমন মানুষ থাকেন যাঁদের অ্যাডভান্সড স্লিপ ফেজ সিনড্রোম রয়েছে। এই ধরনের ব্যক্তিরা রাত ৮ টা নাগাদ শুয়ে পড়েন!

কেন হয় এমন

আমাদের দেহের ঘড়ি চলে সার্কেডিয়ান সিস্টেমে। অর্থাৎ আমাদের শরীর হল একটা অর্কেস্ট্রা। অর্কেস্ট্রায় যেমন ভিন্ন ভিন্ন বাদক থাকেন, তেমনই আমাদের রয়েছে আলাদা আলাদা অঙ্গ। আর থাকেন পরিচালক বা কন্ডাকটর। তিনি যেমন ছন্দে হাত নাড়েন তেমনই বাকি বাদকরা বাদ্য বাজান। তেমনই আমাদের শরীরের একটি প্রধান ঘড়ি রয়েছে। বাকি অঙ্গের কোষেও রয়েছে একাধিক ঘড়ি। প্রধান ঘড়িটি যে ছন্দেই চলে, বাকি অঙ্গের ঘড়িগুলিও তার ছন্দে তাল মেলায়।

মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরোট্রান্সমিটার, হর্মোন, কোষে কোষের রাসায়নিকও ওই ছন্দে ক্ষরিত হয় বা পরিবাহিত হয়। এভাবেই শরীরের সমস্ত কাজ চলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সকালেই শরীরে সবচাইতে বেশি ইনসুলিন ক্ষরণ হয়। অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট খাওয়ার আগেই তা বিপাকের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়।

ফলে যে ব্যক্তি খুব সকালে ওঠেন, তাঁর শরীরে ইনসুলিন ক্ষরণের নির্দিষ্ট সময় তৈরি হয়ে যায়। আবার যে ব্যক্তি দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন তাঁরও শরীরে ইনসুলিন ক্ষরণের সময় স্থির হয়ে থাকে। এছাড়া রাতে যাঁরা দেরিতে ঘুমান তাঁদের শরীরের অন্দরের তাপমাত্রা গড় মানুষের তুলনায় অনেক রাতের দিকে কমে। অর্থাৎ এই ধরনের মানুষের সার্কেডিয়ান ছন্দ ঘুমের জন্য জরুরি হর্মোনগুলি অনেক রাতের দিকে ক্ষরণ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাত দশটার দিকে বেশিরভাগ মানুষের ঘুম ঘুম বোধ হতে থাকে। অন্যদিকে রাতের পেঁচাদের ঘুম ঘুম ভাব আসে আরও ঘণ্টা দুয়েক পরে।

জিন

দেহের মাস্টার ক্লক থাকে ব্রেনের সুপ্রাকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াসে। চড়া আলো এই ঘড়িকে প্রভাবিত করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সূর্যই এই ভূমিকা নিয়ে থাকে। তবে রাতের পেঁচাদের ক্ষেত্রে মুখে আলো পড়লেও সার্কেডিয়ান ঘড়ি সঠিকভাবে চালু হতে দেরি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ব্রেনের সুপ্রাকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াসে প্রধান ঘড়িটি থাকলেও সেই শেষ কথা বলে না। দেহের প্রতিটি কোষের রয়েছে ‘জিন ঘড়ি’। ওই জিন ঘড়িগুলির পাঠানো বার্তার উপরেই মাস্টারঘড়ি নিজের ছন্দ স্থির করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই ঘড়িগুলির ছোট্ট ছোট্ট পরিবর্তনগুলির উপরেই নির্ভর করে কোন ব্যক্তি ভোরের পাখি হবেন আর কোন ব্যক্তি রাতে পেঁচা। যেহেতু বিষয়টি জিনগত, তাই বংশগতিতেও একই ধারা বয়ে চলে।

বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, রাতের পেঁচাদের বডি ক্লক বেশি সময় ধরে চালু থাকে। এমনকী তাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রধান ঘড়িটি ২৪.৫ থেকে ২৪.৭ ঘণ্টা অবধি চালু থাকতে পারে। যত বেশি সময় ঘড়ি চালু থাকবে তত রাত করে ঘুম আসবে!

এছাড়া ঘুম আসার ক্ষেত্রে আলোর একটা বড় ভূমিকা আছে। আগেকার দিনে সূর্য ডুবলে লোকে জানত কাজ বন্ধ করে খেয়েদেয়ে ঘুমাতে হবে। এখন কম্পিউটার, মোবাইল চলে আসায় চড়া আলোর প্রকোপে ঘুমের সাইকেল আরও পিছোচ্ছে!

মুশকিল হল, কোনও ব্যক্তির ঘুমের ক্রোনোটাইম একবার স্থির হয়ে গেলে তা পরিবর্থন করা

কী করবেন?

বাইরের জগত তো শরীরের ঘড়ির সঙ্গে মানিয়ে চলবে না। তাহলে তো আর কাজই করা যাবে না। তাহলে উপায় কী? চিকিৎসকরা বলছেন আলো আর মেলাটোনিন দিয়ে চিকিৎসা চলতে পারে। সকালে প্রতিদিন চোখে সূর্যের আলো পড়া বডি ক্লকের পরিবর্তন ঘটাতে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে। এমন জায়গায় শুয়ে পড়ুন যেখানে সকাল হলে মুখে রোদ পড়ে! চড়া রোদ জাগতে যেমন সাহায্য করে তেমনই সঠিকভাবে মেলাটোনিন হর্মোনের ক্ষরণেও সাহায্য করে। ঘুম আসার ক্ষেত্রে মেলাটোনিন হর্মোন অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শমতো রাতে মেলাটোনিন হর্মোনের ক্যাপসুল খেলেও দ্রুত ঘুম আসতে পারে।