ঋতুস্রাবের সময় তীব্র পেটে ব্যথা? কী করবেন আর কী করবেন না, পরামর্শ দিলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রী থেকে অফিসকর্মী মহিলা, অনেককে এই সময়টায় ছুটিও নিয়ে নিতে হয়। কীভাবে মিলবে রেহাই? TV9 বাংলা কথা বলল বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পূরবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
শিশু থেকে কিশোরী হওয়ার সময় নারীদেহে আসে পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনকে বহন করে ঋতুস্রাব, ইংরেজিতে যাকে বলে পিরিয়ড বা মেন্সট্রুয়েশন। ঋতুস্রাব চলাকালীন মাসের কয়েকদিন মহিলাদের শরীর হয়ে ওঠে অনেক বেশি স্পর্শকাতর। কারও সমস্যা হয় না। কারও কাছে সময়টা ভয়ানক বিভীষিকার মতো। পেটে তীব্র ব্যথার জেরে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেন না কেউ-কেউ। এর কারণ একাধিক হতে পারে। চিকিৎসার ভাষায় এই যন্ত্রণার নাম ‘ডিসমেনোরিয়া’। কারও প্রথম থেকেই ব্যথার সমস্যা। কারও নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে শুরু হয় পিরিয়ড সংক্রান্ত জটিলতা। ফলস্বরূপ দৈনন্দিন রুটিনে আসে পরিবর্তন। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী থেকে অফিসকর্মী মহিলা, অনেককে এই সময়টায় ছুটিও নিয়ে নিতে হয়। কীভাবে মিলবে রেহাই? TV9 বাংলা কথা বলল বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পূরবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
ঋতুস্রাবে পেটে ব্যথা হওয়া একটা কমন সমস্যা। একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
ঋতুস্রাবের সময় ব্যথার একাধিক কারণ আছে। যে কোনও একটি নির্দিষ্ট কারণ নেই। বিভিন্ন বয়সের মহিলারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। ১২ বছরের মেয়েদের একরকম সমস্যা হয়। ১৬ বছরের মেয়েদের একরকম। আবার ২২ বছরের ক্ষেত্রে আর একরকম। কারও আবার লিভারের সমস্যা থাকে। কারও প্রোল্যাক্টিন গণ্ডগোল হয়। ঠিক কী কারণে সমস্যা, আগে জানতে হবে। তারপর সেটা থেকে বেরতে হবে। বয়স দেখে চিকিৎসা করাটাই নিয়ম। ৯ বছর বয়সেও মেয়েদের ঋতুস্রাব হতে পারে। তাঁদেরও পিরিয়ড পেইন হতে পারে।
ব্যথার ওষুধ কতখানি লাভদায়ী?
ব্যথার ওষুধ অনেক আছে। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ আছে। অ্যান্ট-ইনফ্লেমেটারি ওষুধও আছে। কিন্তু ব্যথার ওষুধ খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভালো। বেশি পরিমাণে ব্যথার ওষুধ খেলে পিরিয়ড কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তখন পেট ব্যথার চিকিৎসাও ঠিক মতো হয় না। আমরা সেই কারণে ব্যথার ওষুধ খেতে পরামর্শ দিই না। আমি নিজে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে ব্যথার ওধুষ খেতে বলার পক্ষে নই। তবুও কারও এত ব্যথা হয়, যে ১-২টো ব্যথার ওষুধ দিতেই হয়।
আর কী-কী করলে সমস্যা মিটতে পারে?
ব্যথা নিরাময়ের জন্য সারা মাস ধরে ব্যায়াম করলে উপকার মিলবো। পিরিয়ড চলাকালীন প্রথম দু’দিন কম এক্সারসাইজ় করতে হবে। হাতের ব্যায়াম, লোয়ার পোর্শন এক্সারসাইজ় করলে ফল মিলতে পারে। ডায়েট মেনে খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে খাবারের তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকতে হবে, কার্বোহাইড্রেট কম। ডায়েটে জলীয় খাবার থাকা দরকার। ভাজাভুজি, তেল-মশলাযুক্ত খাবার, বাইরের জাঙ্ক কিংবা স্পাইসি খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অনেক সময় ফ্যামিলি হিস্ট্রি থেকেও হতে পারে পিরিয়ডে ব্যথার সমস্যা। হটওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করলে স্বস্তি মিলতে পারে।
ধূমপানের জেরে মেন্সট্রুয়েশনের সময় পেটে ব্যথা হতে পারে?
স্মোক করলে পেটে ব্যথা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, আগে পেটে ব্যথা ছিল না, কিন্তু ধূমপান করার জন্য ব্যথার সমস্যা শুরু হয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ধূমপান করা খুব ক্ষতিকারক। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার পরামর্শ, ধূমপান বন্ধ করলে অনেক সমস্যাই মিটবে।