‘কর্পোরেটের কবজায় আমেরিকায় আত্মহত্যা করেছে ৪৫ শতাংশ কৃষক, ভারতের কী হবে?’
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যসভায় সাংসদ তথা কপিল সিব্বলের সওয়াল, সরকার যদি কৃষকদের ভালই চায় তাহলে কেন ন্যূনতম সহকারী মূল্যকে আইনের অন্তর্ভুক্ত করছে না!
নয়া দিল্লি: কৃষক আন্দোলন নিয়ে সারা দেশ উত্তাল। সরকারের দাবি, নয়া কৃষি আইন চালু হলে লাভ হবে কৃষকদেরই। কিন্তু একাধিক বৈঠকের পরও কৃষক নেতারা এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি প্রত্যাহার করতে হবে তিনটি কৃষি আইন। বিরোধীরাও আন্দোলনরত কৃষকদের সুরেই কথা বলে কৃষি আইন বাতিলের পক্ষে সওয়াল করেছেন। ঘটনায় আপাত ইতি টেনে কৃষি আইন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো দেড় বছর কৃষি আইন স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তরজা থামেনি। এ বার সেই কৃষি আইনকেই হাতিয়ার করে মোদী সরকারকে একহাত নিলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইনজীবী কপিল সিব্বল (Kapil Sibbal)।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কপিল সিব্বলের সওয়াল, সরকার যদি কৃষকদের ভালই চায় তাহলে কেন ন্যূনতম সহকারী মূল্যকে আইনের অন্তর্ভুক্ত করছে না! পাশপাশি সরকার যে নয়া পদ্ধতির কথা বলছে, সেই পদ্ধতির হাল-হকিকত দেখিয়ে পাল্টা প্রশ্নচিহ্ন দাঁড় করিয়েছেন সিব্বল। তাঁর দাবি, এই কাঠামোয় কৃষি ব্যবস্থা চলে আমেরিকা ও ইউরোপে। আমেরিকার তথ্য তুলে ধরে কার্যত কেন্দ্রের কৃষি আইনের এ দেশে প্রাসঙ্গিকতার বিপক্ষে সওয়াল করেন তিনি।
রাজ্যসভায় সিব্বল বলেন, “আমেরিকায় মাত্র ১.৫ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। বাকি সব কর্পোরেটদের হাতে। তাতেই ২০২০ তে সে দেশের ৪৫ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন।” সিব্বল সওয়াল করেন, যদি আমেরিকাতে সামান্য সংখ্যক কৃষকদেরই এই অবস্থা হয়, তাহলে ভারতের মতো দেশে যেখানে একটা বড় অংশের মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত, সেখানে এই আইন এলে কী চরম পরিণতি হতে পারে!
আমেরিকায় ছোট জমি নেই বললেই চলে। যা ছিল তাও এই কর্পোরেট পরিকাঠামোয় হারিয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতের যদি এই আইন আসে, তাহলে কোটি কোটি চাষির কী হবে? এই প্রশ্নটাই তোলেন কপিল সিব্বল। কেন্দ্র স্রেফ উদ্যোগপতিদের হয়ে কাজ করে, কৃষকদের জন্য কেন্দ্র ভাবে না। বিরোধীরা বারবার এই অভিযোগ করেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এ বার সিব্বলের মুখেও একই কথা। আমেরিকার মতো উন্নত দেশের কৃষক সহায়তার আর্থিক অনুদানের মূল্য বুঝিয়ে সিব্বলের কটাক্ষ, “আমেরিকা বছরে কৃষককে ৬২ হাজার ডলার অনুদান দেয়, আর আপনারা এমএসপিটাও নয়! উদ্যোগপতিদের ম্যাক্সিমাম দেবেন আর কৃষকদের মিনিমামও নয়।”
সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে কপিল যখন কেন্দ্রকে একহাত নিলেন, তারপরই নিম্নকক্ষে প্রায় সব অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাল্টা কৃষক আন্দোলনে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানোর দাবি তুললেন মোদী। এমএসপি নিয়ে কপিল সিব্বলের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর মিললল মোদীর ভাষণে। লোকসভায় মোদী বলেন, “এই আইন কার্যকর হওয়ার পরই এমএসপির বৃদ্ধি হয়েছে।”
বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অনুৎপাদক ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাড ব্যাঙ্কের ঘোষণা করেছিলেন। এরপর রাজ্যসভায় ব্যাড ব্যাঙ্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানিয়েছিলেন, ব্যাঙ্কিংয়ের ল্যান্ডিংয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই সম্পত্তি পুনর্গঠন সংস্থা বানানো হয়েছে। এ দিন রাজ্যসভায় ব্যাড ব্যাঙ্ক নিয়ে ফের কেন্দ্রকে তোপ দাগেন কপিল সিব্বল। তাঁর সাফ কথা, কেন বাজেটে ব্যাড ব্যাঙ্কের সমস্ত কিছু বর্ণনা করা নেই! যদি বাজেটের কাগজে কোনও সম্পূর্ণ তথ্য না থাকে, তাহলে আলোচনা হবে কীভাবে, এই প্রশ্নও ছুড়ে দেন কপিল সিব্বল। সরকার এনপিএ আদায়ের জন্য ব্যাড ব্যাঙ্ক তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে একটি অনুৎপাদক ঋণ আদায় করে তার ১৫ শতাংশ নগদ সরকারকে দেবে। তারপর এনপিএ বিক্রির মাধ্যমে সরকারের ঘরে টাকা দেবে সম্পত্তি পুনর্গঠন সংস্থা।
আরও পড়ুন: কৃষি আইন কার্যকর হওয়ার পরও চালু রয়েছে মান্ডি, এমএসপি ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী
কিন্তু কীভাবে বিক্রি হবে এই এনপিএ, সেই সম্পর্কে কেন কোনও তথ্য নেই, ‘তাহলে কি প্রাইভেট নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে এনপিএ বিক্রি হবে!’ এভাবেই কড়া ভাষায় কেন্দ্রকে বিঁধেছেন কপিল সিব্বল। বাজেটে ঘোষণা নিয়েও কেন্দ্রকে বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। রাজ্যসভার সাংসদ বলেন, “আগে কংগ্রেস যখন বাজেট পেশ করত, তখন ভোটব্যাঙ্কের অভিযোগ উঠত। আর এখন, বাজেটে অসমের জন্য ৩৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, পশ্চিমবঙ্গে ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা।” কেন বিধানসভা নির্বাচনমুখী রাজ্যের জন্য বড় ঘোষণা? এই প্রশ্ন তুলেই কপিলের কেন্দ্রের প্রতি সিব্বলের তোপ, “আপনাদের বাজেটে ভোটব্যাঙ্ক পলিটিকস আর অফ বাজেট নোটব্যাঙ্ক পলিটিকস।”